দেবহাটার খলিশাখালির ভূমিহীনদের বসত ঘরে আগুন
রঘুনাথ খাঁ:
সাতক্ষীরার দেবহাটার খলিশাখালিতে বসবাসরত ভূমিহীনদের নয়টি বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ ও চারটি ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে বাধা দেওয়ায় সাতজন ভূমিহীন নারীসহ ১০জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়ছে। বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে বৃহষ্পতিবার সকালে দেবহাটার খলিশাখালি ভূমিহীন জনপদে যেয়ে দেখা গেছে বদরতলা- গাজীরহাট সড়কের খলিশাখালি নামক স্থানে পাকা রাস্তার ধার দিয়ে ছোট ছোট খুপড়ি ঘরে শতাধিক ভূমিহীন পরিবারের বসবাস। এরমধ্যে খায়রুল ইসলাম, তার শালিকা মুনিয়া খাতুন, সবুজ সরদার, আব্বাস আলী, ফতেমা খাতুন, তাছলিমা খাতুন ও ফরিদুল ইসলামসহ নয়জনের বসতঘর আগুন দিয়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে ভাতের হাঁড়িতে। রাস্তার উপর পড়ে রয়েছে ভাত। পুড়ে গেছে ভূমিহীনদের ব্যান্যার ও ব্যানারে থাকা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি। এ ছাড়াও চারটি বসতঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলায় আহত ১০জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় খলিশাখালির পাঁচ শতাধিক ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
ভূমিহীন মোমেনা খাতুন জানান, বুধবার রাত ১০টার দিকে তিনি এক সন্তানকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত একটার দিকে মোটর সাইকেলের আওয়াজ পেয়ে তার ঘুম ভেঙে যায়। ডাক দেন পাশের ঘরে বসবাসকারি মুনিয়াকে। এর কিছুক্ষণ পর প্রথমে তিনটি মোটর সাইকেল নয়জনকে গাজীরহাটের দিক থেকে বদরতলার দিকে যেতে দেখেন। কিছুক্ষণ পর আরো সাতটি মোটর সাইকেলে ২১ জন তাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে তারা তার ও মুনিয়ার বসত ঘরে লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে বাড়ি দিতে থাকেন। এ সময় তারা চিৎকার করলে নজরুল, গোলাম কাজী, আনছার, আতিকুর , সালাম, আহসানউল্লাহ, রেজাউল ইসলামসহ কয়েকজন তাদের ঘর ভাঙচুর করে পেট্রোল দিয়ে আগুণ লাগিয়ে দেয়। লুটপাট করা হয় ঘরের মালামাল। ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় তাকে ও মুনিয়ার দু’ পা পিটিয়ে জখম করা হয়। তাদের হামলায় আহত হয় তার সাত বছরের সন্তানও।
আকলিমা খাতুন তার ঘরে আগুন দেওয়ার কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, যারা তাদেরকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে রাতে আঁধারে সেই গোলাম কাজী, সালাম, নজরুল, আনছার ও তাদের সন্ত্রাসীরা আবারো ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দিয়েছে। আগুনের ভয়ে ঘর থেকে বের হতেই মারপিট করা হয়েছে। কথিত জমির মালিক দাবিদার ও তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে পারেননি চিকিৎসা নিতে। যেতে পারেননি থানায়।
ভূমিহীন আব্বাস আলী ও ফতেমা খাতুন বলেন, ভূমিদস্যুরা শুধু তাদের বসত ঘরে আগুণ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। তারা বাসায় থাকা ভূমিহীনদের ব্যানার পুড়িয়ে দিয়েছে। পোড়ানোা হয়েছে ব্যানারে থাকা শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি। একইভাবে ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার পর আশ্রয়হীন হয়ে পড়া তাছলিমা খাতুন ও ফরিদুল ইসলাম ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলতে বলতে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, গরীব হওয়া অভিশাপ।
খলিশাখালি বিলে পাহারার দায়িত্বে থাকা ফেরাজতুল্লার ছেলে বাবলু জানান, ১০/১২ টি মোটর সাইকেলে আসা ডাঃ নজরুল, আনছার, কাজী গোলাম ওয়ারেশ, আনারুলসহ কয়েকজনকে মোটর সইেকেলে থাকা অবস্থায় টর্চের আলো জ্বালিয়ে চিনতে পারেন। এ সময় তারা মোটর সাইকেল থেকে নেমে পিঠে দু’টি লাঠির বাড়ি মেরে খুনের হুমকি দিয়ে চলে যায়। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যারা জমির মালিকানা দাবি করে তারা সকলেই বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আজ তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে গরীব ও অসহায় ভূমিহীনদের উপর হামলা চালাচ্ছে। তবে বাঁচার শেষ আশ্রয় টুকু তারা জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে রক্ষা করবেন।
তবে জানতে চাইলে গোলাম কাজী ও আব্দুস সালাম বলেন, তারা জবরদখলকারি ভূমিহীনদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। তারা আইনগত ভাবে তাদের মোকাবিলা করবেন। খুপড়ি ঘর পোড়ানোর গল্প বানিয়ে তাদেরকে বোকা বানানো যাবে না।
এ ব্যাপারে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ ওবায়দুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অবিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ ফেব্র“য়ারি খলিশাখালির ৪৯৯ একর জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশকে ঘিরে গত ১১ সেপ্টেম্বর ভূমিহীনরা ওই জমি সরকারি খাস জমি হিসেবে দাবি করে বসবাস শুরু করে। এ ঘটনায় ভুমির মালিক দাবিদাররা ভূমিহীনদের বিরুদ্ধে আদালতে দু’টি দ্রুত বিচার আইনসহ সাতটি মামলা করেছে।