‘তোর ভাইকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না, লাশ খুঁজে নিস’

‘তোর ভাইকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না, লাশ খুঁজে নিস’ এভাবেই মিঠুর বোনকে ফোনে বলেন অচেনা সেই ব্যক্তি। এরপরই মিঠুর সন্ধানে নামেন মা-বোন আর নানি। এর মধ্যে আবারো ফোন করে মুক্তিপণ চান সেই লোকজন। শেষমেশ মিঠুর লাশ ফেলেন তারা।

মিঠু হোসেন সিরাজগঞ্জ সদরের রায়পুর রেলওয়ে কলোনি এলাকার মুসলিম উদ্দিনের ছেলে। মিঠু অনলাইনে বিভিন্ন শাড়ির ব্যবসা করতেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের হুগোলিয়াপাড়া এলাকার রূপচান মিয়ার খড়ের পালার পাশ থেকে মিঠুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মনোহরদী থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন মিঠুর বড় বোন মিনু আক্তার। হত্যাকারীদের শনাক্তে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

মিঠুর বোন মিনু আক্তার জানান, বুধবার ভোরে শাড়ি কেনার জন্য নরসিংদীর উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন মিঠু। সন্ধ্যায় মায়ের মুঠোফোনে কল করে নরসিংদী পৌঁছানোর কথা নিশ্চিত করেন।

ওইদিন রাত ৮টার দিকে আবারো ফোন দিয়ে মিঠু জানান, কয়েকজন লোক তাকে অপহরণ করেছে এবং এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। অপহরণকারীরা মিঠুকে মারধর করে তাদের দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে দ্রুত টাকা পাঠাতে বলা হয়। এ ঘটনায় ওই রাতেই সিরাজগঞ্জ সদর থানায় জিডি করে মিঠুর পরিবার।

একই রাত ১১টার দিকে মিঠু ফোন করে তার মাকে জানান, ‘তোমরা তো টাকা দিতে পারলে না। অপহরণকারীরা মনে হয় আমাকে মেরে ফেলবে। কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিও।’

এ সময় অজ্ঞাত ব্যক্তি তার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে মিঠুর বোনকে বলে যেহেতু টাকা দিতে পারসনি তাই তোর ভাইকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না। আগামীকাল তোর ভাইয়ের লাশ খুঁজে নিস। এ কথা বলে মিঠুর মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে মিঠুর খোঁজে তার মা, বোন এবং নানি নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সকাল ১০টার দিকে অজ্ঞাত ব্যক্তি মিঠুর মোবাইল থেকে মিনুকে ফোন দিয়ে পুনরায় মুক্তিপণ দাবি করে। এ সময় তিনি মিঠুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অপহরণকারী বলেন, আগে টাকা দেন তারপর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। একথা বলে আবারো মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সিরাজগঞ্জের পরিচিত এক সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারেন মনোহরদী উপজেলায় অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ খবর পেয়ে মিঠুর মা-বোন দ্রুত মনোহরদী থানায় উপস্থিত হন। পরে পুলিশের মোবাইল ফোনে ছবি দেখে মিঠুর লাশ শনাক্ত করেন তারা।

এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের হুগোলিয়াপাড়া এলাকার রূপচান মিয়ার খড়ের পালার পাশে অজ্ঞাত ওই যুবকের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহতের গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, পুলিশের একাধিক টিম হত্যাকারীদের শনাক্তের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হত্যাকারীরা অন্য কোনো স্থানে মিঠুকে হত্যা করে লাশ এখানে ফেলে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ কাজ করছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)