ভোমরায় র্যাবের অভিযানে অস্ত্র গুলিসহ আটক দুই
রঘুনাথ খাঁঃ
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর সংলগ্ন বৈচনা এলাকায় র্যাবের অভিযানে অস্ত্র ও গুলিসহ আপন দুই সহদরকে আটক করা হয়েছে। তবে এলাকাবাসী বলছে, আটক ব্যক্তিদের ফাঁসানো হয়েছে।
র্যাব-৬ সাতক্ষীরা ক্যাম্পের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় মেজর মোহাম্মদ শরীফুল আহসান নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা সাতক্ষীরা সদর থানার ভোমরা ইউনিয়নের বৈচনা গ্রামের আশা মোড়স্থ জনৈক্য আব্দুল সবুর এর সততা ফার্নিচার এর সামনে পাকা রাস্তার উপর অভিযান চালায়।
এ সময় বৈচনা গ্রামের মো. আব্দুল গফ্ফারের দুই ছেলে মোঃ আব্দুল কাদের (২৫) ও মোঃ আব্দুল কাশেম (২৭) কে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ টি দেশী তৈরি ওয়ান শুটার গান ও ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয় বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা হয়েছে। মামলা নং-৪৫ তারিখ ১৫/০৭/২০২১ ইং দি আর্মস এ্যাক্ট ১৮৭৮ সনের ১৯অ/১৯ঋ ধারা এবং ১৮৬/৩৫৩/৩৩২/৩৩৩ পেনাল কোড।
তবে, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করে বৈচনা গ্রামের কৈমুদ্দিন গাজীর মেয়ে নার্গিস পারিভন জানান, তার ভাই মনিরুল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে শাঁখরা বাজারে বেগুন বিক্রি করে বাইসাইকেলে বাড়ি ফিরছিল। বাজার থেকে কিছুদূর আসার পর আব্দুল গফফার সরদারের বাড়ির পাশে সাদা পোশাকে দু’জন নিজেদেরকে র্যাব পরিচয়ে মনিরুলের বাইসাইকেলের গতিরোধ করে। বাইসাইকেলের ক্যারিয়ারে রাখা বেগুন বহনকারি খালি ক্যারেটে কাগজে মোড়ানো একটি ছুরি ও কাপড়ে মোড়ানো একটি পিস্তল জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন নার্গিস।
নিজেকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার করলে তড়িঘড়ি করে মনিরুলের হাতে হাতকড়া লাগানো হয়। এ সময় পার্শ্ববর্তী গফফার সরদারের ছেলে আব্দুল কাদের ও আবুল কাশেমসহ স্থানীয়রা ছুটে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে মনিরুল হ্যা-কাপ নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পোশাকধারি দু’র্যাব সদস্যসহ কয়েকজন ঘটনান্থলে এসে কাদের ও কাশেমকে আটক করে।
এ সময় সাদা পোশাকে থাকা র্যাব এর এফএস (ডিএডি) মিজানুর রহমান স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহেব আলী ও ভোমরা ইউপি চেয়ারম্যান ইজরাইল গাজীকে ঘটনাস্থলে ডেকে আনেন। পরে তিনি বিষয়টি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়াটার) সজীব হোসেন, সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন ও র্যাব-৬ সাতক্ষীরার শাখার সহকারি পুলিশ সুপার মো: শরিফুল আহসানকে অবহিত করেছেন। সদর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে র্যাব অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
বৈচনা গ্রামের আব্দুল কাদেরের স্ত্রী নাজমা খাতুন জানান, প্রকাশ্য দিবালোকে মনিরুল ইসলাম নামের একজন কৃষককে অস্ত্র দিয়ে আটক করার প্রতিবাদ করায় তার স্বামী ও ভাসুরকে মারপিট করার পর ধরে নিয়ে গেছে র্যাব।
সরেজমিনে গেলে বৈচনা গ্রামে গেলে র্যাব পরিচয়ে দু’ব্যক্তির হাতে মনিরুলকে অস্ত্র দিয়ে আটক করানো, মারপিট ও প্রতিবাদ করায় দিনমজুর কাদের ও কাশেমকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন মনিরুলের স্ত্রী মনিরা খাতুন, কাদেরের স্ত্রী নাজমা খাতুন, হালিমা খাতুন, মায়া রানী দাস, জয়নাব বেগম, শাহাজাহান সরদারসহ কয়েকজন। তারা নিরীহ লোক যাতে হয়রানির শিকার না হয় ও চোরাকারবারি ছাদেককে গ্রেপ্তার করা হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণে উর্দ্ধতন র্যাব কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ইউপি সদস্য সাহেব আলী জানান, র্যাবের এফএস মিজানুর রহমান তাকে জানান যে, মনিরুল হ্যা-কাপ নিয়ে পালিয়েছে। তাকে ধরিয়ে দেওয়া বা হান্ডকাপ উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় উপস্থিত হন ইউপি চেয়ারম্যান ইজরাইল গাজী। ৪০ মিনিট পর তিনি কৌশলে মনিরুলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে হ্যান্ডকাপ উদ্ধার করে দেন। সকাল ৯টার দিকে র্যাব সদস্যরা নিরীহ কাদের ও কাশেমকে আটক করে নিয়ে চলে যায়।
তবে লক্ষীদাঁড়ির জনৈক ছাদেক পরিকল্পিতভাবে মনিরুলকে র্যাবের সোর্স এর মাধ্যমে অস্ত্র দিয়ে তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে জব্দ করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ভোমরা ইউপি চেয়ারম্যান ইজরাইল গাজী সাদা পোশাকে র্যাবের সোর্স ও এফএস মিজানুরকে দিয়ে মনিরুলকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে বলে তিনি মনে করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের ছাদেক আলীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে নিজেকে বোন সাথী পরিচয় দিয়ে বলেন, ভাই ছাদেক তিনদিন আগে ময়মনসিং মাছ আনতে গেছে। ঘটনা বলার পর তা মিথ্যা বলে দাবি করেন সাথী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের এফএস মিজানুর রহমান এ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় মোবাইল ফোনে জানান, এ ধরণের ঘটনা তার জানা নেই।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার নার্গিস পারিভন ও তার মা মাছুরা খাতুন তার অফিসে এসে বিষয়টি জানানোর পর লিখিত অভিযোগ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলেছেন।
জানতে চাইলে খুলনা র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে: কর্নেল রওশানুল ফিরোজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মোবাইল ফোনে জানান, বিষয়টি তার জানা আছে, তবে যেভাবে বলা হচ্ছে ওই রকম নয়। কোন নিরীহ লোক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য তিনি যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।