শ্যামনগরের রমজাননগরে আগামী ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আলোচনাকে ঘিরে সমালোচনা
আশিকুজ্জামান লিমন:
কে হবে রমজাননগর ইউনিয়নের নৌকার মাঝি? এই নিয়ে শুরু হয়েছে
নানা কল্পকাহিনী। যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন ফেসবুকে নানা রকমের
পোস্ট ঘোরাঘুরি করছে এই ইউনিয়নের নৌকা প্রত্যাশীদের পূর্বের
ইতিহাস নিয়ে। গত ২০১৬ সালে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন রমজাননগর
ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করেছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের
সভাপতি ফজলুল হক মোড়ল এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-
সভাপতি শেখ আল-মামুন তার প্রতিদ্বন্দী অর্থাৎ বিদ্রোহী প্রার্থী
হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ
৯টি ওয়ার্ডে ইউপি নির্বাচনে ফজলুল হক মোড়ল নৌকা প্রতীক নিয়ে
১৯৪০ ভোট পেয়েছিলেন, শেখ আল-মামুন বিদ্রোহী হিসাবে ঘোড়া
প্রতিক নিয়ে ৪৩৭৬ ভোট পেয়েছিলেন, আকবর আলী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে
৪৩৪৩ ভোট পেয়েছিলেন, রাশিদুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস
প্রতীক নিয়ে ২৯৭০ ভোট পেয়েছিলেন, আশরাফুল হাসান লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে
২২০ ভোট পেয়ে ভোট সম্পন্ন হলেও ৪ নং ওয়ার্ডের ভোট গননা নিয়ে
ধানের শীষের প্রার্থী এবং সে সময়কার চেয়ারম্যান আকবার আলীর সাথে
তুমুল গোলযোগের সৃষ্টি হয়। এতে করে সে সময়ে ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগের সভাপতি ফজলুল হক মোড়ল তার হার নিশ্চিত দেখে তিনি ও
ইউনিয়নের সকল নেতা কর্মীরা মিলিত হয়ে ঘোড়া প্রতীকের বিদ্রোহী
প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ আল-
মামুনকে জিতানোর জন্য উঠেপড়ে লাগেন। ইউনিয়ন ভোট নিয়ে বিজ্ঞ
আদালতে একটি মামলার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ ১ বছর পর ১৭ সালে এপ্রিলে বিজ্ঞ
আদালত মামলার রাঁয়ে শেখ আল-মামুনকে নির্বাচিত ঘোষণা দেন। পরবর্তী
কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশের সকল বিদ্রোহী
প্রার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার করেন। পরে সকলে মিলে শোকেসের উত্তর দিলে
ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন কেন্দ্রীয় কমিটি।
আগামী ইউপি নির্বাচনে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের নির্দেশে
গত ২৮ অক্টোবর ২০২১ তারিখ বিকাল ৪ টায় ভেটখালী বাজারে ইউনিয়ন
আওয়ামী লীগের অফিসে এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় দলীয়
প্রতীক নৌকা পেতে ৫ জন আবেদন করেন। রমজাননগর ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ হায়াত
আলী, রমজাননগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বর্তমান
চেয়ারম্যান শেখ আল মামুন, কেন্দ্র ছাত্রলীগে সবেক সদস্য শাহিনুর রহমান,ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি
সদস্য জি এম আনারুল হাসান, ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি মনিন্দ্র
মিস্ত্রী। সভায় যারা মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন, তাদের আবেদন
উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হবে
মর্মে রেজুলেশন করে, সভায় সকল ওয়ার্ডের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক সহ
দলীয় নেতা কর্মীদের উপস্থিত সকলে সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে রেজুলেশন বই এ
স্বাক্ষর করা হয়। কিন্তু সাবেক দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী চেয়ারম্যান শেখ আল
মামুনকে বাদ দিয়ে উপজেলায় মনোনয়ন প্রত্যাশীর কাগজ প্রেরণ করেন
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। শুরু হয়ে যায় নানা বিতর্ক। সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয় নানা কাঁদা ছোড়াছুড়ি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চেয়ারম্যান শেখ আল-
মামুন বলেন, কেন্দ্রের নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্রোহী প্রার্থীকে মনোনয়ন
প্রত্যাশীতে নাম দেওয়া যাবে না এমন কোন নির্দেশনা নেই। আর বর্তমান
ইউনিয়নের প্রেক্ষাপটে বিএনপির প্রার্থীকে জিতানোর জন্য একটা ষড়যন্ত্র
করছে সবাই মিলে।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৬নং ইউপি সদস্য মোঃ হায়াত
আলী বলেন, ১৯৭১ সালে আমার বয়স তখন ৭ বছর ছিলো। আমি জানি না
