সুন্দরবনে বিজিবি’র ভাসমান বিওপি স্থাপনের উদ্যোগ
উপকূলীয় সাগরপথে চোরাচালান ঠেকাতে সুন্দরবনে নদী ও খালে আরও ভাসমান বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বিজিবি। প্রতিবেশী দেশ থেকে চোরাকারবারিরা ওই রুট দিয়ে ইয়াবা, আইসসহ নানা ধরনের মাদক পাচার করে নিয়ে আসছে বাংলাদেশে। টেকনাফে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধিক নজরদারির কারণে সুন্দরবনের উপকূলীয় রুট ব্যবহার করছে তারা। চক্রটি উপকূলীয় সুন্দরবনের বনদস্যুদের একটি অংশকে পাচারের কাজে লাগাচ্ছে।
র্যাব’র অব্যাহত অভিযানের ফলে বনদস্যুরা এখন কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। তবে দস্যুদের একটি অংশ মাছ ধরার কাজে বনের মধ্যে গিয়ে নিয়োজিত হচ্ছে মাদক পাচারের কাজে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও বাগেরহাটের করমজল রুটকে ব্যবহার করছে বেশি।
বিজিবি সূত্র বলছে, উপকূলীয় এলাকা দিয়ে পাচারকারীরা মাদক দেশে নিয়ে আসছে। তবে টহল বাড়ানোর কারণে তারা আগের মতো আর বেশি সক্রিয় নেই।
এরমধ্যেও কিছু মাদক ব্যবসায়ী দস্যুদের একটি অংশকে ব্যবহার করে দেশে মাদক নিয়ে আসছে। সুন্দরবনের কাছিকাটা সীমান্তে ইতোপূর্বে একপি ভাসমান বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। পরে আরো একটি বিওপি নির্মাণ করা হলে পূর্ণভাবে ওই রুটে মাদকসহ নানা পণ্যের চোরাচালান ঠেকানো যাবে। এছাড়াও ভাসমান বিওপি থেকে বাংলাদেশের বিজিবি ভারতের বিএসএফ’র সঙ্গে তথ্যবিনিময় করে পাচার ঠেকাতে একসঙ্গে কাজ করবে।
এ বিষয়ে বিজিবি’র পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল মো. ফয়জুর রহমান গতকাল জানান, ‘সুন্দরবন এলাকায় চোরাচালানরোধে কাজ করছে বিজিবি। আমরা চোরাচালান শূন্যের কোঠায় আনার চেষ্টা করছি।’
সূত্র জানায়, টেকনাফ রুটের মাদক ব্যবসায়ীরা এখন উপকূলীয় রুটকে বেঁছে নিয়েছে। তারা সুন্দরবনের নদী ও খাল দিয়ে নিয়ে আসছে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য। পাচারকারীরা সুন্দরবনের নদী ও খাল দিয়ে যেসব মালবাহী ছোট ছোট জাহাজ ও নৌকা চলাচল করে সেগুলোতে করে নিয়ে আসছে মাদকদ্রব্য। ওই রুটগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি বাড়িয়েছে। পাচারকারীরা বনদস্যুদের একটি গ্রুপকে তাদের পাচারের কাজে লাগচ্ছে। বনদস্যুর জীবন ত্যাগ করে যারা অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে এসেছেন তাদের মধ্যে কিছু লোককে তারা পাচারের কাজে ব্যবহার করছেন।
কেউ সরাসরি পাচারের কাজে নিয়োজিত হচ্ছে, আবার কেউ সরজমিনে তথ্য দিয়ে মাদক কারবারিদের পাচারে সহযোগিতা করছে। এদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও যারা সুন্দরবনের নদীতে ও খালে মাছ ধরতে যায় তাদের কিছু অংশ জেলে সম্প্রদায় মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এর বিনিময়ে তারা পাচ্ছেন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা। অনেকেই মাছ ধরা বাদে পুরো সময় মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। ওইসব মাদক উপকূল দিয়ে ঢুকে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় হাত বদল হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে দেশের এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
সূত্র জানায়, মাদকের যারা পাইকারী ব্যবসায়ী তারা টেকনাফের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা লগ্নি করতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ ওই এলাকায় নজরদারি বাড়ার কারণে মাদক নিয়ে চোরাকারবারিরা ভয় পাচ্ছেন। কোনো কোনো মাদক কারবারি পুলিশের হাতে ধরাও পড়ছেন। তারা এখন দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় রুট দিয়ে যারা মাদক নিয়ে আসছে তাদের বেশি কদর দিচ্ছেন। কেউ কেউ অগ্রিম টাকা দেয়ার কারণে মাদক চোরাকারবারিরা ওই রুট দিয়ে বেশি পরিমাণের মাদক দেশে নিয়ে আসছে। সুন্দরবনের সীমান্তে বিজিবি’র ভাসমান বিওপি নির্মাণ হলে টহল বাড়বে বিজিবি’র। এতে সেখানে নৌ পথগুলোতে আরও বেশি নজরদারি বাড়ছে। ফলে মাদক চোরাচালানের মাত্রা কমে আসবে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
বিজিবি সূত্র জানায়, যেসব বিজিবি সদস্য সুন্দরবনের ভাসমান বিওপিতে ডিউটি করবেন তারা রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি করবেন। এছাড়াও নৌকা ও স্পিড বোট দিয়ে সেখানে টহল বাড়াবেন। কোনো নৌকা বা জেলেকে সন্দেহ হলে তারা তল্লাশি চালাবেন। এছাড়াও নৌ-রুটে অবৈধভাবে পাশের দেশ থেকে কোনো নৌ-পরিবহন অবৈধভাবে দেশে ঢুকলো কি না সেইদিকেও তারা নজরদারি করবেন।