ভাঁতশালা হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকটি পদে নিয়োগ বানিজ্য, প্রতিবাদে মানববন্ধন
দেবহাটা প্রতিনিধি:
প্রায় ২০ লাখ টাকা বানিজ্যের মধ্যদিয়ে দেবহাটা উপজেলার সীমান্তবর্তী ভাঁতশালা সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ একাধিক ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারি পদে অযোগ্যদের নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল জলিল বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মধূসুদন দত্ত ওরফে গদাই। বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টায় ভাঁতশালা বাজারে এক মানববন্ধনে এমন অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা। মানববন্ধনে বক্তৃতাকালে ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য আনিছুর রহমান, সাবেক প্রধান শিক্ষক আকবর বিশ্বাস, সাবেক সদস্য বাবলু বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ নেতা শরিফ বিশ্বাস, ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল, বজলুর রহমান সহ অন্যান্যরা তাদের বক্তব্যে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টির উন্নয়নে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে জরাজীর্ন বিদ্যালয়টিতে নতুন ভবন নির্মানও শেষ হয়েছে। অথচ ওই বিদ্যালয়ে সভাপতি পদে থাকা ভাঁতশালা গ্রামের প্রভাবশালী আব্দুল জলিল বিশ্বাস বিভিন্ন সময়ে মোটা টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ব্যাক্তিদের ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয়টিতে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ইতোপূর্বে ২০১২ সালে স্কুলের সভাপতি জলিল বিশ্বাস ও তৎকালিন প্রধান শিক্ষক কারিমুল্লাহ মিলে সহকারী শিক্ষক পদে জলিল বিশ্বাসের পছন্দের ৮জন অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
পরে সেই টাকার হিসাব না দেয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা আন্দোলন শুরু করলে বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের নামে কিছু জমি লিখে দিয়ে আজীবন সদস্য পদ হাতিয়ে নেন দূর্নীতিবাজ সভাপতি জলিল বিশ্বাস।
সেসময়ে সভাপতি জলিল বিশ্বাসকে সন্তুষ্ট করে সহকারী শিক্ষকপদে নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঘলঘলিয়ার মনিরের স্ত্রী শিরিনা। টাউনশ্রীপুর শ্বরচ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে একাধিকবার পরীক্ষা দিয়ে অযোগ্য প্রমানিত হওয়া শিরিনা তখন রাতারাতি জলিল বিশ্বাসের হাত ধরে যোগ্য বনে গিয়ে নিয়োগ পান ভাঁতশালা স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা পদে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান শিক্ষক কারিমুল্যাহ অবসর জণিত কারনে বিদ্যালয় থেকে বিদায় নিলে সভাপতি জলিল বিশ্বাস তার পছন্দের শিরিনাকে সহকারী প্রধান শিক্ষক মনোনীত করেন। শুরু হয় নতুন প্রধান শিক্ষক সহ চতুর্থ শ্রেনীর আরো চারজন কর্মচারী নিয়োগের তোড়জোড়। চলতি বছরের ১৫ আগষ্ট সরকারি ছুটির দিনে সভাপতি জলিল বিশ্বাসের কথামতো সরকারি নিয়ম বর্হিভূতভাবে দুটি নামসর্বস্ব পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করান তারই সহচর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মধূসুদন দত্ত ওরফে গদাই। ছুটির দিনে প্রকাশি নাম সর্বস্ব প্রত্রিকার ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন রেখে এবার কয়েক লক্ষ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ওই বিতর্কিত সহকারী শিক্ষিকা শিরিনাকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সভাপতি জলিল বিশ্বাস। তিনি কৌশলে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ থেকে শিরিনাকে সরিয়ে ফের প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করিয়ে দেনদরবার শুরু করেছেন। একইসাথে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শূন্য পদ গুলোতে একাধিক যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করলেও, সহকারী শিক্ষিকা শিরিনাকে প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য পদে তার পছন্দের অযোগ্য ব্যাক্তিদের নিয়োগ দিতে ইতোমধ্যেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। এঘটনায় ওই বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য আনিসুর রহমান বাদী হয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলে সম্প্রতি তা সরেজমিনে তদন্ত করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে অদ্যবধি এসব বিতর্কিত ও অযোগ্য ব্যাক্তিদের নিয়োগ দিতে সবধরনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল জলিল বিশ্বাস। তারা মানববন্ধনে এঘটনার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি বিদ্যালয়টি রক্ষায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের, শিক্ষা অফিসারের উপস্থিতিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সম্পন্নের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে দাবী জানিয়েছেন।