এক রাতের বৃষ্টিতে ডুবলো সাতক্ষীরা
এক রাতের বৃষ্টিতে ফের ডুবলো সাতক্ষীরা। নিম্নচাপের প্রভাবে রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতের ভারি বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা জেলার নিমাঞ্চল ডুবে গেছে। জেলার আশাশুনি সদর, প্রতাপনগর, আনুলিয়া, বড়দল, শ্রীউলা, কুল্যা, বুধহাটা, কাদাকাটি, শোভনালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে।
আশাশুনির প্রতাপনগর ফাজিল মাদ্রাসা, প্রাইমারি স্কুলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে গেছে বলে জানান সাইদুল ইসলাম, মিলন বিশ্বাস, রুহুল আমিনসহ অনেকেই। ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন বলেন, নদীর বাঁধ ভেঙে এমনিতেই প্রতাপনগর জোয়ারে ডোবে, আর ভাটায় জাগে। গোনে গোনে গোটা ইউনিয়নে জোয়ার-ভাটা খেলে। এতে করে মানুষ চলে যাচ্ছে অন্যত্র। বাস্তুচ্যুত হচ্ছে হাজারো মানুষ।
এদিকে ভারি বর্ষণে সাতক্ষীরার ৩৩ বিজিবি ক্যাম্প, বিনেরপোতা ঋশিল্পী, বিসিক শিল্পনগর, আবহাওয়া অফিস পানিতে নিমজ্জিত।
সাতক্ষীরা পৌরসভার তিন ভাগের দুই ভাগ পানিতে ডুবে গেছে বলে দাবি করেছেন জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম-সচিব আলী নূর খান বাবুল। তিনি বলেন, পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের, ফসলি জমি ও পুকুর।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নলতা মোবারকনগর বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। নলতা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মোনায়েম বলেন, এক রাতের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নলতা হাইস্কুল, কেবি আহসানিয়া জুনিয়র স্কুল, নলতা শরীফের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও রাস্তাঘাট। তিনি আরো বলেন, পানি নিষ্কাশনের পথ দখল করে মাছের ঘের করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে পানিতে নিমজ্জিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কোন শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। কবে নাগাদ সম্ভব হবে তাও অনিশ্চিত।
সাতক্ষীরা নাগরিক নেতা এডঃ ফাহিমুল হক কিসলু জানান, পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানুষ বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে। রবিবার রাত থেকে টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে পৌরসভার ইটাগাছা, কামাননগর, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুটিরডাঙি ও কাটিয়া মাঠপাড়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।
তিনি আরো জানান, গুটিকয়েক লোক পৌরসভার মধ্যে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করার কারণে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
সদর উপজেলার ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙা ইউনিয়নের বিলগুলোতে সদ্য রোপা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি অপসারণের কোনো পথ না থাকায় বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খালও পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে।
এদিকে অতিবৃষ্টির ফলে শহরতলীর গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, মাছখোলার বিলসহ কমপক্ষে ১০টি বিলে পানি থই থই করছে। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে গেছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলোর পানি নদীতে যেতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার দিকে এগিয়ে আসছে। অতিবৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে, বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনিসহ জেলার সাতটি উপজেলা। সেখানে প্রধান রাস্তার ওপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির কারেণে সাতক্ষীরার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিম্ন এলাকায় মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে রোববার বিকাল ৩টা থেকে সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সামনে এমন বৃষ্টিপাতের আরো সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যকর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, ভারী বর্ষণে জেলার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সদ্য রোপা আমন ও আউশ ধানের বীজ তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জরিপ করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এমএ বাসেদ বলেন, জেলার সাত উপজেলায় ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা আগেই দেওয়া আছে। জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় ৭ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ও ৮৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে এ টাকা ও চাল বিতরণ করা হবে।