কালিগঞ্জে রোগীদের সর্বশান্ত করা ভূয়া ডাক্তারের পক্ষে বাবার সাফাই
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
গত ২ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন দৈনিক সাতক্ষীরা নিউজ পোর্টালে, সাতক্ষীরার এক ভূয়া ডাক্তার ও ভূয়া কবিরাজকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক পাশে ডাক্তার স্বামী-স্ত্রী ও জীনের বাদশা সর্বশান্ত করছে রোগীদের ও ‘!’ শিরোনামে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর এলাকায় তুমুল আলোচনার ঝড় ওঠলে কথিত কবিরাজ এলাকা ছেড়ে পালায় এবং ভূয়া ডাক্তার রেজাউল ক্ষিপ্ত হয়। প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে ভিত্তিহীন মন্তব্য করেন রেজাউল। সংবাদকর্মীরা ভূয়া এবং টাকা দাবি করেছে অপবাদ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রেজাউলের বাবা সামছুর রহমান তরফদার।
মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, ‘আমার পুত্র মোঃ রেজাউল করীম ২০০৯ সালে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড, ঢাকার অধীনে ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারী পাশ করে ২ বছর ইর্ন্টানি করে চেম্বার দেওয়ার অনুমতি পেয়ে কালিগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল কৃষ্ণনগরে কোহিনুর হোমিও হল খুলে ১০ বছর ধরে গরীব ও অসহায় মানুষদের স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার পুত্রের হোমিও চিকিৎসা করার সকল যোগ্যতা এবং সনদপত্র রয়েছে। সুতরাং সে ভূয়া নয়। যারা ভূয়া বানানোর চেষ্টা করছেন প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হবো আমি।’
সংবাদ প্রকাশের পরে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে সাংবাদিকদের নামে মিথ্যাচার করছে ওই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সেবা দেওয়ার রোগীদের সর্বশান্ত করা ডাক্তার।
এদিকে হাইকোর্ট এর একটি রিটে বলা হয়েছে,-‘বিএমডিসি অ্যাক্ট-২০১০-এর সেকশন ২৯ অনুযায়ী বিএমডিসির নিবন্ধন ও অনুমোদন ছাড়া কোনো চিকিৎসক তার নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবেন না। এমনকি কোনো পদবি, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের নামও ব্যবহার করতে পারবেন না। সম্প্রতি হাইকোর্টও একটি রিটের শুনানি করে এমন আদেশই দিয়েছেন’।
জনস্বার্থে করা একটি রিটের শুনানি করে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।
এ রিটের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন বলেন, ‘অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সধারীরাই কেবল নামের সঙ্গে ডাক্তার লিখতে পারবেন না, বিষয়টা তা না। অনুমোদনহীনরা তো পারবেনই না, স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বিএমডিসির নিবন্ধন ও অনুমোদন না পেলে কেউ ডাক্তার লিখতে পারবেন না।’
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্যারামেডিকেল, ফিজিওথেরাপি কিংবা হোমিওপ্যাথি পাস করে নামের সঙ্গে ডাক্তার লিখে সাইনবোর্ড ও প্যাড ব্যবহার করছেন। তারা কি এটা পারবেন? এমন প্রশ্নে জবাবে আইনজীবী রবিন বলেন, ‘বিএমডিসির অনুমোদন ছাড়া অর্থাৎ এমবিবিএস ও বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) পাস ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবি ধারণ করতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ডাক্তারই পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন না করেও ‘বিশেষজ্ঞ’ শব্দ ব্যবহার করেন। যা জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল, বিএমডিসির আইনের পরিপন্থি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অনেক ডাক্তার ওই নির্দেশ অমান্য করে তাদের ভিজিটিং কার্ড, সাইনবোর্ড এমনকি প্রেসক্রিপশন প্যাডেও এসব প্রশিক্ষণের নাম উল্লেখ করায় সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে অপচিকিৎসারও শিকার হন।’
সারাদেশে অনুমোদন ও মানহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের আবেদনের বিষয়ে আইনজীবী রবিন বলে, ‘মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দেশের সব অনুমোদন ও মানহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন।’
জে আর খান রবিন এ বিষয়ে আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘দ্য মেডিকেল প্রাকটিশনার অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর ৮ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। ৯ ধারা অনুযায়ী, শর্তাবলী পূরণ না হলে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করবেন না। এ বিধান থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে ব্যাঙের ছাতা মতো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। যার অধিকাংশই অনুমোদনহীন ও মানহীন।’
উল্লেখ্য, পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে, রেজাউল ও তার স্ত্রী ‘ডাক্তার’না হয়েও কিভাবে নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করে সাইনবোর্ড এবং নেমপ্লেটে ব্যবহার করছিলো। পাশাপাশি মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকাও হাতিয়ে নিয়ে রোগীদের সর্বশান্ত করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল।