কলারোয়ায় পানি সিঙ্গারার বাম্পার ফলন-কৃষকের মুখে হাসি, শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দিন দিন বাড়ছে পানি সিঙ্গারার চাষ। সুস্বাদু এ ফলটি বাজারজাতকরণ খুবই সহজ। জলাবদ্ধ এলাকায় পতিত জমিতে খুব সহজেই চাষ করা যায় এ ফলটি। অল্প খরচ করে উৎপাদন বেশি। লাভজনক হওয়ায় পানিফল সিঙ্গারা চাষে ঝুঁকছে এখানকার চাষীরা। ‘সিঙ্গারা’ অনেকই চিনেন ‘পানিফল’ হিসেবে। এর একমাত্র কারণ এটি কেবল হাঁটু বা কোমর পানিতেই জন্মায়। দেখতে খানিকটা বাজারে তৈরি সিঙ্গারার মতো হওয়ায় অনেকেই সিঙ্গারা বলেও চিনেন।

তাছাড়াও এফলের নানা জায়গায় নানা নাম রয়েছে। ওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট, ডেভিল পড ইত্যাদি। আবার ইংরাজিতে একে ওয়াটার চেস্টনাটও বলা হয়। এরও বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’। স্বল্প সময়ের জন্য জমি পতিত না রেখে সিঙ্গারা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, পতিত জমিতে পানিফল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এ ফলের পুষ্টিরমানও অনেক বেশি।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার পতিত জমিতে এই পানিফলের চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে এখানকার কৃষকেরা। প্রতিবছর বোরো ধান কাটার পর, খাল-বিল-ডোবায় জমে থাকা পানিতে প্রথমে এই ফলের লতা রোপণ করা হয়। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে গাছে। এ ফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। প্রতি বিঘা জমি চাষে ৯/১০ হাজার টাকা খরচ করে ৩৫/৪০ হাজার টাকা লাভ করে চাষিরা। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় ৩৭ হেক্টর পতিত জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। প্রথমে দাম ছিলো ৫০/৬০ টাকা কেজিতে। এখন একটু কমে গেছে। এদিকে ডোবা আর বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছে এই উপজেলার অনেক হতদরিদ্র কৃষক। অল্পপুঁজি ব্যয় করে পানিফল চাষের মাধ্যমে দু’পয়সা বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে প্রায় শতাধিক পরিবার। কলারোয়ায় উপজেলায় পতিত জমিতে পানিফলের চাষের বেশ সাফল্য অর্জন করেছে পানিফল চাষিরা। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এই পানিফল চাষে অনেক আগ্রহী হচ্ছেন।

এ উপজেলায় পানিফল উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় অন্যান্য উপজেলার চাষিরা অনুপ্রাণিত হয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি শিখে তাদের পতিত জমিতে চাষ শুরু করছেন। এটি একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ পানিফল। এই ফলের গাছটি ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানির নীচে মাটিতে এর শিকড় থাকে এবং পানির উপর পাতা গুলি ভাসতে থাকে। আশ্চর্য বিষয় হলো-এই গাছে ফুল ফোটে ভোর বেলায়, পানির উপর ভাসতে দেখা যায়। কিন্তু ফুল ফোটার কিছুক্ষণ পরে সেই ফুল পানির নিচে চলে যায়। আর সেখানেই পানি ফলে পরিণত হয়। পানি ফল চাষী হাসান ও রেজাউল ইসলাম বলেন, ১৩বছর ধরে তারা কলারোয়ার গোপিনাথপুরে পতিত ও জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে আসছেন। পানি ফলে সার কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য ফসলের থেকে এর পরিচর্যাও কম। অল্পপুঁজি ব্যয় করে লাভ বেশী। খেতেও সুস্বাদু। এ বছর তাদের ৬বিঘা জমিতে পানিফল চাষের খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এতিমধ্যে পানি ফল বিক্রয় হয়েছে- ১লাখ ৪০হাজার টাকায়। আশা করছি এবার ৬বিঘা জমিতে ১লাখ ৮০ হাজার টাকার ফল বিক্রয় হবে। আষাড় মাসে পানি ফলের চাষ শুরু হয়। এর তিন মাস পরে গাছে ফল আসে। এই ফল পৌষ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিক্রয় করা যায়। তারা আরো বলেন-অন্যান্য ফসলের থেকে লাভও দ্বিগুণ পাচ্ছি।

এই ফল চাষে বর্তমানে আমাদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের কলারোয়ায় বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছে অনেক হতদরিদ্র মানুষ। পানিফল যেমন শরীরের জন্য বেশ উপকারি। খেতেও সুস্বাদু। এই ফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে। পানি সিঙ্গারা চাষী ওয়াজেদ, মাজেদ, শিল্পি, একুব্বার, শফিকুল, মুনসুর আলী, নাজির গাজী, শামসুর রহমান, আঃ রউফ, রফিকুল ইসলাম, সোহাগ, আবুল, নুর ইসলাম, তৌহিদ, পফ্ফার, মোস্ত, আঞ্জুর জানান, সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সহায়তা পেলে আরো অনেক মানুষ পানিফল চাষ করবে। এতে একদিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে। কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পানিফল কৃষিতে নতুন এক সম্ভাবনাময় ফসল। আমাদের কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যে কোন পতিত খাল, পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে চাষ করা সম্ভব। তুলনামূলক এর উৎপাদন খরচ কম। চলিত বছরের প্রায় ৩৭ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। আগামী বছর আরো বেশি জমিতে চাষ হবে বলে তিনি মনে করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)