শ্যামনগরে বিধবা ভাতার কার্ড দেয়ার নামে মহিলা মেম্বরের ঘুষ গ্রহণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বয়স্ক ভাতা,বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ১ নং ভূরুলিয়া ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য নার্গিস হাবিব এর বিরুদ্ধে ।
জানা যায়, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার কার্ড দেয়ার নাম করে হিন্দুদের দেবতা বাবা তারকনাথের ছবিতে শপথ করিয়ে হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে ভাতা দেওয়ার নামে ইউপি সদস্যের ঘুষ গ্রহণ করেন। ঘুষের ব্যপারে কাউকে না জানাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ দেবতা, সনাতন ধর্মের শাস্ত্রসমূহে পরমসত্ত্বা রূপে ঘোষিত বাবা তারকনাথের ছবি শপথ করে নিয়েছেন বিধবার নিকট থেকে।
শুধু অন্যদের সাথে না বলা নয় বিধবা নারী টাকা পাওয়ার পরে টাকা দেবে কিনা তা নিয়েও শপথ করিয়ে নেন ইউপি সদস্য নার্গিস হাবিব । ইতিপূর্বেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠলেও নেওয়া হয়নি কোনো আইনি পদক্ষেপ।
বছর খানেক আগে তার বিরুদ্ধে সরকারি চাল চুরির অভিযোগ উঠলে তা নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখিনি। সম্প্রতি বয়স্ক ভাতা কার্ড দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অসহায় দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে। ঘুষ দেওয়ার কথা কাউকে না বলতে ধর্মীয় গুরু বাবা তারকনাথের ছবি ছুঁয়ে শপথ করিয়ে নিয়েছেন ইউপি সদস্য নার্গিস হাবিব ।
ভাতার টাকা উত্তোলন করেছে ইউপি সদস্য নিজেই।আর তা ভাগা ভাগি করে নিয়েছেন নিজের বাড়ি থেকেই। দরিদ্র বিধবা নারীর ভাতার টাকা তুলে নিজের বাড়িতে এনে টাকা নিতে খবর পাঠিয়েছেন বিধবাকে। বিধবা তার বাড়িতে আসলে মাছ মাংস দিয়ে খাওয়ানোর পরে টাকা দিয়েছেন তিনের একাংশ।
ভুক্তভোগী ফাতেমা খাতুন বলেন, মহিলা ইউপি সদস্য বাসায় ডেকে নিয়ে মাছ মাংস দিয়ে দুপুরে খাওয়ানোর পর আমার নিকট থেকে ৩০০০ টাকা নিয়েছে।
ভুক্তভোগী সবিতা রানি মন্ডল বলেন, সমাজসেবা অফিসে নাকি ঘুরোনো চেয়ার কিনে দিতে হবে। আর সেই চেয়ার কিনতে ৮ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেন ইউপি সদস্য নার্গিস হাবিব । এরপর যে দিন ভাতার টাকা দেওয়া হয়েছে সেদিন উত্তোলিত ৬ হাজার টাকা সম্পূর্ণ নিয়ে নেন ওই ইউপি সদস্য।
এসময় টাকা নেওয়ার কথা কাউকে না বলতে বাবা তারকনাথ এর ছবি ছুঁয়ে শপথ করিয়ে নেন নার্গিস হাবিব । নার্গিস হাবিব তাকে বলেন, এবিষয়ে কাউকে জানালে পরবর্তীতে কিন্তু আর টাকা পাবেনা। সবিতা রানী বলেন, সেদিন উত্তোলিত সব টাকা নিয়ে নিলেও ভয়ে বাড়ি কারো সাথে একথা বলতে পারিনি।
রেণুকা বলা লস্কর নামক একজন বিধবা নারী বলেন,নার্গিস হাবিব ভাতা কার্ড দেওয়ার নামে প্রথমে ৩ হাজার টাকা নিয়েছে আর বই দেওয়ার পরে নিয়েছে ৪ হাজার। এসময় রেণুকা লস্কর বলেন, মহিলা মেম্বার বলছে এই কথা কাউকে বললে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেব এবং কাউকে না জানাতে আমাকে ঠাকুরের ছবি ছুঁয়ে শপথ করিয়ে নিয়েছে।
জামায়াত পরিবারের সদস্য নার্গিস হাবিব দীর্ঘদিন যাবত এমন অন্যায় করে আসছে বলে জানান এলাকাবাসী। এধরনের কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বিগত দিনে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলেও নিজেকে শুধরাতে পারেনি এই ইউপি সদস্য।
এলাকাবাসীর অভিযোগ নার্গিস হাবিব , দীর্ঘদিন যাবত এলাকাবাসীর নিকট থেকে বিভিন্ন ধরনের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে সুবিধা দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলেও রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। এছাড়াও জানাজায়, মেম্বারদের সহযোগী হিসেবে গ্রামে গ্রামে কয়েক জন সহযোগী আছেন। তারাও কিছু সুবিধা নিয়ে লোক যোগার করে দেয় মেম্বরদের।
ভাতা কার্ড দেওয়ার নামে কারো কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ না করতে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের কার্যালয় থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালালেও ঘুষ থেকে বিরত থাকতে পারেনি ইউপি সদস্য নার্গিস হাবিব ।
এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, মেম্বরেরা মিলে আমার ৪০ দিনের কাজের টাকা তুলে খেয়ে ছিলো এবং আমার বই আটকে দিয়েছিলো। তার পরে আমাকে কয়েক দিনের টাকা দিয়ে আর সব টাকা মেম্বেরা নিয়ে নেয়।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শেখ শহিদুর রহমান বলেন, ঘুষের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।কেউ ভাতা কার্ড দেওয়ার নামে ঘুষ গ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসময় তিনি কাউকে ঘুষ না দিতে অনুরোধ করেন।
বিষয়টি নিয়ে ভূরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা ফারুক হোসেন বলেন,আমিও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পেয়েছি।আমি বর্তমানে অসুস্থতার কারণে বাহিরে আছি।আমি এসে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।
ইউপি সদস্য নার্গিস হাবিব এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন,আমি টাকা নেয়নি। আমি এলাকায় নেই,যারা বলছে আমি এসে তাদের সাথে কথা বলবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম আবুজর গিফারী বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গরিবের জন্য বরাদ্ধ দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আর এই বরাদ্ধ কেউ তছরুপ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।