আমার পিতা যুদ্ধবিরোধী কি? না! তবে যে তালিকাতে দেখা যাচ্ছে বা
দেখতে পাচ্ছি তা বিভিন্ন ক্রমিকে। আমার মনে হয় ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আনারুল
হাসান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা প্রতীক দিলে আমি
বিজয়ী হয়ে ইউনিয়নকে ডিজিটাল রুপে রুপান্তরিত করবো। আর যদি
নৌকা প্রতীক না দেন তবে অবশ্যই নৌকা প্রতীক প্রার্থীর সাথে কাজ
করবো ৷
সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য শাহিনূর রহমান শাহিন বলেন, মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা প্রতীক দিলে আমি বিজয়ী হয়ে ইউনিয়নকে
ডিজিটাল রুপে রুপান্তরিত করবো। আর যদি নৌকা প্রতীক না দেন তবে
অবশ্যই নৌকা প্রতীক প্রার্থীর সাথে কাজ করবো।
ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি মনিন্দ্রনাথ মিস্ত্রি বলেন, মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা প্রতীক দিলে আমি বিজয়ী হয়ে ইউনিয়নকে
ডিজিটাল রুপে রুপান্তরিত করবো। আর যদি নৌকা প্রতীক না দেন তবে
অবশ্যই নৌকা প্রতীক প্রার্থীকে নিয়ে কাজ করবো।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক মোড়ল বলেন, চেয়ারম্যান শেখ
আল মামুন একজন বিদ্রোহী প্রার্থী। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার
নাম উপরের পেইজে দেওয়া হয়নি। তবে পেইজের ভিতরে বিদ্রোহী প্রার্থী
উল্লেখ করে তার নাম দেওয়া হয়েছে। মানবিক দৃষ্টিতে গত নির্বাচনে
তাকে সহার্য্যের কথা শিকার করেন। আর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ
সম্পাদক মোঃ হায়াত আলীর পিতা যুদ্ধবিরোধী থাকলেও সে ২০ বছর ধরে
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে।উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলন বলেন,
ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা কমিটির মাধ্যমে নৌকা প্রত্যাশী ও তাদের তথ্য
কেন্দ্রে প্রেরণ করতে হবে মর্মে আমাদের কাছে নির্দেশনা এসেছে।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কোন নির্দেশনা উপজেলা থেকে দেওয়া হয়নি যে,
বিদ্রোহী বা যুদ্ধবিরোধীদের নাম পাঠানো যাবে না। প্রত্যাশীদের
অংশগ্রহণের তালিকা এবং তাদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। মনোনয়ন
দেওয়ার সিদ্ধান্ত একমাত্র কেন্দ্রীয় নেতাদের। আমরা শুধু তাদের নামের তালিকা
পাঠিয়ে তাতে তাদের তথ্য পাঠিয়ে দেবো। আর রমজাননগর ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগের যে কাগজ উপজেলায় পাঠিয়েছেন সেই কাগজে বাংলাদেশ ও
আওয়ামীলীগ লেখা ভুল এবং বিকৃত “বাংলাদশ আওয়মীলীগ” । জেলা
আওয়ামীলীগের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।
রমজাননগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে
সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক
নেতাকর্মীরা ও এলাকায় সকল সচেতন মহল জানিয়েছেন, যারা মনোনয়ন
প্রত্যাশী তার মধ্যে ১ নং মনোনয়ন প্রত্যাশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের
সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মোঃ হায়াত আলী ২০ বছর ধরে ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সক্রিয় থাকলেও তার পিতা মৃত
হাতেম গাজী ১৯৭১ সালে একজন যুদ্ধবিদ্রোহী ছিলেন। যা উপজেলা
মুক্তিযোদ্ধা অফিসে রয়েছে। তবে তার জনসমার্থন নেই। ২ নং মনোনয়ন
প্রত্যাশী শাহিনূর আলম শাহিন দলের একজন কেন্দ্রীয় তুখোড় নেতা হলেও তার
জনসমার্থন নেই। ৩ নং মনোনয়ন প্রত্যাশী আনারুল হাসান আওয়ামীলীগের
সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য হওয়ায় তার বেশ জনসমার্থন রয়েছে। ৪
নং মনোনয়ন প্রত্যাশী মনিন্দ্র মিস্ত্রি ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি হলেও
তার জনসমার্থন নেই। শেখ ইউনিয়ন শেখ আল-মামুন সিনিয়র সহ-
সভাপতি ও চেয়ারম্যান হলেও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী কিন্তু তার জনসমার্থন
রয়েছে। তবে কে হবে রমজাননগর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের নৌকার মাঝি?
এই নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে একটা উত্তেজনা বিরাজ করছে। দক্ষ ব্যক্তিই
ছাড়া কি নৌকা পবে ? বিগত নির্বাচনে রমজাননগর ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগের ভরাডুবির ক্ষত এখনো মেনে নিতে পারিনি ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। আবার নতুন করে বিগত নির্বাচনের মত আর
যেন না ঘটে এমন দাবী সকল আওয়ামীপ্রেমীদের।