বেনাপোলের হরিদাস ঠাকুরের পাটবাড়ি আশ্রমে দোল পূর্ণিমা উৎসব অনুষ্ঠিত
আঃজলিল:
ঐতিহ্যবাহী দোল পূর্ণিমা (হোলি উৎসব) মহোৎসবকে উৎসবমুখর করতে বেনাপোলের শ্রী শ্রী ব্রহ্ম হরিদাস ঠাকুরের পাটবাড়ি আশ্রমে এবার চারদিনের অনুষ্ঠান বুধবার (১৬ মার্চ) অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। আগামী শনিবার (১৯ মার্চ) ভোগ মহোৎসসের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দোল পূর্ণিমা উৎসব।
এ অনুষ্ঠানে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বেনাপোল পাটবাড়ি আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ মাধবদাস বাবাজী জানান, দোল পূর্নিমার অনুষ্ঠান মূলত আয়োজিত হয় শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথী উপলক্ষে। ১৪৮৫ খ্রস্টাব্দ শ্রী চৈতান্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব। হিসেব অনুযায়ী এবার ৫৩৬তম আবির্ভাব তিথী। শ্রী জগন্নাথ মিশ্র ও শ্রীমতি সচীদেবীর ঘরে ২৩ ফাল্গুন চন্দ্র গ্রহণের তিথীতে পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হন শ্রী চৈতন্য মহাপভু। তারই স্মরণে এই উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত হয় দোল পূর্ণিমা মহোৎসব। শ্রী শ্রী হরিদাস ঠাকুর ছিলেন শ্রী শ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভুর পরমভক্ত।
উপমহাদেশের খ্যাতিমান আধ্যাত্মিক সাধক শ্রী শ্রী হরিদাস ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বেনাপোলের পাটবাড়ি আশ্রম।
জানা যায়, বঙ্গবিভক্তির পর ১৯৪৭ থেকেই এই আশ্রম মন্দির চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে দোল পূর্ণিমার অনুষ্ঠান। প্রতিবছর ফাল্গুনি পূর্ণিমায় আয়োজিত হয় এই মহামিলনের অনুষ্ঠান। যেখানে শুধু বেনাপোল অঞ্চলই নয়, সারা বাংলাদেশ এমনকি ভারত বর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার ভক্তবৃন্দের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে আশ্রম প্রাঙ্গণ। শুধু সনাতন ধর্মের মানুষই নয়, সকল সম্প্রদায়ের মানুষই এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে আনন্দিত হয়ে উঠেন। বিশেষ করে এই অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিবাসীরাও শ্রী শ্রী হরিদাস ঠাকুরের নাম ও তার প্রতিষ্ঠিত আশ্রম, ইতিহাস, ঐতিহ্যের জন্য গর্ববোধ করেন। সে কারণে এ মহামিলন অনুষ্ঠানে মুসলিম সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ শিশুরাও সনাতন ধর্মের ভক্তবৃন্দের সঙ্গে একাকার হয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
পাটবাড়ি আশ্রমের দপ্তর সম্পাদক উজ্জল বিশ্বাস বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও দোল উৎসব শুরু হয়েছে। আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা ও ভারত থেকে আসা সকল নারী পুরুষদের নিরাপত্তা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে এবারের দোল উৎসব শুরু হয়েছে।
আশ্রমের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দেবনাথ বলেন, দেশের সীমান্ত ঘেষা শহর বেনাপোল পাঠবাড়ি সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম একটি তীর্থ স্থান। ঐতিহ্যবাহী দোল পূর্ণিমা (হোলি উৎসব) মহোৎসবকে উৎসবমুখর করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও ভারতসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা ভক্তকুলদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠছে এ উৎসব। পুরো এলাকাটায় একটা উৎসবের মেলা বয়ে যাবে।
আশ্রমের সভাপতি শ্রী তাপস বিশ্বাস বলেন, পাটবাড়ি আশ্রমের খ্যাতি বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা ভারতবর্ষ জুড়ে। এই আশ্রম বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গর্বিত ঐতিহ্য। ঐতিহ্যবাহী আশ্রমে আসা ভক্তকুলদের অনুষ্ঠানে খাবার দেওয়া হয় আশ্রম থেকে। পাটবাড়ির অনুষ্ঠানগুলো সারা দেশময় যাতে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠে সে ব্যাপারে বেনাপোলের সকল মহলকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করি।
উল্লেখ্য, জাতিভেদ অন্ধ-কুসংস্কার অনাচারের মধ্যে যখন হিন্দু জাতি ডুবে ছিল সেই সন্ধিক্ষণে জাতিকে মুক্ত করতে জন্ম নেন কলির ভগবান গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু। সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার কেড়াগাছি গ্রামে ভক্তরূপে জন্ম নেন হরিদাস ঠাকুর। হরিদাস ঠাকুর যিনি কলির জীবগণের উদ্ধারের জন্য তার সুমধুর কণ্ঠে হরিনাম সংকীর্ত্তন করে নামাচায্য নামে এবং ব্রক্ষত্ব অর্জন করে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর বদন দেখতে দেখতে মহাপ্রভুর কোলে অন্তিম নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং মহাপ্রভু নিজ হস্তে পারিষদবর্গ সঙ্গে করে পুরিধামে তার সমাধি স্থাপন করেন। হরিদাস ঠাকুর ছিলেন প্রকৃত বৈষ্ণবের জলন্ত নিদর্শন এবং দৈন্যের অবতার।
হরিদাস ঠাকুরের সাধন কানন নামে খ্যাত বেনাপোলের পাটবাড়ি। যেখানে হরিদাস ঠাকুর প্রতিদিন তিন লক্ষ নাম জপকীর্ত্তন এবং জীবগণের অন্তরে মুক্তির আলো প্রবেশ করিয়ে মানবকুলকে ধন্য করেন। যেখানে চিরপতিত সুন্দরী ল²ীহীরা হরিনাম মহামন্ত্রে হরিদাস ঠাকুরের কৃপা লাভে পরম বৈষ্ণবী হয়ে যান। হরির নাম মিশ্রিত প্রতিবিন্দু ধুলিকণা, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর পদধুলি, হরিদাসের কৃপা লাভে অবনত মস্তকে দন্ডায়মান সুপ্রাচীন তমাল বৃক্ষ, মাধবী লতা আজ বৃক্ষে পরিণত। সেই সিদ্ধপীঠ তীর্থ ভূমি হরিদাস ঠাকুরের ভজনস্থল শ্রীধাম পাটবাড়ি।