সাতক্ষীরার মিষ্টির সুখ্যাতি দেশজুড়ে
দুধের তৈরি মিষ্টান্ন আমাদের কার না ভাললাগে। কোনো কোনো অঞ্চলে এসব মিষ্টান্ন হয়ে উঠে ওখানকার ঐতিহ্য। এসব খাবার নিজ গুণেই একসময় সারা দেশে
ছড়িয়ে পড়ে তার সুখ্যাতি নিয়ে। সাতক্ষীরা তেমনই একটি জেলা। সাতক্ষীরার মিষ্টির কথা উঠলেই সামনে চলে আসে ঐতিহ্যবাহী ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডার,
সাগর সুইটস, ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, জায়হুন, সাহা সুইটস্ সহ অসংখ্য মিষ্টির শপের কথা।
সাতক্ষীরা মিষ্টান্নের এতো খ্যাতি দেশ ব্যাপি যে বিভিন্ন জেলাতেই সাতক্ষীরা ঘোষ ডেইরি, আদি সাতক্ষীরা মিষ্টান্ন ভান্ডারসহ বহু নামে বেনামে মিষ্টির দোকান রয়েছে। আবার প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব দোকানের সন্দেশ, সরপুরি, প্যাড়া ও দইসহ বিভিন্ন মিষ্টান্ন চলে যাচ্ছে। স্বাদে, মানে ও গুণে অনন্য হওয়ায় সাতক্ষীরার সন্দেশ, সরপুরি, প্যাড়া ও দইসহ বিভিন্ন মিষ্টান্নের চাহিদা দেশজুড়ে। সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, সাগর সুইটস, ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের নামসহ বিভিন্ন মিষ্টি তৈরীর দোকানগুলোতে উৎপাদিত রসমালাই, কুসুমভোগ, জামরুল, গোলাপ জাম, মৌচাক মিষ্টিরও চাহিদা বেশ।
জানা গেছে, ১৯৬০ সালে গোলাম মোহাম্মদ ফকির আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী সাতক্ষীরা শহরের শহীদ কাজল সরণিতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফকির মিষ্টান্ন
ভাণ্ডার। সেই থেকে আজ অবধি সুনামের সঙ্গে চলছে এই প্রতিষ্ঠানটি। সারাদেশে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পরিচিতি রয়েছে ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের।
সাতক্ষীরার মানুষের দেখা পেলে ফকিরের সন্দেশের কথা শোনেন না, এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। আবার সাতক্ষীরা থেকে কেউ আসবে, এমন কথা শুনলে ফকিরের সন্দেশ আনতে বলতেও ভোলেন না কেউ।
প্রায় সমসাময়িক সময়েই শেখ আব্দুর রশিদ নামে আরো একজন ব্যবসায়ী শহীদ কাজল সরণিতে প্রতিষ্ঠা করেন হোটেল সাগর। ভারতসহ সারাদেশে পরিচিতি রয়েছে সাগরেরও। সাগরের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রতিধানযোগ্য। সাগরের সন্দেশ বা সরপুরির কথা যেন ভুলতে পারেন না কেউ। রেস্তোরাঁ ধাচ পাল্টে প্রায় ১৬ বছর ধরে শুধু মিষ্টি উৎপাদন করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। সেই সঙ্গে নামও পাল্টে হয়েছে সাগর সুইটস।
দেশের যে প্রান্তে যে ধরনের অনুষ্ঠানই হোক না কেন সাগরের সরপুরি না হলে যেন তা অপূর্ণ থেকে যায়! সাতক্ষীরার নলেন গুড়ের সরপুরি ও প্যাড়া (শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয়), সাদা সন্দেশ, রসমালাই, সানার জিলাপি, জামরুল, গোলাপ জাম, মৌচাক, বালিশ চমচম, দানাদার, দুধ মালাই (শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয়), ক্ষীর সন্দেশ, রসগোল্লা, দইসহ নানা রকম মিষ্টি তৈরি হয়।
সাতক্ষীরার জায়হুণ ডেইরি শপের মিষ্টি বেশ শুনাম কুড়িয়েছে কয়েক বছরে। জায়হুণ ডেইরি শপের পরিচালক মো. কাইয়ুম বলেন সাতক্ষীরাতে মিষ্টি তৈরিতে
ভিন্নতা এনেছি আমরা। নতুন নতুন মিষ্টি তৈরি করছে আমাদের কারিগর এর মধ্যে অন্যতম, লাবান, ইরানি ডিলাইট, জাফরান ডিলাইট, ছানার পেষ্টি, মিষ্টি দই,
কমলা ভোগ,সুইট স্যান্ডউইচ, শাহী টোস্ট, শাহী চমচম, মালাই সর, সাদা চমচম, মালাই চপ, বেবী সুইটস,কাটলেট, পট কাটারি, মালাই কারি, রসমালাই,মাওয়া লাড়ু, সন্দেশ মিহিদানা লাড়ু, গুড়ের সন্দেশ, গাজর হালুয়া, কাচা ছানা, গাজর ফিরনি, কাঁচা গোল্লা। তিনি আরও বলেন আমাদের নিজিস্ব খামারের ১৫ টি গাভী রয়েছে সব গাভির দুধ দিয়ে মিষ্টি তৈরি করে থাকি।
এছাড়া সাতক্ষীরারা বিভিন্ন মিষ্টান্ন ভান্ডারের নলেন গুড়ের সরপুরি ও প্যাড়া (শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয়), সাদা সন্দেশ, রসমালাই, সানার
জিলাপি, জামরুল, গোলাপ জাম, মৌচাক, বালিশ চমচম, দানাদার, দুধ মালাই (শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয়), ক্ষীর সন্দেশ, রসগোল্লা, দইসহ নানা রকম
মিষ্টি তৈরি হয়।
জানা গেছে, দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ দুগ্ধ উৎপাদনকারী জেলা সাতক্ষীরা। দুধের সহজলভ্যতা এই জেলার মিষ্টি উৎপাদন ও বিকাশে অনন্য ভূমিকা রেখেছে।
কলকাতা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী, যারা সাতক্ষীরায় আসেন তারা সাগর বললে এক নামে চেনেন। এমনিতেই সাতক্ষীরার
মিষ্টির আলাদা সুনাম রয়েছে সারাদেশে।