মুরগিতে স্বস্তি, বেড়েছে চাল-ডিমের দাম

নিউজ ডেস্কঃ

অনেকেই বলে থাকেন ফার্মের মুরগি গরিবের আমিষের চাহিদা মেটায়। কিন্তু সেই আমিষই চলে যায় ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তবে বেশ কিছু দিন ধরেই অস্বাভাবিকভাবে বাড়া মুরগির দাম কমতে শুরু করেছে। গেলো সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা এবং পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এতে দুই সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২৫ টাকা এবং আর সোনালি মুরগি ৮০ টাকা পর্যন্ত কমলো। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চাল ও ডিমের দাম বেড়েছে।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কমলেও ভরা মৌসুমেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। এমনকি সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম বাড়ার ঘটনা ঘটেছে। সব থেকে বেশি বেড়েছে শশার দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে শশার দাম বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ফুলকপি ও শিম।

ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা।

ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি গেলো এক সপ্তাহে কমেছে সোনালি ও লাল লেয়ার মুরগি দাম। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা। গত সপ্তাহে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।

মুরগির দামের বিষয়ে মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী মল্লিক শাহ বলেন, কিছুদিন আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা বিক্রি করেছি। সরবরাহ কম থাকায় এমন দাম বেড়েছিল। তবে এখন মুরগির সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। তাই দাম কমেছে। আমাদের ধারণা সামনে মুরগির দাম আরো কমবে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মুরগি কিনতে আসা কামাল হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা কেজি কিনেছিলাম। আজ ২৬০ টাকা নিয়েছে। আমার মতে মুরগির দাম আরো কমা উচিত। দেখেন ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আমি মনে করি ব্রয়লার মুরগির কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে থাকলে সেটা স্বাভাবিক। এর থেকে বেশি হওয়া উচিত না।

এছাড়া আবারও বাজারে বেড়েছে চালের দাম। বাজারে নাজিরশাইল চালে কেজিতে বেড়েছে ১ টাকা। নাজিরশাইল চাল কেজি ৭১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চালে প্রতি কেজিতে ১ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা, আটাশ চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১ টাকা। আটাশ চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা।

মিরপুর ১১ নম্বর বাজারে চাল বিক্রেতা মান্নান বলেন, বাজারের সব ধরনের চালে কেজিতে ১ টাকা করে বেড়েছে। পাইকাররা বলছে বাজারে ধানের দাম বাড়ায় বেড়েছে চালের দাম। চালের দাম বাড়ার মূল কারণ সিন্ডিকেট, এ ছাড়া আর কিছুই নয়।

এসব বাজারে ভোজ্যতেলের প্রতি লিটার খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেলের লিটারও বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।

বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এছাড়া প্যাকেট চিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়।

বাজারে বেড়েছে ডিমের দাম। লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। সোনালী (কক) মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়।

অপরদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা শশার কেজি বিক্রি করছেন ৬০ থেকে ৮০ টাকা। গত সপ্তাহে শশার কেজি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে শশার দাম বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে।

শশার দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী মো. বেলাল হোসেন বলেন, শশার বাজারে আগুন লেগেছে। আড়তে শশার দাম শুনে প্রথমে আমরাই অবাক হয়েছি। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি দামে শশা কিনে এনেছি। বেশি দামে কেনার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, হঠাৎ করেই বাজারে শশার সরবরাহ কমে গেছে। আজ বাজারে শশা অনেক কম এসেছে। এ কারণে এমন দাম বেড়েছে। তবে আমাদের ধারণা শশার এই দাম বেশি দিন থাকবে না। অল্প সময়ের মধ্যেই শশার দাম কমে যাবে।

শশার পাশাপাশি গেলো এক সপ্তাহে বেড়েছে ফুলকপির দাম। গত সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া ফুলকপির দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে বেড়েছে শিমের দাম। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পাকা টমেটো, গাজর, মুলা, শালগমের। গত সপ্তাহের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শালগমের (ওল কপি) কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

এছাড়া বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলাশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাক বিক্রি হচ্ছে। আর পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এগুলোর দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।

ভরা মৌসুমেও শীতের সবজির দাম বাড়ার বিষয়ে মালিবাগের ব্যবসায়ী আজগর আলী বলেন, কয়েক দিন ধরে ফুলকপির দাম লম্ফঝম্প করছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সামনে আরো দাম বাড়বে। আর ফুলকপির দাম বাড়লে অন্য সবজির দামও বাড়তে পারে।

বাজারটিতে সবজি কিনতে আসা হারুন অর রশিদ বলেন, এখন শীতের সবজির ভরা মৌসুম। স্বাভাবিক ভাবেই এখন সবজির দাম কম হওয়ায় কথা। কিন্তু দেখেন সবজির দামে যেন আগুন লেগেছে। ৩০ টাকার শশা ৮০ টাকা হয়েছে। ৩০ টাকার ফুলকপি ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এটা কীভাবে স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে। আসলে বাজারে কারও কোনো নজরদারি নেই। যে কারণে হুটহাট করে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়।

মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা।

এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। ছোট ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। নলামাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)