রিকভারি গেট-টুগেদার মাদক নির্ভরশীলতা প্রতিরোধ ও চিকিৎসাযোগ্য রোগ

মাদক নির্ভরশীলতা একটি দীর্ঘস্থায়ী, রিল্যাপিং ডিসঅর্ডার। মাদক নির্ভরশীলতার ফলে বারবার মাদক গ্রহণের আগ্রহ তৈরি হয় এবং এর ক্ষতিকারক পরিণতি জানা সত্ত্বেও মাদকের ক্রমাগত ব্যবহার মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনে যেটা শারীরিক ও মানসিক ভারসম্যহীনতা তৈরি করে। তবে মাদক ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট ব্যাধিগুলি প্রতিরোধ এবং চিকিৎসাযোগ্য। মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তির প্রতি পরিবার ও সামাজের নেতিবাচক মনোভাব পোষণ পুনর্বাসন ও চিকিৎসায় প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
শনিবার (২৬ মার্চ) গাজীপুরে আহ্ছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র আয়োজিত মাদক থেকে সুস্থতা প্রাপ্তদের রিকভারি গেট-টুগেদার অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরো বলেন, হৃদরোগ বা হাঁপানির মতো অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের মত মাদক নির্ভরশীলতা চিকিৎসা সাধারণত নিরাময় হয় না। তবে মাদক নির্ভরশীলতা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবন-যাপন করা যায়। এই ধরনের রিকভারি গেট টুগেদারের মাধ্যমে মাদক নির্ভরশীল মানুষের প্রতি সামাজিক নেতিবাচক মনোভাব কমানো সম্ভব।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে ৪০০ মাদক থেকে সুস্থ্য হওয়া ব্যক্তি, পরিবারের সদস্য ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মীরা এই গেট টুগেদারে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হল সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও চিকিৎসার বাঁধা অতিক্রম করে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছেন এমন ব্যক্তিদের উৎসাহ প্রদান করা।
দিনব্যাপী এই কর্মসূচির মধ্যে ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, রিকভারি রান, রিকভারি শেয়ারিং, ফ্যামিলি শেয়ারিং, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, র‌্যাফেল ড্র, রিকভারি কাউন্টডাউন এবং উপহার বিতরণ ইত্যাদি। অনুষ্ঠানে নিবন্ধিত সকল অংশগ্রহণকারীরা উপহার হিসেবে মাদকবিরোধীতার উপরে লেখা প্রকাশিত স্যুভেনির, মগ, টি-শার্ট, মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার পান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) মোঃ জাফরুল্লাহ কাজল। এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর ২২ নং ওয়াডের কাউন্সেলর মোশারফ্ফ হোসেন, মনোচিকিৎসক ডা: আখতারুজ্জামান সেলিম, যশোর সেন্টারের ম্যানেজার আমিরুজ্জআমান লিটন, গাজিপুর সেন্টারের ম্যানেজার মিজানুর রহমান, রিকভারী ও রিকভারী পরিবারের সদস্যগণ।
মোঃ জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, মাদক নির্ভরশীলতার কারনে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। মাদক নির্ভরশীলতা চিকিৎসায় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে নীতিনির্ধারকসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করা উচিত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ। তিনি বলেন যে চিকিৎসা পরবর্তি সুস্থতা হল পরিবর্তনের একটি ধাপ ও প্রক্রিয়ামাত্র। মাদক মুক্ত থেকে সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষা করা এবং একটি উৎপাদনমূখী জীবন যাপন করা রিকভারীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্র মাদক থেকে সুস্থ থাকার প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে। তিনি এই কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার জন্য অংশগ্রহণকারীদের এবং পৃষ্ঠপোষকদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)