সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে ৭ রোগীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

  1. সাতক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংকটের কারণে ৭ জন রোগীর মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সন্ধ্যায় পর এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। এতে একাধিক রোগী মারা গেছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চারজনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানা গেছে।

বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে মৃত্যুবরণকারীরা হলেন-আইসিইউ ইউনিটের করোনা পজেটিভ রোগী কালিগঞ্জের ভাড়াশিমলা এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে আকরাম হোসেন খান, সিসিইউ ইউনিটের মারা যায় শহরের ইটাগাছা এলাকার মফিজুল ইসলামের স্ত্রী খাইরুন্নেছা, শহরের কুকরালী আমতলা এলাকার মনিরুজ্জামানের স্ত্রী করোনা আক্রান্ত নাজমা খাতুন, শ্যামনগরের সোনাখালি এলাকার কাশেম গাজীর ছেলে আশরাফ হোসেন, সাধারণ ওয়ার্ডের সন্ধ্যা ৭টার পর মারা যায় শ্রীউলা ইউনিয়নের বক্সার গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম পারভেজ, কালিগঞ্জের জগন্নাথপুর এলাকার সৈয়দ আলি পাড়ের ছেলে আবু জাফর মো: শফিউল আলম তুহিন, আশাশুনির নৈকাটি এলাকর বেনু গাজির ছেলে আব্দুল হামিদ।

বুধবার রাত ৮টায় সরেজমিনে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় আইসিইউ ইউনিট ও সিসিইউনিটের সামনে দেখা যায়, রোগীর স্বজনদের কান্নার রোল এবং আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস।

আইসিইউ ইউনিটের আকরাম হোসেন খানের ছেলে তাজ মুহাম্মদ খান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাবা কোভিড পজেটিভ ছিলেন। গত ৪৫ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন। কয়েকদিন ধরে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছিল। গত কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজিনের সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর দেয়নি। সে কারণে আজ কতগুলো রোগী মারা গেল। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আমার বাবাকে হারালাম।

তিনি আরো বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে অক্সিজেন নেই। রাত ৮টা অক্সিজেন আসছে। এই সময়ে এই রোগীগুলো কীভাবে বাঁচবে?

এছাড়া, এখানকার চিকিৎসকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।  ভবিষ্যতে এভাবে যেন আর কেউ তার বাবাকে না হারায় সেজন্য তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্তের দাবিও জানান তিনি।

কলারোয়া উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও রোগীর স্বজন গোলাম মোস্তাফা বলেন, আমার স্ত্রী সিসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি। সিসিইউ ওয়ার্ডে অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারণে ২ জন মারা গেছে। আমার স্ত্রীকে আল্লাহ বাঁচিয়েছে বলে বেঁচে আছে। কেন এই বিপর্যয়?

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. মানস কুমার মন্ডল বলেন, বিকেল থেকে হাসপাতালের সেন্টার অক্সিজেন সিস্টেমের প্রেসার কমে যায়। সকালে এই বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। যশোর থেকে অক্সিজেন নিয়ে আসা হয়েছে। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরপরই হাসপাতালেন সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্বাভাবিক হয়েছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খোদাকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন হুসাইন ডা. শাফায়ত বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সংকট দেখা দেওয়ার কথা ছিল না। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছাড়াও ৭০টির অধিক সিলিন্ডার আছে। তবে করোনায় ৪ জন মারা গেছে। এখানে কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিলো কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে প্রশাসন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)