সাতক্ষীরায় যন্ত্রের মাধ্যমে বোরো ধানের সমলয় চাষাবাদ শুরু
রঘুনাথ খাঁ, – ফলন বাড়াতে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে বোরো ধান রোপন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। রবিবার সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙা ইউনিয়নের মাধবকাটি ব্লকের বলাডাঙা বিলে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা খামার বাড়ির উপপরিচালক মোঃ নুরুল ইসলাম।। এর আগে ভালো মানের চারা উৎপাদনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্রে-তে বীজ বপন করছিলেন কৃষকরা।
সাতক্ষীরা খামার বাড়ি সূত্রে জানা গেছে এবার ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে জেলায় বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে জেলার সদর উপজেলার ধুলিহর ও ঝাউডাঙা, কলারোয়া পৌর ব্লক ও কেরালকাতা ব্লক, দেবহাটা উপজেলার সদর ব্লক ও তালা উপজেলা সদর ব্লকে ৩০০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে ট্রেতে বীজ বপন ও মেশিনে পাতা রোপনের মাধ্যমে হাইব্রীড তেঁজগোল্ড জাতের বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। আউশ, আমন ও বোরো এই তিন মৌসুমে এ চাষ হয়ে থাকে।
মাধবকাটি ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা কিরন্ময় সরকার জানান,জনসংখা বৃদ্ধির সাথে সাথে কমছে কৃষি জমি। তাই স্বল্প জমিতে অধিক ধান উৎপাদন করে মানুষের খাদ্য চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সাতক্ষীরায় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষাবাদ শুরু হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সমালয় পদ্ধতিতে সদর উপজেলার মাধবকটি ব্লকের বলাডাঙায় ৫০ একর জমিতে হাইব্রীড তেঁজগোল্ড বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। রোপন পদ্ধতি দেখে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
তিনি আরো জানান,সরকারি কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের মাধবকাটি ব্লকের বলাডাঙা গ্রামে স্থানীয় ৫৫ জন কৃষক মাটিভর্তি ট্রে-তে বপন করছে তেঁজগোল্ড হাইব্রিড জাতের ধানবীজ। সমলয় চাষাবাদের নতুন মাত্রায় মেশিন দিয়ে ৫০ একর জমিতে রোবো ধানের চারা রোপন করা হয়। এবার জেলার চারটি উপজেলায় ৩০০ একর জমিতে এ জাতের ধান রোপন করা হচ্ছে। ট্রে-তে বীজ বপনের ১৪০ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তোলা যায়। বিঘা প্রতি ২০ বস্তা বা ৩০ মণ ধান উৎপাদন হবে। একইভাবে এ চাষে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কৃষকদের ৭০ শতাংশ ও অন্যান্য উপজেলাগুলিতে ৫০ শতাংশ সরকারি অনুদান দেওয়া হবে। কৃষির সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চ ফলনশীল একই জাত ব্যবহার, ট্রে-তে বীজ বপন, কম বয়সের চারা রোপন, চারা রোপনে রাইচ ট্রন্সপ্লান্টার ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার, আইল ফসল, ধান কর্তনে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সংকটের সমাধান সম্ভব হবে এই সমলয় চাষাবাদে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাইচ ট্রন্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ৪৫ থেকে ৬০ মিনিটে এক বিঘা জমিতে চারা রোপন করা যাবে। এ বিষয়ে কৃষকদের কারিগরি সুবিধা ও সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
বলাডাঙা গ্রামের ওমর ফারুক ওরফে লাল্টু জানান, গত বছর তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের মাহমুদকাটিতে তেঁজগোল্ড হাইব্রীড জাতের ধান চাষ করা হয়। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এ খবর পেয়ে ওই এলাকার কৃষকদের সাথে তিনি কথা বলেছেন। তেঁজগোল্ড হাইব্রীড বোরো ধান েেট্রতে বীজতলা তৈরি করা হয়। এ ছাড়া মেশিনের মাধ্যমে রোপন করা হয় ধান গাছ। শ্রমিক, মজুরি ও সময় কম লাগায় এ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দেড় বিঘা জমিতে এ বার এ জাতের ধান লাগিয়েছেন।
বলাডাঙা গ্রামের হাফিজা খাতুন জানান, এক বিঘা জমি মেশিন দিয়ে রোপন করতে এক লিটার প্রেট্রোল লাগে। সময় লাগে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট। খরচ কম। তাই তিনি এবার ১২ কাঠা জমিতে এ জাতের ধান চাষ করেছেন। একইভাবে কৃষি বিভাগের সহায়তায় ও পরামর্শে দেড় বিঘা জমিতে তেঁজগোল্ড জাতের বোরো ধানের চাষ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম চাষ করছেন। ট্রেতে ধান ফেলে মেশিনে রোপন করা হয়। বিঘা প্রতি ২০ বস্তা ধান হবে। এক বিঘা জমি রোপন করতে ৪/৫ জন শ্রমিক লাগে। ধানের বীজতলা তৈরি থেকে কাটা পর্যন্ত ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন সময় লাগে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা কর্মসুচির আওতায় এবার ৫০ একর হাইব্রীড জাতের বোরো ধান রোপন করা হচ্ছে। ৪ হাজার ৫০০ ট্রে-তে হাইব্রীড ধানের বীজতলা লাগানো হযেছে। সার ও কীটনাশকসহ কর্তণ সরকারি উদ্যোগে করা হবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, মৌসুমী প্রণোদনার রাইস ট্রান্সপ্লান্টের আওতায় ১৫০ বিঘা জমিতে সমালয় পদ্ধতিতে হাইব্রীড বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, এবার সাতক্ষীরা জেলায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরা ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চারটি উপজেলার ৬টি স্থানে ৩০০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে হাইব্রীড ধান চাষ করা হচ্ছে। চাষীদের অর্থের অপচয় কম ও সময় সাশ্রয়। রাইস প্লান্টার এর মাধ্যমে বপন, রোপন, কর্তন ও কর্ষণ সবগুলো হচ্ছে যান্ত্রিকভাবে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ১০০ ভাগ কর্ষণ ও ১২ ভাগ কর্তণ হলেও রোপন ২ শতাংশ হচ্ছে। কম্বাইন হারভেস্টারের জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে সরকার অনুদান দিচ্ছে।#