ভাতিজিকে আটকে রেখে দেহব্যবসা, বাধা দিলেই মারতেন ফুফু-চাচা
নিউজ ডেস্ক:
চাকরি দেওয়ার কথা বলে আপন ভাতিজিকে ঢাকায় যৌনপল্লীতে দুই লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সোমবার রাতে বরিশাল মেট্রো পলিটন বন্দর থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী ১৮ বছর বয়সী তরুণী।
বরিশাল মেট্রো পলিটন বন্দর থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, নিজের ফুফু, ফুফা ও চাচার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী তরুণী। বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলা হিসেব নেয়া হয়েছে। মামলা তদন্ত সাপেক্ষে এর সঙ্গে আরো যারা জড়িত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগী তরুণী জানান, ১৪ মাস আগে তার বিয়ে হয়। কিন্তু পারিবারিক কলহের কারণে বিয়ের দুই মাসের মাথায় তাদের বিচ্ছেদ হয়। বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নয় মাস আগে ঢাকায় নিয়ে যান ফুফু, ফুফা ও চাচা। সেখানে জুরাইন শনিরআখড়ার ভাড়া বাসায় রাখেন।
তিনি আরো জানান, সেই বাসায় অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেক ছেলে-মেয়ে আসা-যাওয়া করতেন। কয়েকদিন পর ফুফু ও ফুফা মিলে তাকে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করেন। এতে বাধা দিলে করতেন মারধর। গলা চেপে মাথা দেয়ালের সঙ্গে আঘাত করে নির্যাতন চালান তারা।
এভাবে দীর্ঘ পাঁচ মাস একটি কক্ষে আটকে রেখে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করান। তখন মা-বাবার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে দিতেন না। মাঝে মধ্যে কথা বলতে দিলেও তাদের শেখানো কথা বলতে হতো। সারাক্ষণ পাশে থাকতেন ফুফু।
এর মধ্যেই চার মাস আগে অন্য আরেকজনের কাছে তাকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর এক নারীর সহায়তায় পালিয়ে বরিশাল বন্দর থানার নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।
ওই তরুণীর বাবা বলেন, মেয়ে বাড়িতে ফিরে আসার পর আমার বোন, দুলাভাই ও ভাই আমাকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখেন। তবে স্থানীয়দের সহায়তায় আমি মুক্তি পাই। আমার ভাই বলেন- সাক্ষীকে মেরে ফেলতে হবে। মেয়েকে জীবিত রাখলে আমরা বিচার চাইব। এজন্য তাকে মেরে ফেলা উচিত। আমার মেয়ের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে এর কঠিন বিচার চাই।
তরুণীর মা বলেন, ফুফু হয়েও ভাইয়ের মেয়েকে যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেবে এটা বুঝতে পারিনি। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তারা আমার আপন দুই ননদকেও বিক্রি করে দিয়েছে। তাদের দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছে। সেখানে জীবন বাঁচাতে তারা পুলিশের হাতে ধরা দিয়েছে।
ওই তরুণীর মা আরো বলেন, তারা মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাদের মূল ব্যবসা হচ্ছে মানুষ বিক্রি করা আর মেয়েদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা।
এদিকে, ওই তিনজনের বিরুদ্ধে আরো এক নারী থানায় অভিযোগ করেছেন। তার মেয়েকেও ঢাকায় নিয়ে যৌনপল্লিতে বিক্রি করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগে জানিয়েছেন। কিন্তু মেয়ে কৌশলে এ চক্রের হাত থেকে পালিয়ে এসে রক্ষা পান।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত চাচা বলেন, ভাইয়ের মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে কোনো খারাপ কাজ করাইনি। তার বাবার কাছে ট্রলার বিক্রির দুই লাখ টাকা পাবো। সেই টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্য এমন অভিযোগ করেছেন। যখনই পাওনা টাকা চাই তখনই তিনি মামলা দেওয়ার কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, যদি দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে থাকি তাহলে দুই মাস আগে ঢাকা থেকে এসে থানায় মামলা দেওয়ার কথা। কিন্তু আমি চার-পাঁচদিন আগে বাড়ি এসে টাকা চাওয়ায় তারা থানায় মামলা করেছেন।