ক্রিকেট পাড়ায় ঝড়, জাহানারাকে ছেটে ফেলেছেন বিসিবি
বিপিএল ছাপিয়ে কয়েকদিন ধরেই ক্রিকেট পাড়ায় নতুন ঝড়, কমনওয়েলথ গেমসের বাছাই পর্বের দল থেকে বাদ পড়েছেন প্রমীলা দলের তারকা ক্রিকেটার জাহানারা আলম। তার বিরুদ্ধে উঠেছে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ।
সেখানে দাঁড়িয়েই উঠেছে প্রশ্ন, বিসিবি কী জাহানারার মতো নিবেদিত এমন ক্রিকেটারকে যখন তখন ছেটে ফেলতে পারে, এটা কী হতে পারে কোনো বোর্ডের পেশাদারিত্ব। বিপরীত কথাও আছে, জাহানারা অভিযোগ তোলার সেই সুযোগটাই বা তৈরি করে দিলেন কেনো?
এক হাতে এমন ক্যাচ লুফে নিয়েই বিশ্বকে জাহানারা আলম চমকে দিয়েছিলেন, বল ব্যাটের নৈপুন্যে হয়ে উঠেছেন বাংলার প্রমীলা ক্রিকেট আকাশের মায়াময় ধ্রুবতারা, দেশের হয়ে নারী ক্রিকেটের অর্জনে, গর্জনে জাহানারা মিলেমিশে একাকার।
২০০৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার হিসেব নিকেশ তুলে রেখেই জাতীয় দলের হয়ে খেলতে শ্রীলঙ্কায় পাড়ি জমিয়েছিলেন জাহানারা, সেই থেকেই তার ক্রিকেট জাহানে ছুটে চলার শুরু। সেবার পরীক্ষা দেয়া হয়নি, তবে ক্রিকেটের কোনো খেলাই তিনি মিস করেননি।
এ পর্যন্ত ওয়ানডেতে ৪০ ম্যাচ খেলে ঝুলিতে পুরেছেন এগারোশ’র বেশি রান, উইকেটও আছে চল্লিশের কাছাকাছি; টি-টোয়েন্টি জাহানারা আর দারুণ, ছন্দ তার সুপাঠ্য কবিতার মতো, একাত্তর ম্যাচে তার এগারো শ’র বেশি রান, উইকেটও শিকার করেছেন পঞ্চান্নটি।
সব মিলিয়ে জাহানারাকে নারী ক্রিকেটের সাকিব হাসান বলাই যায়, তার হাত ধরেই বেশ কয়েকবার জয়ের দেখা পেয়েছে টাইগাররা; ২০১০ সালের এশিয়ান গেমসে রৌপ্য পদক জয়ের সেই মাহেন্দ্র ক্ষণেও জাহানারা দ্যুতি ছড়িয়েছেন, বাংলাদেশ প্রমীলা দলে ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার ক্ষণেও তার আছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
২০১৮ সালে নারী এশিয়া কাপে সাত বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জয়ে কৃত্বিতেও আছে জাহানারা নামটা, ২০২১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার যে অর্জন সেখানেও জাহানারা জড়িয়ে আছেন।
এক কথায় নারী ক্রিকেটের যা কিছু এ পর্যন্ত আছে, অলরাউন্ডার জাহানারাও আছেন তার চারপাশে। আবার জাহানারাই প্রথম নারী ক্রিকেটার যিনি দুইবার আইপিএলের মতো নামি লিগে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, অন্য বিদেশি লিগগুলোতেও তার হাঁকডাক আছে।
তবুও সম্প্রতি দলে নেই জাহানারার নাম, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে, তাই বিসিবিও চালিয়েছে ছুড়ি। সেখানে দাঁড়িয়েই প্রশ্ন, ক্রিকেটে যে জাহানার নিবেদন অনস্বীকার্য, যে মেয়েটা জীবনের গুরত্বপূর্ণ পরীক্ষা বাদ দিয়ে দেশের জন্য খেলতে যান বিদেশে; তাকে কী বিসিবি এভাবে অসম্মান করতে পারে; চাইলেও কী কোনো ঠিক কারণ দর্শানো ছাড়া জাহানারার নামটা কেটে দেয়া যায়, এটা কী ঘোরতর অন্যায় নয়?
আবার বিপরীতে কথা আছে, বৃক্ষ যতো বড় হয়, ততো ঝুঁকে পড়ে, মানে মানুষ যতো বড় হবে তার বিনয়ও বাড়বে ততোগুণে। জাহানারা সেই বিনয়টুকু অর্জন করতে পেরেছেন কী? কেনোই বা তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো অভিযোগটা আনার সুযোগটা করে দেবেন?