আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

নিউজ ডেস্ক:

আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯১৪ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে ৮ই মার্চ দিবসটি পালন করে আসছে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিনটি ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’- হিসেবে পালন করছে। সারা বিশ্বের মতো আজ বাংলাদেশে নারী দিবস পালন করা হচ্ছে। ১৯১৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে নারীরা ভোটাধিকার পাওয়ার ফলে ৮ই মার্চ সেখানে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হতে থাকে। তারপর থেকেই সমাজতান্ত্রিক দলগুলো কমিউনিস্ট শাসিত দেশগুলোয় ৮ই মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশে এমন এক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন হচ্ছে যখন দেশে নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। সরকার পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন নারী। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এমন অবস্থায়ও এখনও নানা ক্ষেত্রে অবহেলিত নারী সমাজ। ন্যায্য মজুরি, কর্মপরিবেশসহ নানা বৈষম্যের শিকার তারা।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, একজন নারীকে একই সঙ্গে অনেকগুলো ভূমিকা পালন করতে হয়। একজন নারী কখনো মা, কখনো সন্তান রূপে। তার মধ্য দিয়েই সমাজের ভিত্তিটা তৈরি হয়। নারীকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে একজন পুরুষ সহকর্মীর তুলনায় অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হয়। সেটা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সর্বত্রই। আমাদের সামাজিক অবকাঠামোটা এমনভাবে তৈরি যেখানে নারীকে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে উঠে আসার পথটা অতটা সহজ নয়। আর এই কাঠামোর শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসাটা নারীর জন্য অনেক কষ্টসাধ্য।

তিনি বলেন, সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে- আমাদেরকে এখনও নারী দিবস পালন করতে হয়। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সংগ্রাম করতে হয়। নারীর সমতা এবং ক্ষমতায়নে সমাজ এবং পরিবারকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই না নারীর আসল সমতা আসবে বলে জানান এই নারী নেত্রী।

এদিকে এবার ‘টেকসই আগামীর জন্য; জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’- প্রতিপাদ্য নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে দিনটি উদযাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব, প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্বের সকল নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এদিকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও নারীর মৌলিক মানবাধিকার স্বাস্থ্য সেবা বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবায় নারীদের মতামতের অধিকার নেই। অথচ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার অধিকার, নারীর অধিকার। একজন নারীর কখন বিয়ে হবে, কার সঙ্গে বিয়ে হবে, কখন সন্তান হবে, কতজন সন্তান হবে, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার এবং নিরাপদ মাতৃত্ব এগুলো নারীর সাধারণ অধিকার। কিন্তু সচেতনতার অভাবে প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে নারীর অধিকারের কোনো গুরুত্ব নেই। তাই বিশেষজ্ঞদেরকে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে সমাজের সকলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।

বিভিন্ন সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে, সারা বিশ্বে করোনার কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে আগামী দিনগুলোতে শিশু ও মাতৃমৃত্যু বেড়েছে। কারণ পরিবার পরিকল্পনা সেবার হার প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। ইতোমধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমেছে ও বেড়েছে অনিরাপদ গর্ভপাত। প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই সময়ে বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে।

স্ট্রেনদেনিং ফ্যামিলি প্ল্যানিং সার্ভিস থ্রু এডভোকেসি ইনিশিয়েটিভের ফোকাল পার্সন মনজুন নাহার বলেছেন, করোনায় দীর্ঘদিন থেকে বিপর্যস্ত প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা। এখন করোনা কমেছে তাই শিশুর জন্ম ও পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভবতী ও নতুন মায়েদের কাছে পৌঁছাতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকার মায়েদেরকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে অথবা টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য জীবন রক্ষাকারী সেবা ও জোগানের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। একই সঙ্গে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে নিজস্ব মতামত প্রদান নারীর অধিকার। সচেতনতার মাধ্যমে নারী-পুরুষ তথা সমাজের সকলের এ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)