বাংলাদেশকে নিয়ে আর কেউ খেলতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্কঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। কাজেই এ দেশ নিয়ে কিংবা এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ কোন খেলা খেলতে পারবে না। বাংলাদেশ যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, ইনশাল্লাহ সেভাবেই এগিয়ে যাবে।

শনিবার রাতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ৪ দিনব্যাপী ‘জয় বাংলার জয়োৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে  প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মন্ত্রিসভা কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ রূপকল্প ২০২১ নির্ধারণ করে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ে তোলার যে ঘোষণা দিয়েছিল; সে অনুযায়ী আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু ও সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আজ শতভাগ বিদ্যুৎ দেওয়ার মাধ্যমে সকল ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালানোর মাধ্যমে আমরা আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ এর বাংলাদেশ কেমন হবে সেই পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনাও আমরা প্রণয়ন করে দিয়ে গেছি। পাশাপাশি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করেও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। একশ’ বছরের জন্য ডেল্টা প্ল্যান করে তার কিছু কিছু আমরা বাস্তবায়ন করে দিয়ে যাচ্ছি। যেন এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম সুন্দর এবং উন্নত জীবন পেতে পারে।

তার সরকারের টানা মেয়াদে দারিদ্র্যের হার কমানোর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে একটি মানুষও আর ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবেনা। ইনশাল্লাহ, সেটা আমরা নিশ্চিত করবো। এ পথে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এভাবেই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবো।

তিনি বলেন, আমরা স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট করেছি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে যাচ্ছি। মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, যেন বাংলাদেশকে আর কখনো কেউ অবহেলা করতে না পারে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের একটাই উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব-দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। শিক্ষায়-দীক্ষায়, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তি জ্ঞানে- সবদিক থেকে যেন আমরা এগিয়ে থাকতে পারি ।

তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার ৯ মাসের মাথায় যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেটা অক্ষরে অক্ষরে মেনে তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করেছি এবং এগিয়ে যাচ্ছি।

দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা বারবার ভোট দিয়ে আমাদের তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আর সেজন্যই আজকে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করার সুযোগ পেয়েছি। ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সুযোগ পেয়েছি। যদিও করোনার কারণে আমাদের অনুষ্ঠান সীমিত আকারে করতে হয়েছে। আমরা উদযাপনকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিয়ে এসেছি।

জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আক্রমণ শুরু করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানাসহ ধানমন্ডির বাড়ি। জাতির পিতা তখনই পূর্বপরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাটা প্রচার করেছিলেন। তৎকালীন ইপিআর বর্তমান বিজিবি’র হেড কোয়ার্টার থেকে সুবেদার মেজর শওকত আলী তার ৪ জন সঙ্গীসহ জাতির পিতার এই ভাষণ সারাদেশে ছড়িয়ে দেন। বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে ২৫ মার্চ রাত এবং ২৬ মার্চ ভোর রাতের আগেই সারাদেশে এই বার্তাটা পৌঁছে যায়। ২৬ মার্চ এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তারা নিয়ে যায় পাকিস্তানে এবং বন্দি করে রাখে। রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দেয়। তাকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

তিনি বলেন, আজকে এই সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের পথ ধরেই আমরা এগিয়ে যাব এবং শতবর্ষ উদযাপন করবে আমাদের আগামী দিনের প্রজন্ম। তাদের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং আমাদের বর্তমানকে আগামী প্রজন্মের জন্য উৎসর্গ করে যাচ্ছি।

মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া, আয়োজক মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য সচিব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া। অনুষ্ঠানে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের ওপর একটি অডিও ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন পরিবেশিত হয়।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারের পদস্থ বেসামরিক এবং সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)