যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্যাতন করার অভিযোগ স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে
এস কে,ফেরদৌস আহমেদ :
সবকিছু সময়ের সাথে পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি আমাদের মানব সমাজের মানসিকতা। আর আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন না হওয়ার কারণে আজ আমাদের নারীসমাজ বিভিন্নভাবে আমাদের দেশের প্রতিটি সমাজে নিগৃহীত হচ্ছে। বিশেষ করে নারীসমাজ যৌতুকের কারণে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যৌতুক একটি সামাজিক ক্যান্সার। নারীর-জীবনে এ প্রথা অভিশাপস্বরূপ। এর বিষক্রিয়ায় আমাদের গোটা সমাজ আক্রান্ত। প্রতিনিয়ত অসংখ্য নারী অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হচ্ছে যৌতুকের কারণে। যৌতুকের করাল গ্রাসে নারীর সামাজিক ও মানবিক মর্যাদা লাঞ্ছিত হচ্ছে।
অসংখ্য নারীর সুখের সংসার ভেঙে যাচ্ছে যৌতুকের অভিশাপে। যৌতুক-প্রথা কেবল নারীকে মর্যাদাহীনই করে না বরং নারী জাতিকে সম্মানহানির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যৌতুক দেয়া এবং যৌতুক নেয়া দুটোই অপরাধ? আর যৌতুকের কারণে কেউ আত্মহত্যা করলে প্ররোচনা-কারীর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে প্রতিনিয়তই যৌতুকের বলি হচ্ছেন নারীরা।
সারা দেশেই যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতন, হত্যা, আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। পারিবারিক সহিংসতার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে এই যৌতুক। আমাদের দেশে বর্তমানে দেখা যায়, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে যৌতুক নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। যৌতুকের দাবি মেটাতে গিয়ে কনের পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে। আবার এ দাবি মেটাতে না পারলেই নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
ঠিক এমনই যৌতুকের দাবি মিটাতে গিয়ে নিঃস্ব প্রায় সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া এলাকার মিজানুর রহমান । মিজানুর রহমান বলেন, মাত্র পাঁচ মাস আগে আমার মেজ মেয়ে মুনিয়া সুলতানাকে বিয়ে দিয়ে ছিলাম আলীপুরের নগরঘাটা এলাকার আলী-হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেনের সাথে । গত দুই মাস আগে আমার মেয়েকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং তার কিছু দিন যেতে না যেতেই আমার কাছে মেয়েকে পাঠিয়ে মুদি ব্যবসা করার জন্য ৩ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি সেই টাকাও দিয়েছি তার ব্যবসার জন্য ।
এর কিছু দিন পরে আমার মেয়ে জামাই আমার বাড়িতে আসে এবং আমার জামাই নাজমুল সরাসরি আমার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে বাড়ির ছাদ ঢালাই দিবে বলে। আমি অপরাগতা স্বীকার করলে আমার সাথে বাজে ব্যবহার করতে শুরু করে যা আমি প্রকাশ করার মতো না । এবং এর চার দিন পরে মেয়েকে নিয়ে চলে যায় তার বাড়িতে।
কয়েক দিন হয়ে গেল মেয়ের কোন খোঁজ নাপেয়ে আমার স্ত্রী তাদের বাড়িতে যায়,সেখানে গিয়ে আমার মেয়ে অসুস্থ দেখতে পায়। আমার মেয়ে আমার স্ত্রীকে বলে আম্মু তোমরা টাকা দাওনি এজন্য আমাকে মারধর করেছে । আমার স্ত্রী অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে আসতে চাইলে নাজমুল ও তার বাবা আলী হোসেন বাধা দেয়। এক পর্যায়ে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসে আমার স্ত্রী।
এ বিষয়ে নির্যাতিতা গৃহবধূ মুনিয়া সুলতানা বলেন, আমার স্বামী নাজমুল স্থানীয় খারাপ প্রকৃতির লোকজনের সঙ্গে মিশে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে,নিজ ঘরে আমার সামনে বসে মাদক সেবন করে এবং আমার বাবার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া ৩লাখ টাকা ও গহনা কিছুই নেই । প্রায় সময় আমার শ্বশুর আলী হোসেন ও আমার স্বামী নাজমুল আমাকে যৌতুকের টাকার জন্য মারধর করতো । আমাকে কোন প্রকার মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিত-না এ জন্য বিষয় গুলো কারোর কাছে জানাতে পারতাম না ।
যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্যাতনের বিষয় জানতে চাইলে অভিযুক্ত নাজমুল হোসেন বলেন, আমি বা আমার পরিবার কখনো তার গায়ে হাত তুলিনি এবং তাদের সাথে কোন প্রকার টাকা পয়সা লেনদেন করিনি । আমার বাড়ি থেকে তার মা ও দাদি তাকে নিয়ে গিয়েছিল। নাজমুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন,আমার বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় আমার স্ত্রী মুনিয়া সুলতানা তার প্রয়োজনীয় সকল জিনিস নিয়ে গেছিল ।
গৃহবধূকে নির্যাতনের বিষয় জানতে চাইলে শ্বশুর আলী-হোসেন বলেন,তাকে কোন অসম্মান করা হয়নি এবং তাদের কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি। মুনিয়া এখান থেকে যাওয়ার সময় সব কিছু গুছায়ে নিয়ে চলে গেছে,আমরা ফোন করলে কথা বলে না ।
এদিকে অভিজ্ঞ-মহল মনে করছেন যৌতুক প্রতিরোধে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন ।