স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কাদের বেশি
অনলাইন ডেস্ক :
স্তন ক্যান্সার রোগীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বে প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজনের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। হিসাবটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও নানা সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে।
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক কাজী ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ।
ঝুঁকিপূর্ণ কারা
* পারিবারিক ইতিহাস: যদি কারও মা, খালা, মেয়ে বা বোনের স্তন ক্যান্সার থাকে, তবে তারও স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
* বয়স: বেশিরভাগ স্তন ক্যান্সারই ৫০ বছরের পরে হয়ে থাকে।
* দেরিতে প্রথম সন্তান: যেসব নারী ৩৫ বছরের পর প্রথম গর্ভ ধারণ করে তাদের সাধারণত স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
* দীর্ঘদিন ইস্ট্রোজেন হরমোনের সংস্পর্শ : অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া, বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হওয়া বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পর হরমোন থেরাপি নেওয়া স্তন ক্যান্সারের একটি সম্ভাব্য কারণ।
* স্থূলতা বা চর্বিজাতীয় খাদ্যাভ্যাস : অধিক ওজন এবং চর্বি জাতীয় খাবার, অ্যালকোহল ইত্যাদি এবং কায়িক পরিশ্রম না করা স্তন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
স্তন ক্যান্সারের উপসর্গ
* স্তনের আকার অথবা আকৃতির পরিবর্তন হওয়া।
* স্তনে বা বগল তলায় শক্ত চাকা হওয়া যা সাধারণত ব্যথাবিহীন হয়।
* চামড়ার পরিবর্তন যেমন : চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া, চামড়ায় গর্ত হওয়া, চামড়া লাল হওয়া বা গরম হওয়া। অথবা চামড়া কমলার খোসার প্রকৃতি ধারণ করা।
* স্তনের বোঁটায় কোনো পরিবর্তন যেমন : বোঁটা ভেতর দিকে চলে যাওয়া, বোঁটা দিয়ে অস্বাভাবিক রক্ত বা পুঁজজাতীয় পদার্থ বের হওয়া।
চিকিৎসা
অপারেশন
ছোট অবস্থায় ধরা পড়লে সাধারণত শুরুতেই অপারেশন করে পুরো স্তন ফেলে দিতে হয়। তবে আংশিক স্তন ফেলেও চিকিৎসা সম্ভব, যদি ক্যান্সারের অন্যান্য চিকিৎসার ব্যবস্থা দেওয়া সহজতর হয়।
চাকা যদি বড় হয়ে যায় অথবা বগলের তলায়ও চাকার অস্তিত্ব ধরা পড়ে, তখন শুরুতেই অপারেশন করা হয় না। সেই ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির মাধ্যমে চাকাকে ছোট করে সফল অপারেশনের জন্য যোগ্য করে তোলা হয়।
কেমোথেরাপি
রোগের শুরুতেই স্তন ক্যান্সার শুধু স্তনেই সীমাবদ্ধ থাকে না বলে ধারণা করা হয়। সে জন্য প্রায় প্রতিটি স্তন ক্যান্সারের রোগীর কেমোথেরাপি বা ওষুধের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
অতিমাত্রায় হরমোন সংবেদনশীল টিউমার, অধিক বয়সে সব ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির পরিবর্তে হরমোনথেরাপি দেওয়া যেতে পারে।
যাদের রোগ স্তন বা বগল তলা ছাড়াও দেহের অন্যান্য অঙ্গ যেমন— ফুসফুস, লিভার ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়েছে, তাদের চিকিৎসা কেবল কেমোথেরাপি বা অন্যান্য ওষুধের চিকিৎসা।
রেডিওথেরাপি
উচ্চমাত্রায় এক্স-রে দ্বারা ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করাকে রেডিওথেরাপি বলে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীরই রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। যাদের রোগ কোথাও ছড়ায়নি তাদের আরোগ্য করার জন্য রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। আর যাদের রোগ ব্রেইন বা হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, তাদের উপশম করার জন্য রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।
অন্যান্য চিকিৎসা
হরমোনথেরাপি
হরমোন সংবেদনশীল টিউমারকে চিকিৎসার জন্য শরীরে সংশ্লিষ্ট হরমোনের নিঃসরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ইমিউনোথেরাপি
কোনো কোনো স্তন ক্যান্সার রোগীর টিউমারে কোনো কোনো প্রোটিনের উপস্থিতি অতিমাত্রায় দেখা যায়, যেমন— (HER-2)। সে ক্ষেত্রে ওই প্রোটিনের বিপরীতে ওষুধ প্রদান করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।