হত্যার আসামি জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত হয়ে চাঁদাবাজি
নিউজ ডেস্কঃ
হত্যা মামলার আসামি, তবু ভোট দিয়ে মেম্বার বানিয়েছেন এলাকার লোকজন। যদিও ভোটের আগে জনকল্যাণে কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে আগের রূপেই ফিরে যান। শুরু করেন চাঁদাবাজি। যাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন; তাদের গায়েই হাত তুলেছেন বিপদে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া এ জনপ্রতিনিধি।
নবনির্বাচিত এ ইউপি সদস্যের নাম কামরুল ইসলাম সরকার। তিনি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনীমোহন ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (ইউপি মেম্বার)। সরকারি সড়ক সংস্কারের নামে দাবি করা চাঁদা না দেওয়ায় মঙ্গলবার বিকেলে চর রমনীমোহন ইউনিয়নের করাতিরহাট এলাকায় সাত নারী-পুরুষকে পিটিয়েছেন তিনি। এমনই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
আহতরা হলেন- চর রমনীমোহন ইউনিয়নের করাতির হাট এলাকার বৃদ্ধ হারুন সর্দার, কামাল সর্দার, কবির সর্দার, মনোয়ারা বেগম, মনোয়ারা, ফারুক সর্দার ও সবুজ মিয়া।
ভুক্তভোগীরা জানান, এলাকার কাদিরার গোজা-করাতিরহাট সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। সড়কের কাজের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন ইউপি সদস্য কামরুল সরকার। তিনি সড়ক সংস্কারের নামে এলাকাবাসীর কাছে বিভিন্ন অংকের টাকা দাবি করেন। এতে ওই এলাকার সর্দার বাড়ির লোকজন অপারগতা প্রকাশ করায় তার সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। তবে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে কামরুলকে ভোট না দেওয়ায় ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে বলে আহতদের দাবি।
বিরোধের জেরেই মঙ্গলবার দুপুরে ভাই সুমন সরকার, কামাল সরকার ও হেলাল সরকারকে সঙ্গে নিয়ে সর্দার বাড়িতে হামলা চালান কামরুল। এরই জেরে বিকেলে আরেক দফা হামলা চালান তারা। এতে নারী-পুরুষসহ সাতজন আহত হন।
স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম সর্দার বলেন, সংস্কার করা সড়কের একপাশে আমার বাড়ি, অন্যপাশে ক্ষেত। সড়কটি দক্ষিণ পাশে ভেঙে যাওয়ায় সেটি সংস্কার না করে উত্তর পাশে আমার বাড়ির দিকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি আপত্তি জানালে সংস্কারের নামে আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন ইউপি সদস্য কামরুল সরকার। এ নিয়ে আমার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়।
আহত কবির হোসেন বলেন, সড়ক সংস্কারের নামে আমার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেছেন কামরুল সরকার। টাকা দাবির জেরে দুপুরে ও বিকেলে কামরুল মেম্বার ও তার ভাইয়েরা মিলে আমাদের ওপর হামলা চালান।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য কামরুল সরকার বলেন, সড়ক সংস্কারের জন্য দুই পাশে প্রশস্ত করা প্রয়োজন। শ্রমিকরা কাজ করার সময় সর্দার বাড়ির লোকজন বাধা দেন। এতে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার নামে মিথ্যা রটানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে চর রমনীমোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল বলেন, আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ইউপি সদস্য কামরুলকে বলেছি আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে।
সদর থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আহতদের থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলার চর রমনীমোহন ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচিত হন মো. কামরুল ইসলাম সরকার। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তিনি একটি হত্যা মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পান। চর দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ভোলার একটি হত্যা মামলায় তিনি প্রায় এক বছর কারাগারে ছিলেন।