আপেলের পাঁচ ব্যাংক কার্ডে ‘৫ কোটি’ টাকা, খরচ ‘গার্লফ্রেন্ডদের’ পেছনে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শরীরচর্চা অনুষদের সাবেক পরিচালক আবেদ আলীর ছেলে আজাহার আলী আপেলের ব্যাংকের পাঁচ কার্ডে আছে পাঁচ কোটি টাকা। বিভিন্ন শহরে আছে মার্কেট ও বাড়ি। এছাড়া আপেলের আছে একাধিক গার্লফ্রেন্ড। তাদের পেছনেই খরচ করেন এসব টাকা। আর মাদক সেবনে প্রতি মাসে তার খরচ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে শিবগঞ্জের জালমাছমারী গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে আটক করেছে র্যাব। ঐ সময় আপেলকে মাদক সরবরাহকারী আসিফ আলী নিশান ও আপেলের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভাইয়ের ছেলে মাদকসেবী সাদমান শাকিব আলীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সকালে শিবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে আরো চার মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত বাকিরা হলেন-শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ডাকাতপাড়ার মজিবুর রহমানের ছেলে জাহির, সেলিমাবাগ গ্রামের ধনা মমিনের ছেলে রানাউল হক, দৌলতপুর মহাজনপাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা ইয়াসিন ও তার ছেলে শাহরিয়ার নাজিম জয়।
শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৫ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সানারিয়া চৌধুরী।
তিনি জানান, ২০০০ সালে এইচএসসি পাসের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন আজাহার আলী আপেল। কিন্তু বেপরোয়া জীবনযাপন ও মাদকে জড়িয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই শেষ হয়ে যায় শিক্ষাজীবন। তিনি ১২ বছর আগে মাদক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হলেও নানান প্রভাব খাটিয়ে গ্রেফতার এড়িয়ে বিভিন্ন অসামাজিক কর্যকলাপ করে আসছিলেন। সঙ্গীদের নিয়ে প্রতিদিন তার বাড়িতে মাদকের আসর বসাতেন।
মেজর সানারিয়া চৌধুরী জানান, ২০১৭ সালে হেরোইনে আসক্ত হয়ে পড়েন আপেল। ২০১৮ সালে ঢাকায় একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করা হলেও সেখান থেকে পালিয়ে যান। ২০১৯ সালে তাজনুভা তাজরিন অভি নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। পরে তার বিরুদ্ধে খারাপ আচরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন অভি।
তিনি আরো জানান, আজাহার আলী আপেল ২০১০ সালের একটি মাদক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি। বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে ১২ বছর ধরে অনৈতিক কার্যকলাপ করে আসছিলেন তিনি। তার একাধিক গার্লফেন্ড আছে, তাদের সঙ্গে টিকটক ভিডিও বানিয়ে আপলোড করেন। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে পাঁচটি ব্যাংকের কার্ড, টাকা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। আপেলের দেওয়া তথ্যমতে, উদ্ধারকৃত পাঁচটি কার্ডে পাঁচ কোটির বেশি টাকা রয়েছে।
গ্রেফতারের আজাহার আলী আপেলের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় আরো একটি মাদক মামলা করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাব-৫ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সানারিয়া চৌধুরী।
আপেলের সাবেক স্ত্রী তাসনুভা তাজরিন অভি বলেন, আমার বাসা রাজশাহীতে। আপেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবেই আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিনই সে বাইরে থেকে মাদক সেবন করে এসে আমাকে মারধর করেছিল। শুধু তাই নয়, আপেলের নির্যাতন ও তার মায়ের মিষ মেশানো খাবারের কারণে আমার গর্ভের সন্তানও মারা যায়।
তিনি আরো বলেন, আপেল ৫-৬ রকমের মদক সেবক করে। আমার বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করেও মাদক সেবক করেছে সে। আমি এখন সর্বশান্ত।