কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন।
রঘুনাথ খাঁ:
কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালি, সিলটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পবিত্র কোরান শরীফ অবমাননার অভিযোগে যেভাবে দুর্গা মন্দির, প্রতিমা ও প্যাণ্ডেলসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে তার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূজা উদযাপন পরিষদ ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার যৌথ আয়োজনে বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদের সাতক্ষীরা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি বিশ^জিৎ সাধু, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ^নাথ ঘোষ, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: সুশান্ত ঘোষ, ঐক্যপরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এড. সোমনাথ ব্যানার্জী, সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, সাতক্ষীরা ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ পরম পুরুষ কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, জেলা মন্দির সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঘুজিৎ গুহ, স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব দত্ত, সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা অধ্যক্ষ শিব পদ গাইন, ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অসীম দাশ সোনা, ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক বাসুদেব সিংহ, জেলা মন্দির সমিতির সহ-সম্পাদক বিকাশ চন্দ্র দাস, সমীর বসু, সনাতন ধর্মীয় যুব সংগঠনের সভাপতি ডা: সুব্রত ঘোষ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাতক্ষীরা শাখার সাধারণ সম্পাদক জোৎ¯œা দত্ত, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের মিলন কুমার রায়, ছাত্র ঐক্য পরিষদের আহবায়ক সুজন বিশ^াস প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দুর্গাপুজা চলাকালিন কুমিল্লার নান্নুর দীঘির পাড় মন্দিরের দুর্গা প্রতিমার পাশে থাকা মাটির তৈরি হনুমানের উরুর উপরে পরিকল্পিতভাবে রেখে দেওয়া একটি কোরআনকে নিয়ে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালি, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে মন্দির, প্রতিমা, হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙচুর, শতাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন ও পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে তা কোন স্বাধীন দেশের সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না। অথচ বাংলাদেশ থেকে হিন্দু শূন্য করার পরিকল্পিত চক্রান্ত হিসেবে কোরান অববমাননার দোহাই দিয়ে একটি মুসলিম মৌলবাদি গোষ্ঠী বর্বোরচিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। এমনকি বিজয়া দশমীর দিন শুক্রবার পড়ায় জুম্মার নামাজের পর চট্ট্রগাম ও নোয়াখালির বেগমগঞ্জে আটটি মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় যতন সাহা নামের একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপরও ফেইসবুকে যেভাবে এসব ঘটনার মিথ্যাচার করা হচ্ছে তাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যথাযথ তদন্ত না করেই ভোলার পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতিকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রসরাজের বাড়িসহ এলাকার সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হলেও তদন্তে রসরাজ এর পরিবর্তে জাহাঙ্গীর হোসেন নামের একজন জড়িত বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া সুনামগঞ্জে হেফাজত নেতা মোমিনুল হকের বক্তব্যকে ঘিরে সমালোচনা করে ফেইসবুকে স্টাটাস দেওয়ায় ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ঝুড়ন দাসকে ছয় মাস জেল খাটতে হয়েছে। হেফাজত নেতা কর্মীরা ওই এলাকার হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে। এ সবের পিছনে জড়িতদের অনেকেই রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আশাশুনির প্রতাপনগর, দেবহাটার টিকেট, সদরের বাবুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ইতিপূর্বে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় দোষীরা শাস্তি না পাওয়ায় হামলাকারিরা আজো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বক্তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্সা আইন বাস্তবায়ন ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা নিষ্পত্তি করার আবেদন জানান।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিত্যনন্দ আমীন।