বাগেরহাটে ডাক্তার সেজে অস্ত্রোপচার করেন ক্লিনিক পরিচালক, মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন শিক্ষার্থী
নিউজ ডেস্ক:
বাগেরহাটের মোংলার রাব্বি ক্লিনিকে ডাক্তার না থাকায় ক্লিনিকের পরিচালক এনামুল কবির নিজেই এক রোগীর অপারেশন করেছেন। ডাক্তার না হয়েও অপারেশন এবং ভুল চিকিৎসায় মরতে বসেছেন ওই রোগী।
ঘটনার শিকার রোগীর নাম সিরাজুল ইসলাম। সিরাজুল মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের উত্তর বাজিকরের খণ্ড গ্রামের দিনমজুর মো. ফজলু শেখের চতুর্থ ছেলে। তিনি রাজধানীর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা মো. ফজলু শেখ বাদী হয়ে ক্লিনিক মালিক এনামুল কবিরকে অভিযুক্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মোংলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
থানার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন সিরাজুল ইসলাম। এ সময় দ্রুত তাকে মোংলা পোর্ট পৌরসভার মাদরাসা রোডের রাব্বি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর ওই ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এনামুল কবির সিরাজুলকে পেটের ব্যথা কমানোর ওষুধ দেন এবং বিকেল ৩টার দিকে খুলনা থেকে ডাক্তার এসে অ্যাপেন্ডিক্সের অপারেশন করবেন বলে তার বাবা ফজলু শেখকে জানান। দুপুর দেড়টার দিকে সিরাজুলের বাবা নামাজে গেলে এর ফাঁকে এনামুল নিজে ডাক্তার ও তার স্ত্রীকে নার্স সাজিয়ে সিরাজুলকে অজ্ঞান করে পেটে অস্ত্রোপচার করেন বলে তার বাবা অভিযোগে উল্লেখ করেন।
অস্ত্রোপচারের সময় ভুলবশত খাদ্যনালীর কিছু অংশ কেটে গেলে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রাতভর ওই ক্লিনিকের বেডে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন সিরাজুল। পরে গত ৭ সেপ্টেম্বর সকালে সিরাজুলের অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত খুলনা মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দেন এনামুল। পরিবারের সদস্যরা সিরাজুলকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে সিরাজুল মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে বলে জানায় তার পরিবার।
সিরাজুলের বাবা মো. ফজলু শেখ বলেন, এনামুল ডাক্তার নন। তারপরও সে নিজে ও তার অনভিজ্ঞ নার্সের মাধ্যমে অস্ত্রপাচার করে আমার ছেলের ভুল অপারেশন করিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমি এনামুলের এ কার্যকলাপের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
মোংলা থানার ওসি মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম বলেন, সিরাজুলের বাবা ফজলু শেখের দেওয়া একটি অভিযোগ পেয়েছি। এরআগেও ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। তাই পূর্বের বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুলনায় চিকিৎসধীন সিরাজুলের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। তদন্ত চলছে, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাগেরহাটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, অনেকদিন থেকেই মোংলার রাব্বি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি এক ছাত্রের অপারেশনের ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিবেতোষ বিশ্বাস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে অলোচনা করে প্রয়োজনে ক্লিনিকটি সিলগালা করা হবে।
এদিকে গত ২৯ জুন ওই ক্লিনিকে এক মায়ের জোরপূর্বক অস্ত্রোপচার করানোর ফলে জন্ম নেয় একটি অপরিপক্ক শিশু। এটি দেখে ওই মা ও নবজাতককে দ্রুত ক্লিনিক থেকে বের করে দেন মালিক এনামুল। গত ৩০ জুন বিকেলে খুলনা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়।