কালীগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা সোলাইমান হত্যাসহ একডজন মামলার আসামী পুলিশের খাঁচায়
রঘুনাথ খাঁঃ
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা
সোলায়মান হত্যা মামলাসহ পুলিশ সুপারের উপর হামলা, অস্ত্র মামলা, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ কমপক্ষে এক ডজন মামলার আসামী ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী পেয়াদাকে আটক করেছে
পুলিশ।
সোমবার ভোরে সাতক্ষীরা শহরের পিটিআই মাঠের
পার্শ্ববর্তী আব্দুল মোতালেবের বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের ঝায়ামারি গ্রামের সামিউল-াহ গাজী জানান, ২০১৪ সালে কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের ঝায়ামারির বিলের ১০৭ বিঘা জমি নিয়ে তার ভাই
কালীগঞ্জের নলতা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান গাজীসহ ৪৪ জনের একটি গ্র“পের সঙ্গে
ঝায়ামারি গ্রামের ওহাব পেয়াদাও তার শরীকদের বিরোধ ছিল।
মামলায় হেরে যাওয়ার পরও ২০ ঘর ভূমিহীন বসিয়ে ১০৭ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ৭০ বিঘা জমি দখলে রাখেন ওহাব পেয়াদা।
এ নিয়ে ওহাব পেয়াদা কয়েকবার ভাই সোলায়মানকে হত্যারও হুমকি দেয়। গত
১৯ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্বস্ত কোন লোকের রাঙাশিশা ব্রীজের পাশে একটি চায়ের দোকান থেকে মোবাইল ফোন থেকে ডেকে নিয়ে রাতভর আটক রাখার পর ২০ নভেম্বর সোমবার
ভোর চারটার দিকে সোলায়মানকে আশাশুনির কৈখালি পানির ট্যাঙ্কির পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধের উপর জবাই করে হত্যা করা হয়।
পরদিন তিনি বাদি হয়ে ওহাব আলী পেয়াদাসহ
১৫ জনের নাম উলে-খসহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনের নামে আশাশুনি থানায় মামলা দায়ের করেন। সোমবার রাতেই আশাশুনি থানার তৎকালিন উপপরিদর্শক নয়ন চৌধূরী চিংড়িখালি থেকে
আমিরুলকে গ্রেফতার করে। ২২ নভেম্বর তাকে এক দিনের রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পরবর্তীতে এ মামলার এজাহারভুক্ত
আসামীদের অনেকেই হাইকোর্টের নির্দেশে জামিন পেলেও পলাতক ছিলো ওহাব আলী পেয়াদা ও ভাঙানমারীর এবাদুল গাজী। ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্তভার সাতক্ষীরা সিআইডি’র উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবীরের উপর ন্যস্ত হয়। তদন্তকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওহাব আলী পেয়াদাসহ কয়েক জনের কাছ থেকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিরুদ্ধে মামলা
ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ এনে তাকে পরিবর্তণ করার দাবিতে ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সস্মেলন করেন তিনিসহ সোলায়মানের স্ত্রী আয়েশা খ্তাুন,
ছেলে শাহীন । ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি আসামী রশিদসহ চারজনকে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের সামনে রাস্তা থেকে আটক করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে। এরপরও সোলায়মানের সঙ্গে বিরোধ থাকা সন্ন্যাসীর চক গ্রামের গোলাম মোস্তফা ঢালীর ছেলে আজাহারুল ইসলামকে ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ পরিকল্পিতভাবে আসামী বানিয়ে তাকে খুলনা থেকে ধরে আনার কথা বলা হলেও
থানায় ডেকে এনে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ান হুমায়ুন কবীর। বিচারিক হাকিম রাজীব রায় এর
কাছে জবানবন্দিতে সে আসামী ও তদন্তকারি কর্মকর্তার কথা মত কিভাবে থানায় ধরা দিয়েছে তার বর্ণনা দেয়। এরপর দিন মামলার অন্যতম সাক্ষী বর্তমানে ইউপি সদস্য ফারুক হোসেনকে শহরের পাকাপুলের পাশ থেকে গ্রেপ্তার করেন। অপর সাক্ষী সালেক, রশীদ ও আশরাফুলকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওন হুমায়ুন কবীর। একপর্যায়ে
মামলার তদন্তভার সিআইডি’র উপপরিদর্শক নিউটন দত্ত(অর্গানাইজ ক্রাইম) এর উপর ন্যস্ত হয়। তিনি ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সোলায়মান হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মক্ষীরানী শহরতলীর রুপাকে
গ্রেপ্তার করেন। রুপা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরবর্তীতে নিজেকে বাঁচাতে ওহার পেয়াদা নিহত সোলায়মানের ছেলে শাহীন ও তুহিনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে।
ফলে সোমবার ভোরে আটক হওয়ার পর ওহাব আলীর পক্ষে তদ্বিরে আসে শাহীন ও তুহিন।
এদিকে আদালত সূত্রে জানা গেছে ওহাব পেয়াদা আশাশুনি থানার বসুখালির ভাসার চকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে হয়দার আলীকে হ্যাণ্ডকাপসহ ছাড়িয়ে নেওয়া মামলায় অন্যতম আসামী। এ ছাড়া
ঝায়ামারি থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার, ২০১০ সালে দেবহাটার নোড়ার চকে তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের উপর হামলা মামলার চার্জশীটভুক্ত, আশাশুনির গোদাড়ার মহানন্দ সরকারের চিংড়ি ঘেরে চাঁদাবাজি ও লুটপাটসহ আসামীসহ কমপক্ষে একডজন মামলার আসামী ওহাব আলী পেয়াদা।অপরদিকে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি’র উপপরিদর্শক অর্গানাইজ ক্রাইম মোঃ ইফতেখার আলী জানান,
তিনি সাতক্ষীরা সদর থানাকে কোন রকম রিকিউজিশান পাঠাননি। তবে তাকে আটকের পর সোলাইমান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভেবে দেখি।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন বলেন, অস্ত্র মামলাসহ তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় ওহাব আলী পেয়াদাকে শহরের পিটিআই মাঠের পার্শ্ববর্তী আব্দুল মোতালেবের বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তবে ওই সব মামলায় সে জামিনে আছে এমন কাগজপত্র দাখিল করেছে। তবে সোলায়মান হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে কিনা তা জানতে
তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডির অর্গানাইজ ক্রাইমের উপপরিদর্শক ইফতেখার আলী ওই মামলায় ওহাব আলী জড়িত নন বলে ডিটেক্ট হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে না। ফলে বিভিন্ন
থানায় পাঠানো ম্যাসেজ পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা জাননো হবে।