সাতক্ষীরা শহরের নিউ মার্কেট মোড় সংলগ্ন আলোচিত সরকারি জমির মামলায় সরকারের পক্ষে রায় দিল আদালত!
আসাদুজ্জামানঃ
সাতক্ষীরা শহরের নিউ মার্কেট মোড় সংলগ্ন আলোচিত কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমির মামলায় দীর্ঘ ১০ বছর পর অবশেষে দুই
দফা শুনানির পর বাদীর মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। সাতক্ষীরা সদর সহকারী
জজ আদালত এর বিচারক নাসিরউদ্দিন ফারাজী ১৮ অক্টোবর বিকাল ৩টায় এ রায়
ঘোষণা করেন।
জেলার আলোচিত এই মামলার বাদী এবং আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে এই রায়
ঘোষণার জন্য গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত দিন ধার্য হলেও সেদিন রায় ঘোষিত
হয়নি। পরবর্তীতে ১৮ অক্টোবর নতুন দিন ধার্য করে আদালত। সে অনুযায়ী ১৮
অক্টোবর সোমবার এ রায় ঘোষণা করা হয়।
জানা যায়, সরকারি ওই সম্পত্তি প্রাপ্তির জন্য জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা
প্রশাসক (রাজস্ব), সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদর সহকারী (ভূমি)
কমিশনার ও সদর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে বিবাদী করে
সদর সহকারী জজ আদালতে ২০১১ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি মামলা করেন শহরের মৃত.
ছোবহান খানের ছেলে সাবেক যুবদল নেতা নাসিম ফারুক খান মিঠু। যার মামলা
নং-৫৮/১১।
মামলার নথি ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, পলাশপোল মৌজার ১০৮৭ খতিয়ানের
১১৪৬৬ দাগের .৫ শতক জমির রেকর্ডীয় মালিক উপন্দ্রেনাথ দত্ত। তিনি ১৯৬৫ সালে
পাক-ভারত যুদ্ধের সময় স্ব-পরিবারে ভারতে চলে যান। এরপরতিনি আর কখনো
প্রত্যাবর্তন করেননি। তৎপ্রেক্ষিতে সঠিক বিচারে তৎকালীন আইন মতে
সম্পত্তিটি শত্রæ সম্পত্তি হিসেবে পরিণত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুলক্রমে তা
হয়নি। এস এ এন্ড টি এ্যাক্টের ৯২-ক ধারামতে উক্ত সম্পত্তি পরিত্যক্ত হিসেবে
বিবিধ মামলামূলে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিলো। কিন্তু তা না হয়ে
১৯৬৯-৭০ সালে ৪৯০৩ নং সার্টিফিকেট কেসের নামে একটি ভূয়া কেসের
রেফারেন্সে জমিটি অন্যায়ভাবে রসুলপুরের মৃত. আব্দুল জব্বার খানের স্ত্রী ছাবেরা
খানম দখলের পায়তারা করেন।
মামলার নথি ও ঘটনার বিবরণে আরও জানা যায়, রহস্যময়ভাবে ছাবেরা খানম ১৯৭৬-
৭৭ সালে ঐ সম্পত্তি নীলামে ক্রয় করেন। পরবর্তীকালে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করেন
নি। বরং ২০০৫/২০০৬ সালের দিকে বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করেন এবং
ছাবেরা খানম হতে সরকারি ওই সম্পত্তি নাসিম ফারুক খান মিঠু ক্রয় করেন।
এরপরে ওই সম্পত্তি নিজ অনুকূলে রাখতে তিনি ইতিপূর্বে ২ টি মামলা দায়ের
করেন। যার নং- ৯৮/২০০৭, ১৪৯/০৯। এরমধ্যে ২টির আদেশ সরকারের পক্ষে। এরপরে ঐ রায়ের
বিপরীতে ২বার আফিলও করেন মিঠু খান। তবে সেই রায়ও সরকারের পক্ষে দেয় সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তা।এ বিষয়ে ২০০৭ সালের ৯ আগস্ট নিঃঅঃ/সাতঃসদর/৫-২/২০০৭ নম্বর স্মারকে তৎকালীন
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এইচ.এম আব্দুল করিম তার এক লিখিত
প্রতিবেদনে পলাশপোল মৌজার এস এ ১০৮৭ নং খতিয়ানের ১১৪৬৬ দাগের ০.৫ শতক
সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার পূর্বক প্রয়োজনীয় সদয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত
জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাতক্ষীরাকে অনুরোধ করেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি
উল্লেখ করেছিলেন তর্কিত সম্পত্তিটি বর্তমান মাঠ জরীপ রেকর্ডে ১/১ নং
খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী বিবাদী পক্ষের প্রভাবের ফলে ৩০ ধারায়
উভয় পক্ষের শুনানী অন্তে বিবাদী নাসিম ফারুক খান মিঠুর নামে রেকর্ড করা হয়
মর্মে জানা যায়। এমতাবস্থায় সার্বিক বিবেচনান্তে তর্কিত সম্পত্তিতে
সরকারি স্বার্থ আছে বিধায় তা রক্ষার্থে তথাকথিত ৪৯০৩/৬৯-৭০ নিলাম কেসের
অস্তিত্ব না থাকায় ইহার রেফারেন্সে গৃহীত নীলাম কার্যক্রম তথা নীলাম ক্রয়কে
অবৈধ বা বাতিল ঘোষণা করা, উক্ত সরকারী সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসাবে ১ নং
খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং ৭০০২ ডিপি খতিয়ান বাতিল করার জন্য
সংশ্লিষ্ট অফিসারকে নির্দেশ প্রদান বা অনুরোধ করা, উপজেলা ভূমি অফিস,
সাতক্ষীরা সদরের তথাকথিত ২৮৩/১৯৭৬-৭৭ নং নাম পত্তন মামলার আদেশ এবং
পরবর্তীতে দায়েরকৃত মিস ২৪/০৬-০৭ নং মামলার আদেশ বাতিল করার প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহণ করে রেকর্ড সংশোধন করা এবং সরকারি স্বার্থ বিরোধী পুরো
প্রক্রিয়ার সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ঘটনাটি সম্পর্কে সরকারি কৌশুলী (জিপি) শম্ভু নাথ সিংহ জানান, দীর্ঘ ১০
বছর পর সাতক্ষীরার নিউ মার্কেট মোড় সংলগ্ন আলোচিত কয়েক কোটি টাকা
মূল্যের সরকারি জমির মামলায় রায় সরকারের পক্ষে প্রদান করেছে আদালত। ইতিপূর্বে
৪টি আদেশ সরকারের অনুকূলে রয়েছে বলে তিনি আরো জানান।