একটি গানের জন্য ৭০ লাখ টাকা, শাহরুখের চড় খেয়ে দু’বছর ‘গায়েব’ ছিলেন হানি সিং

বিনোদন ডেস্ক :

কোনো গডফাদার ছাড়াই বলিউডে এসেছিলেন হানি সিং। প্রথম সুযোগেই করেছিলেন বাজিমাত। র‌্যাপার, পপ গায়ক, সুরকার, গীতিকার এবং অভিনেতা। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইউটিউবার হানি হয়ে উঠেছিলেন বলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া প্রথম সারির গায়কদের মধ্যে এক জন। অমিতাভ, শাহরুখ, সালমনের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি।

ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকার সময় জনপ্রিয় এই গায়ক আচমকা রহস্যজনকভাবে ইন্ডাস্ট্রি থেকে ‘অদৃশ্য’ হয়ে যান। টানা দু’বছর তার কোনো খোঁজ ছিল না। ইয়ো ইয়ো হানি সিংহের আসল নাম হিরদেশ সিং। পরিবারের সকলে ভালবেসে তাকে হানি বলে ডাকতেন। পরে বড় হয়ে তিনি নিজের পরিচয় বানিয়ে ফেলেন এই নাম দিয়েই।

বরাবরই সঙ্গীতে আগ্রহ ছিল তার। ব্রিটেনের ট্রিনিটি স্কুলে সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। সেখানেই নামের আগে যোগ করার জন্য ‘ইয়ো ইয়ো’ শব্দ যুগল পেয়ে যান তিনি। ‘ইয়ো ইয়ো’-র অর্থ হল আপনার আপন। কলেজে বন্ধুরা এই শব্দটির ব্যবহার করতেন খুব। সেখান থেকেই এটি শিখেছিলেন হানি।

দেশে ফিরে হানি নিজের একটি ব্যান্ড বানিয়ে ফেলেন। তার সঙ্গে ব্যান্ডের হয়ে কাজ করতেন বাদশা এবং রফতার নামে দু’জন র‌্যাপার। তাদের ব্যান্ড মূলত পঞ্জাবি গান গাইত। ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন তারা। দিলজিৎ দোসাঞ্জ তখন ‘লায়ন অব পঞ্জাব’ নামে একটি ছবি করছিলেন। সেই ছবির একটি গান গেয়েছিলেন হানি। ২০১১ সালের ওই গান সে বছর বিবিসি-র এশিয়ান ডাউনলোড তালিকায় প্রথম হয়েছিল। ওই বছরই হানির গানের অ্যালবাম ‘ইন্টারন্যাশনাল ভিলেজার’ মুক্তি পায়। এই অ্যালবামের প্রতিটি গান সুপারহিট হয়েছিল।

পঞ্জাবি ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয় এই গায়ক এ বার বলিউডে ডাক পেতে শুরু করেন। বলিউডে তার প্রথম গান ‘শকল পে মত জা’ ছবির। হানি যে গানে হাত দিচ্ছিলেন সেটাই সুপারহিট হয়ে যাচ্ছিল তখন।

এর পর ‘মস্তান’ ছবির গানের প্রস্তাব পান তিনি। এই ছবির একটি গানের জন্য ৭০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন তিনি। এখনো পর্যন্ত বলিউডে একটি গানের জন্য এটিই সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক।

শাহরুখ, সলমান, অক্ষয়, অমিতাভদের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছিলেন তিনি। শাহরুখের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গানের পাশাপাশি কয়েকটি ছবিতেও অভিনয় করে ফেলেছিলেন তত দিনে।

২০১৪ সালে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবি করছিলেন শাহরুখ। এই ছবিতে হানির একটি গান রাখতে চেয়েছিলেন শাহরুখ। কিন্তু ছবির সুরকারের সেটা পছন্দ ছিল না। হানিকে কাজ দিতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু বিষয়টিকে হালকা করার জন্য শাহরুখ ছবির প্রচারমূলক অনুষ্ঠানে বন্ধু হানিকে সঙ্গে নিয়ে যান।

এই সময়টিই হানির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ওই প্রচারমূলক অনুষ্ঠানে কোনো একটি বিষয় নিয়ে শাহরুখের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিয়েছিলেন হানি। বলিউড বাদশাও বিষয়টি সহ্য করেননি। প্রকাশ্যে হানিকে চড় পর্যন্ত মেরেছিলেন শাহরুখ।

কী নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল তা আজও পরিষ্কার নয়। তবে এরপর শুধু শাহরুখের জীবন থেকেই নয়, বলিউড থেকেও যেন গায়েব হয়ে যান হানি। দু’বছর সেভাবে তার কোনোও খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিজেকে সারাক্ষণই বাড়িতে বন্দি রাখতেন। কয়েক জন ছাড়া কারো সঙ্গে কথা বলতেন না। গান গাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিলেন।

অনুরাগীরা যখন হানির একটা ঝলক পাওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়েছিলেন, সে সময়ই মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হানির একটি ছবি ভাইরাল হয়। ছবি দেখে হানির অনুরাগীদের মধ্যে প্রচুর প্রশ্নের দেখা দেয়। তখনও কেউ বুঝে উঠতে পারছিলেন না যে আসলে কী হয়েছে হানি।

পরে জানা যায়, চণ্ডীগড়ের একটি হাসপাতালে হানি ভর্তি ছিলেন সে সময়। অতিরিক্ত মাদক সেবনে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। নিজেকে সুস্থ করে তুলতেই চিকিৎসা করাচ্ছিলেন।

টানা দু’বছর ওই একটি মাত্র ছবি ছাড়া হানির এক ঝলকও দেখতি পাননি কেউ। দু’বছর পর নিজেই সকলের সামনে হাজির হন তিনি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তার অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণ জানান।

এক সাক্ষাৎকারে হানি জানিয়েছিলেন, তিনি বাইপোলার ডিজঅর্ডার-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারই চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে তবেই সকলের সামনে হাজির হয়েছেন।

এই দু’বছরে অনেক কিছু বদলে গিয়েছিল। হানির চেয়ে কম পারিশ্রমিকের অনেক র‌্যাপার পেয়ে গিয়েছিল বলিউড। হানি কাজ করছেন ঠিকই কিন্তু তাকে নিয়ে আর সেই আবেগ বা উত্তেজনা নেই অনুগামীদের মধ্যে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)