ব্লাস্টে আক্রান্ত ধান- দিশেহারা সাতক্ষীরার কৃষকরা

 

ফারুক সাগর(তালা প্রতিনিধি):

ব্লাস্ট নামক ছত্রাকে আক্রান্ত সাতক্ষীরার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তৃতীন ফসলের মাঠ ।টানা তৃতীয়বার ইরি -বোরো মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ ব্যাপকহারে দেখা দিয়েছে ।সাধারণত যে জমিতে এ রোগের প্রকোপ দেখা দেয় সে এলাকায় ৭ থেকে ১০দিনের মধ্যে তার চারপাশের জমিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ।স্বাভাবিকভাবে দিনে অতিরিক্ত গরম এবং রাতে ঠান্ডা পড়লে রোগ সহজে বিস্তার লাভ করে ।

সরেজমিনে দেখা যায় ধানের কচি পাতায় ফোঁটা ফোঁটা নীলাভ দাগ পড়েছে ।ধান গাছের আকার ছোট হয়ে গেছে এবং পাতার উপরের অংশ পুড়ে গেছে । পরবর্তীতে এর ফলে ধানের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে ।কোন কোন ক্ষেত্রে উৎপাদন শূন্যের কোঠায় নেমে যায়।যার কারণে এ অঞ্চলের একমাত্র ও প্রধান ফসল মারাত্মক ঝুঁকি মধ্যে পড়েছে।এর ফলে প্রান্তিক কৃষকের সোনালি স্পন মাঠে মারা যাচ্ছে ।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ব্রি সাতক্ষীরার মুখ্য বৈজ্ঞানিক ডা: তাহমেদ হোসেন আনসারি জানান দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে অস্বাভাবিক তারতম্যের কারণেই এ রোগ হতে পারে ।বিশেষ করে সকালে অতিরিক্ত কুয়াশা বা শিশির,গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পাত রোগের অন্যতম কারণ । তিনি আরও বলেন রোগটি মুলত বীজবাহী হলেও বীজের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়েছে না ,একই জমিতে বার বার ধান চাষ করার কারণে এ রোগটি বেশি দেখা দিয়েছে ।তিনি পরামর্শ দেন যে জমিতে এই রোগ দেখা দেয় সেই জমিতে পরিমিত মাত্রায় শীর্ষ বের হওয়ার আগ মুহূর্তে প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে ৮ গ্রাম ট্রপার/দিফা ৭৫ ডব্লিউপি অথবা ৬গ্রাম ন্যাটিভো ৭৫ ডব্লিউজি অথবা ট্রাইসাইকলাজল/স্ট্রাবিন গ্রুপের অনুমোদিত ছত্রাক নাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে ৫-৭ অন্তর শেষ বিকালে ২বার প্রয়োগ করতে হবে ।যেন রোগ আসেপাশে ছড়িয়ে পড়েতে না পারে এবং অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহারে নিষেধ করেন।তিনি আরো বলেন এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা শুরু করা হয়েছে ।

স্থানীয় কৃষক মনিরুল সরদার বলেন তিনি তিন বিঘা জমিতে এসিআই-২৮ ধান চাষ করেছেন ।এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে তার সব জমির ফসল ।এরই মধ্যে তিনি প্রায় ৯ হাজার টাকার বালাই নাশক ব্যবহার করেছেন।তারপরে এখন তার সংক্রমণ কমে গেছে ।কিন্তু ফলন আগের মত ভালো হবে না ।একদিকে বালাইনাশকের জন্য অতিরিক্ত খরচ অন্যদিকে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি দিশেহারা ।

খলিলনগর ইউনিয়নের কৃষক জলিল সরদার বলেন গতবার এ রোগের আক্রান্তের হার ছিল কম।তার আগের বছর এবং চলতি বছর আক্রান্ত হয়েছে বেশি।তিনি বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেছেন।কীটনাশক দোকান থেকে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ ব্যবহার করেও সংক্রায় দিন কাটাচ্ছেন ।অন্যান্য কৃষকের মতো তিনিও দিশেহারা ।

মাগুরা ইউনিয়নের হাকিম বিশ্বাসের ৩ বিঘা জমিতে, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শাহীন গাজীর ২ বিঘা জমিতে,সুজাত মোড়লের ৪ বিঘা জমিতে ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে ।

খলিশখালী ইউনিয়নের মেম্বার শফি মোল্লার ৭ বিঘা ও মিঠু গাজীর ২ বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে ।

সরুলিয়া ইউনিয়নের বাবলা সরদার ৩ বিঘা এবং আতিয়ার গোলদার ১০ বিঘা জমিতে এ রোগ দেখা দিয়েছে ।

জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়া বাজারের টুটুল চায়ের দোকানের স্বাধিকার টুটুল শেখ ২৫ শতক জমিতে সিনজেনটা-২৮ ধান চাষ করে ছিলেন ।তার সমস্ত জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে ।তিনি আরো বলেন জামালপুর ইউনিয়নের প্রায় শতকরা নব্বই ভাগ ধানে এ রোগ দেখা দিয়েছে ।

তালাসদর,খেশরা,নগরঘাটা,কুমিরা,ধানধিয়া, তেঁতুলিয়া ও ইসলামকাঠী ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠের ফসলের একই অবস্থা বিরাজমান।

এমন অবস্থায় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।অনেকেই চিন্তা ভাবনা করছেন আগামী মৌসুমে ২৮ জাতের ধান চাষাবাদ বন্ধ করে দিবে।

সরকারী মানঘোষিত ব্রি ২৮,সিনজেনটার ২৮,এসিআই ২৮,বিসমিল্লা ২৮ জাতের মধ্যে এসি আই এবং সিনজেনটার ২৮ ধানে এ রোগের হার তুলনামূলক বেশি দেখা দিয়েছে ।

সাধারণত বিঘা প্রতি এই গোত্রের ধানের ফলন ২০ থেকে ২৫ মণ হয় ।কিন্তু ব্লাস্টের কারণে ফলন ৩ থেকে ৫ মণে এসে দাঁড়ায় ।কোন কোন ক্ষেত্রে এর উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসে এবং বিচলী গো খাদ্যর অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

বাজারে উচ্চ দাম এবং আগাম পাকা ধান কাটা ও চাল সরু হওয়ার জন্য কৃষক উক্ত জাতটি পছন্দ করে থাকে ।কিন্তু ব্লাস্ট তাদের স্পন কেড়ে নিয়েছে ।এমন অবস্থায় তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)