প্রথম জয়ের লক্ষ্যে বিকেলে মাঠে নামবে বাংলাদেশ
স্পোর্টস ডেস্ক:
ঘরের মাঠে বা নিরপেক্ষ ভেন্যুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে চারটি জয় আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের সাফল্যের অ্যাকাউন্ট ‘শূন্’। সেই ‘শূন্য’ স্থান এবার পূরণ করতে চায় বাংলাদেশ।
তাই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ‘বিশেষ কিছু’ করার লক্ষ্য নিয়ে আজ থেকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করছে তামিম ইকবালের দল। জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করে লক্ষ্যে পূরণের পথে এগিয়ে যেতে মরিয়া টাইগাররা।
সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় শুরু হবে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২১টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। জয় আছে ৪টি, হার ১৭টি। চারটি জয়ের প্রথমটি এসেছিলো ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে। পরের দু’টি ২০১৫ সালে।
ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিলো টাইগাররা। আর সর্বশেষ জয়টি ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। যেটি হয়েছিলো ইংল্যান্ডে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে জয় নেই।
এবারের সফরের আগে মোট তিনবার দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। তিন সিরিজে ৮টি ম্যাচের সবগুলোতে হারে টাইগাররা। এছাড়া ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের এক ম্যাচে প্রোটিয়াদের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচটিও হারে টাইগাররা। ঘরের বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মোট ৯ ম্যাচ খেলে সবগুলো হেরেছে বাংলাদেশ।
পরিসংখ্যান বলছে, ওয়ানডে ফরম্যাটে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কোন জয় নেই বাংলাদেশের। শুধুমাত্র ওয়ানডে নয়, টেস্ট ও টি-২০তেও কোন জয় নেই বাংলাদেশের। তবে এবার ‘নেই’ শব্দটা মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ।
অবশ্য ওয়ানডে বলেই আত্মবিশ্বাসটা আকাশ সমান টাইগারদের। দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো তেমনই ইঙ্গিত দিলেন।
প্রথম ওয়ানডে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডমিঙ্গো বলেছেন, অবশ্যই আমরা এখানে আন্ডারডগ হিসেবে এসেছি, এখানে আগে কোন ম্যাচ জিততে পারিনি। তবে এই ওয়ানডে দল নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী। লম্বা সময় ধরে এই সংস্করণে ভালো খেলেছি আমরা। এই সিরিজে আমাদের নামের পাশে আন্ডারডগ তকমা আছে। এটাই আমাদের বিশেষ কিছু করার সুযোগ দিচ্ছে। আমরা এমন কিছু করতে চাই, যা আগে কোন বাংলাদেশ দল এখানে করতে পারেনি।
নিজেদের কন্ডিশনে দক্ষিণ আফ্রিকা সেরা দল, সেটিও বলেছেন ডমিঙ্গো। সম্প্রতি ঘরের মাঠে ভারতকে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে প্রোটিয়ার, সেটিও মনে করিয়ে দিয়ে সর্তক তিনি।
ডমিঙ্গো বলেন, অবশ্যই ফেভারিট হিসেবে শুরু করবে দক্ষিণ আফ্রিকা। সম্প্রতি ভারতকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। নিজেদের কন্ডিশনে খেলবে, তাই তাদের হারানো কঠিন। আমাদের তুলনায় তারাই এগিয়ে থাকবে। তবে আমরা আন্ডারডগ হিসেবে মাঠে নামলেও আপাতত তা আমাদের সাথে মানিয়ে যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকা শক্ত প্রতিপক্ষ হলেও, প্রতিন্দ্বন্দিতাপূর্ণ সিরিজের প্রত্যাশাও করেছেন ডমিঙ্গো। তিনি বলেন, আমরা একটি প্রতিন্দ্বন্দিতাপূর্ণ সিরিজের প্রত্যাশা করছি। কারন দলের সবাই তাদের ভূমিকা সম্পর্কে ভালো জানে। নিজেদের কাজটা ভালোভাবে করতে পারলে, ভালো কিছু সম্ভব হবে।
শুধুমাত্র ‘বিশেষ কিছু’ করে সিরিজ জয়ই প্রধান লক্ষ্য না বাংলাদেশের। সিরিজটি আইসিসি বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ হওয়ায়, টেবিলের শীর্ষস্থান আরও সুসংহত করার মিশন বাংলাদেশের। এখন পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে ১০ জয়, ৫ হারে ১০০ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি ঘরের মাঠে আফগানিস্তানকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সুপার লিগের প্রথম দল হিসেবে ১০০ পয়েন্ট পায় বাংলাদেশ। সুপার লিগের ১৩ দলের মধ্যে আয়োজক ভারতসহ আট দল ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার ছাড়পত্র পাবে।
সুপার লিগে বাংলাদেশের অবস্থান যতটা শক্তপোক্ত, দক্ষিণ আফ্রিকার ততটা না। এখন অবধি ১০ ম্যাচে ৩ জয়, ৫ হার ও ২টি পরিত্যক্ত ম্যাচের কারনে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দশমস্থানে প্রোটিয়ারা।
সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফল থেকেও আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। তবে ঐ ম্যাচে হারের স্মৃতি এখনও পীড়া দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। প্রোটিয়া পেসার লুঙ্গি এনগিডি সেটি মনে করিয়ে দিলেন।
তিনি বলেন, আমরা সম্ভবত এই সিরিজের জন্য আরো বেশি মনোযোগী এবং প্রস্তুত। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আমাদের হারিয়েছিলো। অন্যান্য দলের বিপক্ষে যেভাবে খেলতে চাই, বাংলাদেশের বিপক্ষেও সেভাবে খেলবো।
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার নেতৃত্বে বিশ্বকাপের ঐ ম্যাচে ২১ রানে জিতেছিলো বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের ৭৫ ও মুশফিকুর রহিমের ৭৮ রানের সুবাদে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান করেছিলো বাংলাদেশ। জবাবে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৯ রান তুলে ম্যাচ হারে দক্ষিণ আফ্রিকা।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপে মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮৭ রানের ইনিংস ও বোলারদের নৈপুন্যে ৬৭ রানে জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল:
তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন চৌধুরি, নাসুম আহমেদ, ইয়াসির আলি চৌধুরি, মাহমুদুল হাসান জয়, সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল:
টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), কেশভ মহারাজ (সহ-অধিনায়ক), কুইন্টন ডি কক (উইকেটরক্ষক), জুবায়ের হামজা, মার্কো জানসেন, জানেমান মালান, এইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, লুঙ্গি এনগিডি, ওয়েন পারনেল, আন্দিলে ফেলুকুওয়াও, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, কাগিসো রাবাদা, তাবরাইজ শামসি, রাসি ফন ডার ডুসেন ও কাইল ভেরিনি।