দুই আত্মঘাতী গোলে জার্মানির কাছে পর্তুগালের শোচনীয় হার
শুরুতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোলে এগিয়ে থেকেও দুই আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে পর্তুগীজরা। শেষ পর্যন্ত হারতে হয় ৪ গোল খেয়ে। প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে হেরে ইউরো শুরু করেছিল জার্মানরা, দ্বিতীয় ম্যাচেই স্বরূপে ফিরল গত আসরের সেমিফাইনালিস্টরা।
ক্যারিয়ারে এর আগে চারবার জার্মানির মুখোমুখি হয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কখনোই জয় পাননি। পাননি গোলও। তবে এদিন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে গোল পেলেন। করালেনও। কিন্তু অধরা জয় পাওয়া হলো না তার। আরো একবার জার্মানির কাছে হারল রোনালদোর পর্তুগাল।
শনিবার জার্মানির অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় পর্তুগালকে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে জার্মানি। শুরুতে রোনালদোর গোলে গিয়ে গিয়েছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরাই। এরপর চার মিনিটের ঝড়ে দুটি আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি। দ্বিতীয়ার্ধে আরো দুটি গোল করেন কাই হাভার্টজ ও রবিন গোসেন। পরে পর্তুগালের হয়ে দিয়েগো জোতা ব্যবধান কমালেও হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় চ্যাম্পিয়নদের।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে জার্মানি। পঞ্চম মিনিটেই পর্তুগালের জালে বল পাঠিয়েছিল তারা। তবে অফসাইডের কারণে বাতিল হয় সে গোল। চার মিনিট পর থমাস মুলারের দূরপাল্লার শট পর্তুগাল গোলরক্ষক রুই পেত্রিসিও ঝাঁপিয়ে ঠেকালে এগিয়ে যেতে পারতো জার্মানরা। তবে পেত্রিসিও ঠিকভাবে ধরতে না পারায় আলগা বল পেয়ে গিয়েছিলেন সার্জ নাব্রি। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো বিপদ হয়নি।
ধারার বিপরীতে ১৫তম মিনিটে এগিয়ে যায় পর্তুগাল। জার্মানির কর্নার প্রতিহত করে পাল্টা আক্রমণ তৈরি করে দেন রোনালদো। তা থেকে বের্নার্দো সিলভার ক্রস দারুণ দক্ষতায় বুকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে লক্ষ্যে ভালো শট নিয়েছিলেন দিয়েগো জোতা। তার শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন ম্যানুয়েল নয়ার। তবে ঠিকভাবে করতে না পারায় আলগা বল পেয়ে যান ফাঁকায় থাকা রোনালদো। আলতো টোকায় বল জালে জড়াতে কোনো ভুল করেননি এ জুভেন্টাস তারকা। আসরে এটা তার তৃতীয় গোল। আর আন্তর্জাতিক আসরে তার গোল সংখ্যা ১০৭টি।
১৮তম মিনিটে ম্যাট হামেলসের পাস থেকে গোসেনের নেওয়া জোরাল শট ঠেকান পেত্রিসিও। চার মিনিট পর ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিল পর্তুগালেরও। সিলভার ক্রস থেকে ভালো হেড নিয়েছিলেন রুবেন দিয়াস। কিন্তু অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। ৩৫তম মিনিটে এই দিয়াসের আত্মঘাতী গোলে সমতায় ফেরে জার্মানরা। গোসেনের ভলিতে বল ঠেকাতে গিয়ে নিজের জালে পাঠান এ ম্যানচেস্টার সিটি ডিফেন্ডার। চার মিনিট পর আরো একটি আত্মঘাতী গোল হজম করে চ্যাম্পিয়নরা। এবার কিমিখের শট ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের জালে বল ঢুকিয়ে দেন রাফায়েল গুয়েরেইরো।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে পেত্রিসিও দারুণ সেভ না করলে ব্যবধান আরো বড় হতে পারতো। গোসেনের জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান পর্তুগিজ গোলরক্ষক। ম্যাচের যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে আবারও পর্তুগালের ত্রাতা পেত্রিসিও। প্রায় নিজেদের অর্ধ থেকে দারুণ দক্ষতায় বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে জোরালো শট নিয়েছিলেন নাব্রি। এবারও ঝাঁপিয়ে ঠেকান উলভস গোলরক্ষক।
জার্মানদের দুটি দারুণ সুযোগ নষ্ট করে দিলেও দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে আর তাদের আটকাতে পারেননি পেত্রিসিও। মুলারের বাড়ানো বল ধরে ডি-বক্সে দারুণ এক ক্রস দেন গোসেন। ফাঁকায় বল পেয়ে বল জালে পাঠান কাই হাভার্টজ। ৬০তম মিনিটে আরো একটি গোল হজম করে পর্তুগাল। এবার কিমিখের ক্রস থেকে গোসেনের দারুণ হেড জালে জড়ায়।
৬৭তম মিনিটে ব্যবধান কমায় পর্তুগাল। বদলি খেলোয়াড় মৌতিনহোর ফ্রিকিক থেকে দারুণ ভলিতে গোললাইনে বল রাখেন রোনালদো। ফাঁকায় বল পেয়ে আলতো টোকায় বল জালে জড়ান জোতা। ১১ মিনিট পর ব্যবধান কমাতে পারতো রোনালদোরা। এবার বদলি খেলোয়াড় রেনেতো সাঞ্চেজের দূরপাল্লার শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। পাঁচ মিনিট পর একই ভাবে হতাশ হয় জার্মানরাও। বদলি খেলোয়াড় লিঁও গোরেটজকার শট বারপোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়।
ম্যাচের শেষ দিকে ব্যবধান কমাতে ভালো চাপ সৃষ্টি করে পর্তুগাল। কিন্তু গোলের দেখা মিলেনি। ফলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় পর্তুগালকে।
দুই ম্যাচে এক জয় ও এক হারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলো জার্মানি। একই পরিণতির পর্তুগাল তিনে রয়েছে। দুই ম্যাচে এক জয় ও এক ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপে শীর্ষে ফ্রান্স। আর সমান ম্যাচে এক পয়েন্ট পাওয়া হাঙ্গেরি রয়েছে তলানিতে।