সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পি. এন স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভদ্রকান্ত সরকারের অনিয়ম-দূর্নিতীর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পি. এন স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভদ্রকান্ত সরকারের অনিয়ম-দূর্নিতীর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে উক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শাফী অহমাদ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১৮ জানুয়ারী পরিচালনা পরিষদের সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধি ও অন্যান্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভদ্রকান্ত সরকার আমার কাছে তিন দিনের ছুটির আবেদন জানালে এতে আমি আপত্তি জানায়। এক পর্যায়ে আমার অসম্মতিতে তিনি সিনিয়র শিক্ষক হাফিজুল ইসলামের কাছে তিন দিনের ছুটির লিখিত আবেদনটি দিয়ে তার গ্রামের বাড়ি চলে যান। উক্ত তিনদিন শেষ হওয়ার পরও তিনি অদ্যবধি উক্ত প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেননি। সিনিয়র শিক্ষক হাফিজুল ইসলাম তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দুই দিন পরে আসবেন বলে জানান। এরপর থেকে তিনি তার ফোনটি বন্ধ রাখেন। তার অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সকল শিক্ষক কর্মচারীদের জানুয়ারী মাসের বেতন বিল ব্যাংকে জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। নির্ধারিত সময়ে বিল জমা দিতে না পারলে সরকারী টাকা ফেরত যাবে। এছাড়া এনটিআরসিএ শিক্ষকদের যোগদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, গত ১১ জানুয়ারী পরিচালনা পরিষদের সভায় তাকে বিগত বছরগুলোর আয় ব্যায়ের হিসাব জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তিনি কোন আয় ব্যয়ের হিসাব জমা দেননি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের চলমান জটিলতা ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়ে আলোচনা করার সময় তারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভদ্র কান্তের অদক্ষতা, অনিয়ম, অর্থ আতœসাৎ ও প্রশাসনিক বিভিন্ন অনিয়মের কথা উলে।লখ করে একটি লিখিত আবেদন করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত বছরের ১ মার্চ স্থানীয় ও ২ মার্চ ঢাকা একটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর ১৮ মার্চ পরিচালনা কমিটির সভায় ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল ঘোষনা করা হয় এবং নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা জন্য বলা হয়। অথচ জনৈক এক শিক্ষক প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভদ্রকান্তিসহ কমিটির কিছু সদস্যকে হাত করে নেন। তাদের ম্ধ্যামে তিনি আবেদনও করেন। বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। একপর্যায়ে তিনি উক্ত পদের যোগ্য না হওয়ায় তার আবেদন বাতিল করা হয়। এরপর তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার জন্য ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সালমা পারভিনকে দিয়ে সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত গত ১৪ জানুয়ারী ৭দিনের মধ্যে কারন দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেন। অথচ বিষয়টি অফিস সহকারী কবিরুল ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভদ্রকান্তি আমাকে না জানিয়ে তা গোপন করেন। সময়মত জবাব না দেয়ায় আদালত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেন। পরে আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় রেজুলেশন ও বিদ্যালয়ের অন্যান্য গোপন নথি কমিটির সদস্যদের পাচার করে অফিস সহকারী ও ভাপপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। এ ব্যাপারে তাদের কারন দর্শানোর নোটিশ দিলে তারা আজ অবধি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। একই সাথে তারা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার কারনে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অসুবিধার কথা চিন্তা করে বিষয়টি নিরসনের জন্য গত ১ জানুয়ারী, ২ ও ৪ ফেব্রুয়ারী কয়েক দফায় পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়। কিন্তু এতে তারা উপস্থিত না হওয়ায় এক পর্যায়ে ৪ ফেব্রয়ারী মুলতবী সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৩৫ এর ৪,৫ ও ৬ ধারা অনুসারে উপস্থিত সদস্য বৃন্দের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভদ্রকান্ত সরকারকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে শেখ হাফিজুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিতেক্রমে গৃহিত হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভদ্রকান্ত সরকারের অনিয়ম-দূর্নিতীর তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় পি. এন স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্যগন, শিক্ষকবৃন্দ ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।