কলমি শাকের ১৯ স্বাস্থ্যগুণ
চিকিৎসা ডেস্ক :
পুষ্টিগুণে অনন্য কলমি শাক। এটি একটি আঁশজাতীয় খাবার। দামে সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় এর চাহিদাও অনেক। ছোট কিংবা বড় উভয়ের জন্যই এই শাক উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান। বিশেষজ্ঞদের মতে থানকুনি, কচু কিংবা পুঁইশাকের চেয়েও এ শাকের পুষ্টিগুণ বেশি।
কলমি শাক নানা উপায়েই খাওয়া যায়। কলমি শাকের ভর্তা, ভাজি, পাকোড়া, বড়া ইত্যাদি খেতে দারুণ সুস্বাদু। এই শাকের রয়েছে প্রচুর ওষুধি গুণ। যা আমাদের অনেক রোগ থেকেই দূরে রাখে। এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বেশি। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক কলমি শাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত-
কলমি শাকের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম কলমি শাকে পাওয়া যায় ২৯ কিলোক্যালোরি, সোডিয়াম ১১৩ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩১২ মিলিগ্রাম, খাদ্যআঁশ ২.১ গ্রাম, প্রোটিন ৩ গ্রাম, কর্বোহাইড্রেটস ৫.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ ২.৫ মিলিগ্রাম, জলীয় অংশ ৮৯.৭ গ্রাম।
কলমি শাকের বিস্ময়কর উপকারিতা
>> কলমি শাক বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
>> মাথার খুশকি দুর করতেও কলমি শাক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
>> কলমি শাক চোখের জন্যও বিশেষ উপকারী। কলমিশাক দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে।
>> রাত কানা রোগে এই কলমি শাক কয়েক সপ্তাহ প্রতিদিন একবেলা ভাজি রান্না করে খেলে ভালো হয়।
>> পিঁপড়া, মৌমাছি, বিছা বা কোনো পোকা-মাকড় কামড়ালে এই কলমি শাকের পাতা ডগাসহ রস করে লাগালে যন্ত্রণা কমে যায়।
>> আমাশয় হলে কলমি পাতার রসের সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-বিকাল নিয়মিত খেলে আমাশয়ে উপশম হয়।
>> যদি প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালা-যন্ত্রণা হয়, সেই সময় কলমির রস করে ৩ থেকে ৪ চামচ পরিমাণ ৩ সপ্তাহ খেলে ওই জ্বালা কমে যায়।
>> হাত-পা বা শরীর জ্বালা করলে কলমি শাকের রসের সঙ্গে একটু দুধ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
>> গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে, হাতে-পায়ে পানি আসে। সেই সময় কলমি শাক বেশি করে রসুন দিয়ে ভেজে তিন সপ্তাহ খেলে পানি কমে যায়।
>> কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। এটি হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। ছোট শিশুদের নিয়মিত কলমি শাক খাওয়ালে তাদের হাড় মজবুত হয়।
>> কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
>> পর্যাপ্ত পরিমানে লৌহ থাকায় এই শাক রক্ত শূন্যতার রোগীদের জন্য দারুণ উপকারী। সারা দেহে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখতে এই শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
>> জন্মের পর শিশু মায়ের বুকের দুধ না পেলে কলমি শাক রান্না করে মাকে খাওয়ালে শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাবে। এক্ষেত্রে কলমি শাকের সঙ্গে ছোট মাছ দিয়ে রান্না করে খেলে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে এবং তখন বাচ্চাও বেশি দুধ পাবে।
>> আঁশে ভরপুর একটি খাবার কলমি শাক। এটি খাদ্য হজম, খাদ্য পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। নিয়মিত কলমি শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়। এক্ষেত্রে কলমি শাক তুলে সেচে এক পোয়া পরিমাণ রস করে আখের গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-বিকাল এক সপ্তাহ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
>> যদি কারো বাগি বা ফোড়া হয়, তবে এই কলমি পাতা তুলে একটু আদাসহ পাটায় বেটে ফোড়ার চারপাশে লেপে দিয়ে মাঝখানে খালি রাখতে হবে। তিন দিন এইভাবে লেপে দিলে ফোড়া গলে যাবে এবং পুঁজ বেরিয়ে শুকিয়ে যাবে।
>> কলমি শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকায় শারীরিক দুর্বলতা দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। রোগীদেরকে দ্রুত সুস্থ্য হবার জন্য কলমি শাক খাওয়ানো হয়ে থাকে।
>> নারীদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় সমস্যায় দ্রুত কাজ করে কলমি শাক। ঋতুশ্রাবের সমস্যা দূরীকরণে কলমি শাক উপকারী ভূমিকা পালন করে।
>> যাদের মাঝে মাঝে বিনা কারণে মাথাব্যথার সমস্যা আছে, তারা কলমি শাক খেলে উপকার পাবেন। অনিদ্রা দূরীকরণেও কলমি শাক খেতে পারেন।
>> তবে ইউরিক এসিডিটিতে যারা ভুগছেন কিংবা কিডনিজনিত সমস্যায় আছেন, এমন ব্যক্তিরা কলমি শাক না খাওয়াই ভালো।