নারী চিকিৎসকের বুকের দুধ পান করে বাঁচল পাগলির সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন নাম পরিচয়হীন এক মানসিক প্রতিবন্ধী নারী। স্বাভাবিক নিয়মে সন্তান প্রসব হলেও মা-সন্তানের জীবন ছিল সংকটাপন্ন। পরে স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবীর উদারতার নতুন জীবন পেল মা-সন্তান।
ভারসাম্যহীন মা শিশুকে বুকের দুধ দিতে না পারায় স্বেচ্ছাসেবী এক ব্যক্তির চিকিৎসক স্ত্রীর বুকের দুধ পান করে বেঁচে আছেন সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটি। পরে ইউএনও’র সহযোগিতায় নিঃসন্তান এক দম্পতির কাছে শিশুটিকে দেয়া হয় দত্তক। গত বুধবার উপজেলার সদর ইউপির জাঙ্গীর এলাকার এ ঘটনা ঘটে।
রূপগঞ্জের অটিজম শিশুদের শিক্ষা কেন্দ্র অনির্বাণ চাইল্ড স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সোহেল রানা জানান, কয়েকমাস আগে কারো কুকর্মে সদর ইউপির জাঙ্গীর এলাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। পরে বিষয়টি রূপগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী রাশেদ ফকির, রিদেন ভূঁইয়া, সজিব মিয়া, রনি আহমেদ ও আবিদ তাকে জানান। তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে সেই পাগলিকে স্থানীয় এক ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা দেন।
আলট্রাসনোগ্রামে গর্ভবতী হবার বিষয়টি নিশ্চিত হলে সবার অনুরোধে জাঙ্গীর গ্রামের বাসিন্দা হাফেজ মো. সোলাইমান পাটুয়ারীর বাসায় মানসিক ভারসাম্যহীন নারীটিকে আশ্রয় নিশ্চিত হয়। গত বুধবার রাতে ওই নারীর প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে খবর দেয়া হয়। কিন্ত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই পুত্র সন্তান প্রসব করে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী। কিন্তু মা-ছেলে দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সন্তানের ওজন হয় মাত্র ২ কেজি।
অপরদিকে পাগলি তার সন্তানকে কোনোভাবেই বুকের দুধ দিচ্ছিল না। এ অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নেয়া হলে পাগলির চিকিৎসা করতে সম্মতি থাকলেও সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা। পরে সোহেল শিশুটিকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। তার দাম্পত্য জীবনেও ৪ মাসের একটি সন্তান রয়েছে।
সোহেলের স্ত্রী ডা. নাজিয়া নওরীম নিজের বুকের দুধ পান করালে সন্তানটি বেঁচে যায়। এদিকে বিষয়টি রূপগঞ্জের ইউএনও কে জানানোর পর শনিবার সকালে তার মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানাধীন বেতকা গ্রামের নিঃসন্তান নয়ন হাওলাদার দম্পতির কাছে শিশুটিতে দত্তক দেয়া হয়। তারা ওই বাচ্চাটির নাম রাখেন আবুবক্কর।
এ ব্যাপারে ইউএনও শাহ নুশরাত জাহান বলেন, সোহেল রানা দম্পতি এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর জন্য যা করেছেন তা মানবতার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে শিশুটিকে বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে দত্তক দিয়েছি। আমাদের উপজেলা প্রশাসন সবসময় এই শিশুটির প্রতি নজরদারি রাখবে।