সাতক্ষীরায় এক হাজারেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষকরা
নিজস্ব প্রতিনিধি:
প্রায় দেড় বছর পর অবশেষে খুলছে দেশের সকল স্থানের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের গৃহীত এ সিদ্ধান্তে খুশি প্রতিষ্ঠান প্রধানরাসহ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় সাতক্ষীরাও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে শেষ মুহূর্তে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যস্ত সময় পার করছে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। জেলার এক হাজার ৯৫টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সবকিছু পরিস্কার করে রেখেছেন। কিছু প্রতিষ্ঠান পরিস্কারে ঘাটতি থাকলেও তারা সেগুলো শেষ করতে পুরোদমে কাজ চালাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা যাতে শ্রেণিকক্ষে এসে তার চিরচেনা রূপ ফিরে পায় সে ব্যাপারে যথেষ্ঠ সোচ্চার রয়েছেন শিক্ষকরাও।
এদিকে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় চালু করতে ও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যালয় শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রমসহ সার্বিক কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে জেলার সকল উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষক বরাবর ৫টি নির্দেশনা জারি করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) মো: রুহল আমীন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে বিদ্যালয় চালুর পূর্বেই উপজেলার সকল বিদ্যালয় পরিদর্শন সম্পন্ন করতে হবে। সকল বিদ্যালয়ে অবশ্যই বিদ্যালয় চালুর নীতিমালা, পরিপত্রের কপি থাকতে হবে-যাতে শিক্ষকগণ ও স্কুল কমিটি যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন। সরকারি নির্দেশনার আলোকে বিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যালয় চালু করতে হবে। প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সপ্তাহে একদিন পাঠদান কার্যক্রমসহ চলবে। পঞ্চম শ্রেণিতে সপ্তাহে ছয়দিন পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সকল বিদ্যালয়কে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে শ্রেণি কার্যক্রম চালুর সার্বিক প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আগমন, প্রস্থান, অভিভাবকদের অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে সুশৃংখল ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। ক্লাস্টারের কোনো একটি বিদ্যালয়ও যেনো যথাযথ প্রস্তুতিতে ব্যর্থ না হয়, পিছিয়ে না থাকে। কারও ব্যর্থতা, দায়িত্বে অবহেলা থাকলে কিংবা কোনো শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক অবহিত করতে হবে। বিদ্যালয়গুলোর সকল শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তার টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অভিভাবকদেরকে টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সকলকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য প্রচার করতে হবে। ১৯ দফা নির্দেশনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাসমূহ জনসম্মুখে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রেরিত বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারগণের করণীয় বিষয়ে নির্দেশিকাসমূহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করতে হবে। কোনো বিদ্যালয়ে জরুরী মেরামত, পুন:নির্মাণ আবশ্যক হলে তথ্য, তালিকা, ছবি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে অধিদপ্তরে প্রেরণ করতে হবে। পুরাতন গৃহ, মালামাল, আবর্জনা থাকলে অপসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া স্লিপফান্ড দ্বারা (পরিপত্রের নির্দেশনার আলোকে) প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এবং শিক্ষার্থী, শিক্ষক,কর্মচারী, কর্মকর্তাদের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে শিশুদেরকে মাস্ক সরবরাহ করতে হবে। তাপমাত্রা পরিমাপ, হ্যান্ডরাব, স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। হাত ধোয়া ও পানীয় জলের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। মাস্ক পরিধানের কারণে শিশুর শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করতে হবে। মাঠ, ভবনের ছাদ ও সকল কক্ষ অবশ্যই পরিচ্ছন্ন রাথতে হবে। সার্বিক বিষয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি অভিভাবদের সংগে সভা করবেন। উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদেরকে বিদ্যালয় কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। অব্যবস্থাপনা, অপরিচ্ছন্নতা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে গাফিলতির কারণে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ভাবমূর্তি যেনো বিনষ্ট না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহল আমীন বলেন, বর্তমানে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ২লক্ষ ১হাজার ৯৩৩জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রযুক্তি গত অদক্ষতা, নের্টওয়াক জনিত সমস্যা, আর্থিক সমস্যাসহ বিভিন্ন কারনে জেলার অনেক শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে বিদ্যালয় খোলার পরেও যেসব পরিবার তাদের সন্তানদের বিদ্যালয় পাঠাতে পারবেনা, তাদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আর সেই লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কাজ করে যাবে বলে জানান তিনি।