আবরার হত্যা মামলার রায় দুপুরে: ২২ আসামি আদালতে
নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনর্চাজ এসআই নিপেন বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রায় ঘোষণার আগে আসামিদের আদালতের এজলাসে হাজির করা হবে।
বুধবার দুপুর ১২টায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে এ রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
এর আগে, ১৪ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। তবে ওইদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় নতুন দিন ৮ নভেম্বর ধার্য করা হয়।
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেছেন, তিনি চান বুধবারই যেন ছেলের হত্যার মামলার রায় হয়। আর যেন রায়ের তারিখ না পেছায়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ হত্যা মামলা করেন।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে ২৫ আসামিকে অভিযুক্ত করেন।
গত বছরের ৫ অক্টোবর এ মামলার বাদী ও আবরারের বাবা বরকতুল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপর ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান মামলার শেষ সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। গত ৪ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তার জেরার মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এসময় আদালত আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৪ মার্চ দিন ধার্য করেন। এ মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
এ মামলার আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতামিম ফুয়াদ, অনিক সরকার ওরফে অপু, মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, অমিত সাহা, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
আসামিদের মধ্যে তিনজন পলাতক রয়েছেন। এরা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।
এছাড়া তাদের মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।
অভিযোগপত্রে থেকে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে আটজন আদালতে দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৩ জন ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া সাক্ষীদের মধ্য থেকে দুই জন ১৬৪ ধারায় এবং ৩০ জন ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
সাক্ষীদের মধ্যে বুয়েটের শিক্ষক, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট, চিকিৎসক এবং নিরাপত্তাকর্মীও আছেন। এদিকে আবরারের রক্তমাখা জামাকাপড়, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন, ফরেনসিক প্রতিবেদন, ১৬৪ ও ১৬১ ধারায় দেওয়া আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপের কথোপকথন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, আসামিদের কল রেকর্ড ও মশারি টানানোর রড-স্টাম্প আলামত হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।