কালিগঞ্জে সৎ বাবার ছুড়া পেট্রোলের অগুনে পুড়ে যাওয়া শিশু নাজমুল অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে
নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে সৎ বাবার ছুড়া পেট্রোলের অগুনে সমস্ত শরীর পুড়ে যাওয়া তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র নাজমুল অবশেষে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু সাথে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেছে। বুধবার ভোর রাত একটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। যদিও পাশের শয্যায় তার নানী ফতেমা খাতুন এখনও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার কাজলা গ্রামের আব্দুস সাত্তার সরদার জানান, প্রথম স্বামীর সঙ্গে তালাক হওয়ার পর এক মাত্র ছেলে নাজমুলকে নিয়ে তার মেয়ে নাজমা তার বাড়িতে ওঠেন। এরপর নাতি নাজমুলকে তার বাড়ির পাশে ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করেন তিনি। বছর খানেক আগে তার ছেলে শরিফুল ও মেয়ে নাজমা তারা দুই ভাই বোন এক সঙ্গে ভারতের তামিলনাড়–তে কাজ করতে যায়। সেখান থেকে বাড়িতে আসার পর খালাত ভাই কালীগঞ্জের ভাঙানমারির ৮০ বিঘার বাসিন্দা সবুজ গাতিদারের সঙ্গে বিয়ে হয় নাজমার। বিয়ের এক সপ্তাহ পর নাজমাকে নিয়ে রাজবাড়িতে একটি কারখানায় কাজে লাগিয়ে দেয় সবুজ। সেখানে পারিবারিক কলহের জেরে নাজমাকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাড়ি আসে নাজমা। এরপর আগষ্ট মাসের শেষের দিকে নাজমা সবুজকে তালাক দিয়ে নলতার এক ব্যাক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করে। পনে ভাষা শিক্ষার জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় যায় নাজমা।
আব্দুস সাত্তার সরদার আরো বলেন, তিনি অন্যের ঘেরের বাসায় নৈশ প্রহরীর কাজ করায় সবুজ ও তার পরিবারের সদস্যরা গত শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে দ’ুটোর দিকে তাদের বাড়ির দরজায় ছিকল তুলে দিয়ে জানালা দিয়ে পেট্রোল ছিটিয়ে ঘরে আগুণ লাগিয়ে দেয়। আগুনে স্ত্রী ফাতেমা ৭৫ শতাংশ ও নাতি ৯৫ শতাংশ নাজমুল পুড়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর রাতে নাজমুল মারা যায়। তবে তার স্ত্রী ফতেমা খাতুনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের কর্তর্যরত চিকিৎসক ডাঃ তৌফিক আহম্মেদ বলেন, নাজমুলের শরীরের ৯৫ শতাংশ ও ফাতেমার ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে পেট্রোলের আগুণে। নাজমুল মারা গেলেও তার নানীকে বাঁচানো যাবে কিনা তা এখনও বলা যাবে না।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে নাজমুলের মরদেহ বাড়িতে আনা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃত সবুজ গাতিদারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার ধারা সংযোজনের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।