সাত কঠিন রোগ সারাতে নারকেল তেলের বিকল্প নেই
চিকিৎসা ডেস্ক :
চুলের যত্নে নারকেল তেলের ব্যবহার আদিকাল থেকেই হয়ে আসছে। যা এখনো বর্তমান রয়েছে। এমনকি রূপচর্চাতেও হয়ে থাকে নারকেল তেলের ব্যবহার। তবে জানলে অবাক হবেন যে, আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্যও নারকেল তেল অতুলনীয়।
আমাদের শরীরকে একাধিক রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে এই প্রাকৃতিক তেলটি নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। চলুন তবে নারকেল তেলের উপকারিতাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-
ওজন হ্রাস করে
যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন নারকেল তেল খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন অল্প দিনেই ওজন কমতে শুরু করে দেবে। আসলে নারকেল তেলে যে ফ্যাটি অ্যাসিডটি কয়েছে সেটি শরীরে চর্বি জমার হার কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে জমে থাকা চর্বি গলিয়ে ফেলতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ১ বা ২ চামচ নারকেল তেল দুধে, চায়ে অথবা সরবতে মিলিয়ে খেলে দারুন উপকার মেলে।
অ্যালঝাইমার রোগের প্রকোপ কমায়
নারকেল তেলে উপস্থিত মিডিয়াম চিন ট্রাইগ্লিসারাইডস এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই যৌগটি ব্রেনের পুষ্টিতে সহায়ক নানাবিধ উপাদানের যোগান বাড়িয়ে দেয়। ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি ব্রেন সেলে রক্ত প্রবাহ বেড়ে গিয়ে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, নার্ভ শুকিয়ে যাওয়া সহ একাধিক ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে। প্রসঙ্গত, ব্রেন পাওয়া বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন যেকোনো উপায়ে ১ বা ২ চামচ নারকেল তেল খেতেই হবে।
থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে
নারকেল তেলে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কার্যকারিতাকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে হাইপার থাইরয়েডিজমের মতো রোগের প্রকোপ কমে। শুধু তাই নয়, যারা ইতিমধ্যেই থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রেও এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি দারুন কাজে আসে। তবে তার জন্য প্রতিদিন ২ থেকে ৩ চামচ করে নারকেল তেল খেতে হবে। তবে উপকার মিলবে। যদি কাঁচা নারকেল তেল খেতে না পারেন, তাহলে তরকারিতে দিয়ে অথবা চা, কফি, এমনকি দুধে মিশিয়েও খেতে পারেন।
একজিমার রোগ সারাতে কাজে লাগে
অল্প করে নারকেল তেল নিয়ে যে জায়গায় রোগটি হয়েছে সেখানে ভালো করে লাগাতে হবে। এমনটা দিনে ৩ থেকে ৪ বার করলেই দেখবেন একজিমার প্রকোপ কমে যেতে শুরু করে দিয়েছে। আর যদি স্কাল্পে একজিমা হয়, তাহলে রাতে শুতে যাওয়ার আগে ক্ষত স্থানে অল্প করে নারকেল তেল লাগিয়ে ৫ মিনিট ধীরে ধীরে মাসাজ করতে হবে। সপ্তাহে ২-৩ বার এমনটা করলেই ফল মিলবে। প্রসঙ্গত, নারকেল তেলে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট থাকে, যা এমন ধরনের ত্বকের রোগ কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
পাইলসের যন্ত্রণা কমাতে দারুণ কার্যকর
নারকেল তেলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পাইলসের কারণে হওয়া জ্বালা-যন্ত্রণা নিমেষে কমিয়ে দেয়। তাই যারা এমন রোগে দীর্ঘদিন ভুগছেন, তারা প্রতিদিন ১ বা ২ চামচ নারকেল তেল খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে পেট পরিষ্কার থাকবে এবং কনস্টিপেশনের সমস্যা কমবে। অন্যদিকে পাইলসের যন্ত্রণা কমাতে পটি করার পরেই ক্ষত স্থানে অল্প করে নারকেল তেল লাগিয়ে নেবেন। এমনটা করলে জ্বালা-যন্ত্রণা একেবারে কমে যাবে।
এনার্জি এবং কর্মক্ষমতা বাড়বে
দিনভর তরতাজা থাকতে চান? তাহলে আজ থেকেই প্রতিদিনের ডায়েটে নারকেল তেলকে জায়গা করে দিন। কিন্তু এনার্জির সঙ্গে নারকেল তেলের কী সম্পর্ক? আসলে এই প্রাকৃতিক তেলে যে মিডিয়াম-চিন ট্রাইগ্রিসারাইড থাকে, তা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র সরাসরি পৌঁছে যায় লিভারে। সেখানে তা ভেঙে তৈরি হয় প্রচুর পরিমাণ এনার্জি। শুধু তাই নয়, হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও এই উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেতে ১ থেকে ২ চামচ নারকেল তেল খেলেই উপকার মেলে।
দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ক্যাভিটি, দুর্গন্ধ, দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ সহ একাধিক সমস্যার রোধে নারকেল তেল বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এতে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারী উপাদান মুখ গহ্বরে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে দাঁত এবং মাড়ির ক্ষয় রোধ হয়। কিন্তু প্রশ্নটা হল, কীভাবে ব্যবহার করতে হবে এই তেলটিকে? বেশ সহজ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- প্রতিদিন ১ চামচ নারকেল তেল মুখে নিয়ে কম করে ১৫ মিনিট রেখে ফেলে দিন। তারপর ব্রাশ করুন। এমনটা প্রতিদিন করলেই দাঁত নিয়ে আর কোনো চিন্তা থাকবে না।