দেবহাটায় বন্দোবস্তের জমি থেকে ভুমিহীন পরিবারকে উৎখাতের চেষ্টায় লিপ্ত ভুমিদস্যুরা

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার দেবহাটায় নিরানব্বই বছরের সরকারি বন্দোবস্তকৃত খাঁস জমি থেকে কাশেম মল্লিক (৫৫) নামের এক অসহায় ভুমিহীনের পরিবারকে ভিটেছাড়া করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভুমিদস্যুরা। ভুমিহীন কাশেম মল্লিক উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের কালাবাড়িয়া গ্রামের আদম মল্লিকের ছেলে।
বন্দোবস্তের জমির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাথে ভুমিহীন পরিবারের মামলা চলমান এবং আদালতের পক্ষ থেকে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশনা থাকার সুযোগে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ভুমিদস্যুরা জমিটি জবরদখলে নিতে রাতদিন অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ওই ভুমিদস্যুদের দফায় দফায় হুমকিতে স্ত্রী-সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে দূর্বিষহ দিন কাটছে অসহায় পরিবারটির।
এঘটনায় জড়িত ভুমিদস্যু কালীগঞ্জ উপজেলার বাবুরাবাদ গ্রামের মৃত গফুর সরদারের ছেলে আসাদুল সরদার ও তার দুই ছেলে দেলোয়ার এবং জামসেদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে দেবহাটা থানায় সাধারণ ডায়েরী ও পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী কাশেম মল্লিকের নথি অনুযায়ী ১নং খাঁস খতিয়ানের জমি ভুমিহীন কৃষক হিসেবে বন্দোবস্ত পেতে ২০১৪ সালের ২৮ আগষ্ট সরকারের অনুকুলে আবেদন করেন ভুমিহীন কাশেম মল্লিক ও তার স্ত্রী সালেহা খাতুন। তাদের আবেদন যাচাই বাছাই শেষে ১০৯/১৪-১৫ নং কেস মুলে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী কালাবাড়িয়া গ্রামের রামনাথপুর মৌজার এসএ ১নং খতিয়ানের ৪৬৫০ দাগে ২৩৬,২৩৭ ও ২৩৮ নং সাবপ্লটে ৭৬ শতক জমি সরকারের পক্ষ থেকে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম তরিকুল ইসলাম ভুমিহীন কাশেম মল্লিক ও তার স্ত্রী সালেহা খাতুনের নামে রেজিষ্ট্রিকৃত কবুলিয়াতের মাধ্যমে নিরানব্বই বছরের জন্য বন্দোবস্ত প্রদান করেন।
পরবর্তীতে জমিটি নামপত্তনের আবেদনসহ সেখানে বসতঘর নির্মান, চাষাবাদ ও মৎস্য চাষ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিল পরিবারটি।
২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারী তাদের বন্দোবস্তকৃত জমিরি দলিলটি ১৭৬ নং স্মারকে কোন নোটিশ ছাড়াই আকর্ষিক বাতিল করা হলে জমির দখলে থাকাবস্তায় ভুমিহীন কাশেম মল্লিক ও তার স্ত্রী সালেহা খাতুন বাদী হয়ে রাষ্ট্র্রপক্ষকে বিবাদী করে সহকারী জজ আদালত দেবহাটা’য় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং ২৪/১৬। ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে মামলার শুনানীকালে আদালত উভয় পক্ষের স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের সাথে বন্দোবস্ত প্রাপ্ত কাশেম মল্লিকের পরিবারের মামলা চলমান অবস্থার সুযোগে ভুমিহীন পরিবারটিকে ভিটেছাড়া করে ওই জমিটি অবৈধভাবে জবরদখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে কালীগঞ্জের বাবুরাবাদ গ্রামের ভুমিদস্যু আসাদুল সরদার ও তার দুই ছেলে দেলোয়ার এবং জামসেদ। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে আসাদুল গং একের পর এক হুমকি ও রাতের আধারে হামলা চালিয়ে তাদেরকে ভিটেছাড়া করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কাশেম মল্লিকের পরিবারের।
সর্বশেষ কোন উপায়ন্তু না পেয়ে কাশেম মল্লিকের পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হলে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে উভয় পক্ষকে দেবহাটা থানায় ডাকা হয়। সেখানে কাশেম মল্লিক তার স্বপক্ষে বন্দোবস্তের কাগজপত্র এবং চলমান মামলার সর্বশেষ নথি উপস্থাপন করলেও, দখল প্রচেষ্টায় লিপ্ত ভুমিদস্যু আসাদুল সরদার বৈধ কোন কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি। একপর্যায়ে আদালতের পূর্নাঙ্গ রায় না হওয়া পর্যন্ত স্থিতিবস্থার নির্দেশ মেনে চলতে উভয় পক্ষকে নির্দেশনা দেয় পুলিশ। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা ও এসআই নূর মোহাম্মাদকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালাতে শুরু করে ভুমিদস্যু আসাদুল সরদার ও তার ভাড়াটে লোকজন।
এঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে ভুমিহীন কাশেম মল্লিকের পরিবার সুবিচার প্রার্থনা ও দখল প্রচেষ্টায় লিপ্তদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
এসংক্রান্ত বিষয়ে দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, ভুমিহীন পরিবারের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ সুষ্ঠ তদন্ত করেছে পুলিশ। মুলত জমিটি দেবহাটা উপজেলার মধ্যে হলেও যাদের বিরুদ্ধে দখল প্রচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তাদের বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার বাবুরাবাদ গ্রামে। ভুমিহীন পরিবারের সাথে রাষ্ট্রপক্ষের মামলা চলমান রয়েছে। অন্যদিকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যারা জমিটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে তারা তাদের স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি। আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আদালতের চুড়ান্ত রায় ঘোষনার আগ পর্যন্ত উভয়পক্ষকে আদালতের জারিকৃত স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)