সাতক্ষীরায় ঢিলে-ঢালা লকডাউন-সদর হাসপাতাল করোনা ছড়ানোর হটস্পট
রঘুনাথ খাঁ:
সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণ নিন্মতিতে রয়েছে। তবে লকডাউন চলছে ঢিলে-ঢালাভাবে। এদিকে সদর হাসপাতাল করোনা ছড়ানোর হটস্পট হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সচেতন মহল।
সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় দফা লকডাউনের প্রথম দিন শনিবার। জেলাব্যাপী এই লকডাউন চলছে ঢিলে-ঢালা সাধারণ দিনের মত। অন্যান্য দিনের মত পুলিশের কড়া নজরদারির দেখা মেলেনি। ফলে জনসমাগম অন্যান্য দিনের তুলনায় বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। গ্রামা লে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে হাট-বাজারগুলোতে ব্যাপক জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে,সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৬৮ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ সময় নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৮৮ জনের। সংক্রমনের হার ৩৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর আগের দিন সংক্রমণের হার ছিল ৫২ শতাংশ। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন মারা গেছেন। এনিয়ে জেলায় করোনায় মারা গেলেন ৫১ জন। মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম হায়দার আলী (৭০)। তিনি কালীগঞ্জের রাজাপুরের বাসিন্দা।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা: জয়ন্ত কুমার সরকার জানান, জেলায় এপর্যন্ত পজিটিভ সনাক্ত হয়েছেন দু’হাজার ৬৪৪ জন। বর্তমানে জেলাজুড়ে ছয় শতাধিক করোনা রোগি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, বিভিন্ন ক্লিনিক ও বেসরকারী হাসপাতালসহ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। দু’হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি আছেন ৬৯ জন। তার মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৫ জন।
অপরদিকে করোনা এবং সাধারণ রোগী মিলে-মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। ডায়েরিয়া ওয়ার্ডের পাশেই করোনা ওয়ার্ড হওয়ায় অনেকেই বেসরকারি ক্লিনিকে রুগী নিয়ে যাচ্ছেন। এতে কয়েকজন চেনা দালালও সক্রিয় রয়েছে। এর পাশাপাশি মূল ভবনে সাধারণ ওয়ার্ড হওয়ায় করোনা রুগী ও সাধারণ রুগীসহ তাদের স্বজনরা একইপথ দিয়ে যাতায়াত করায় সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। একই অবস্থা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে। প্রশাসনিক তৎপরতায় রাস্তার মানুষ অনেকটা ঘরমুখো হলেও জনসমাগত ব্যাপকভাবে বাড়ছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সামনে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অবস্থাও একই।
এছাড়া,সাতক্ষীরার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ইচ্ছেমত করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীসহ সাধারণ রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। এর ফলে সেখানকার পরিস্থিতিও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে তথ্য গোপন করে রুগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামত বিল আদায় করে এধরণের চিকিৎসা সেবা দীর্ঘদিন করার বিষয়টি সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে আসে।
এক পর্যায়ে গত ৭ জুন সিভিল সার্জন ডা: মো: হুসাইন শাফায়াত শহরের সিবি হাসপাতাল, সংগ্রাম হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল ও হার্ট ফাউন্ডেশনকে সতর্ক করে নোটিশ দিলেও অবস্থার কোন পরিবর্তণ হয়নি। শহরের কাটিয়া আনন্দপাড়ার জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তীর শ্বশুর যশোরের রাজগঞ্জ ঝাঁপার বাসিন্তা অচিন্ত্য রায় ও শ্বাশুড়ি রাখি রায়কে বৃহষ্পতিবার রাত ১২টায় ভর্তি করা হয় হার্ট ফাউণ্ডেশনে। দু’ দফায় সাড়ে সাত হাজার টাকা দেওয়া ও নিজ খরচে ঔষধ কিনলেও শুক্রবার দুপুরে ছাড়পত্র দেওয়ার সময় ২৬ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সদর থানার উপপরিদর্শক দেব কুমার দাস যাওয়ার পর ৬ হাজার ৮০০ টাকা নিয়ে তাদেরকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এ চিত্র শুধু হার্ট ফাউণ্ডেশনের নয়, শহরের বাঘা বাঘা ক্লিনিকগুলো এখন এক একটি কসাইখানা।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতারের শিশু চিকিৎসক ডা: অসিম সরকার জানান, কোভিড নিয়ে সাতক্ষীরা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমরা আশা করেছিলাম, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হলে করোনার ঝুঁকি কম হবে। কারণ সেটা লোকালয়ের বাইরে। কিন্তু সদর সদর হাসপাতালে কোভিড রোগি ভর্তির পর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, করোনার প্রথম চিকিৎসা অক্সিজেন কিন্তু এখানে অক্সিজেন নেই, হাইফ্লো নাজাল ক্যানোলা নেই, নেই আইসিইউ। অথচ রোগি ভর্তির পর বোতল অক্সিজেন খুবই কম কাজ করবে। সেক্ষেত্রে ঝুঁকিই থেকে যাবে রোগি এবং কর্তৃপক্ষের।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিট সম্পর্কে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, সাতক্ষীরায় একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল মেডিকেলকে আগে থেকেই নির্ধারণ করা আছে। সেক্ষেত্রে সদর হাসপাতালে যদি কোন করোনা রোগি ভর্তি করা হয় এবং সেটির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার দায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু সদর হাসপাতাল নয়, অন্য যেসমস্ত প্রাইভেট ক্লিনিকে করোনা রোগির চিকিৎসা দিচ্ছে তাদের নিজ নিজ দায়িত্বে রুগীর সেবা ও জননিরাপত্তা অবশ্যই দিতে হবে। এর কোন ব্যত্যয় ঘটলে স্ব স্ব কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হবে।