শ্যামনগরে ফ্রি ফায়ার গেমের প্রতি তীব্র আসক্তির কারণে ছেলের অকাল মৃত্যু
ডেস্ক রিপোর্ট:
আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না, আইডির পাসওয়ার্ড। ফ্রি ফায়ার পাবজি গেমের আইডিতে ঢুকে তোমরা কাজ করতে পারবা। আমি যে আইডি কিনেছি, তা বিক্রি করে টাকাটা তাদের ফেরত দিও।’
কথাগুলো চিরকুটে লিখে গলায় রশি দিয়ে শোবার ঘরের আড়ায় ঝুলে আত্মহত্যা করেছে আশিক রহমান নামের এক স্কুলছাত্র (১৫)। গত রবিবার দুপুরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের পাঁচশত বিঘা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আশিক ওই গ্রামের ওমানপ্রবাসী বাবর আলী মল্লিক ও খাদিজা আক্তার দম্পতির বড় ছেলে। পাতড়াখোলা আরশাদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জমানো টাকা দিয়ে রোজার মাসে আশিক ‘ফ্রি ফায়ার পাবজি গেমের’ আইডি, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও স্মার্টফোন কেনে। এর আগে পাবজি গেম আসক্তিতে নানা অজুহাতে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিতো। একজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়লেও মায়ের কাছ থেকে দুজন শিক্ষকের বেতন নিতো। আশিক চিরকুটে ওসব কথা লিখে যাওয়ার পাশাপাশি আইডিতে ঢোকার পাসওয়ার্ড এঁকে দেয়।
জানা গেছে, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে লুকিয়ে নির্জন এলাকায়, কখনও ঘরের দরজা বন্ধ করে গেম খেলতো আশিক। সম্প্রতি আইডি নষ্ট হয়ে যায়। নতুন আইডি খোলাসহ আনুষঙ্গিক খরচ জোগাতে বিচলিত হয়ে পড়ে। এর ফাঁকে মানিকখালী বাজারের ইলেকট্রনিকসের দোকানে কাজ নেয়। ওই দোকানের ক্যাশ থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে যায়। নতুন আইডি ও ডাটা কিনে দুই হাজার ৪০০ টাকা খরচ করে। বিষয়টি আশিকের পরিবারকে জানান দোকানদার আব্দুল করিম।
চাচা বাবলু মল্লিক জানান, দোকান থেকে টাকা নেওয়ার কথা জানতে চাইলে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ৬০০ টাকা ফেরত দেয়। নতুন আইডি ও ডাটা কিনতে দুই হাজার ৪০০ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানায় আশিক।
তিনি আরও জানান, খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম চাচার হাতে তুলে দিয়ে আশিক ঘরের বাইরে চলে যায়। দুপুরে ভাত খাওয়ার জন্য ডাকাডাকির একপর্যায়ে ঘরের ভেতর লাশ ঝুলতে দেখেন পরিবারের সদস্যরা।
আশিকের মা খাদিজা আক্তার বলেন, গেমের প্রতি তীব্র আসক্তির কারণে ছেলের অকাল মৃত্যু হয়েছে। লুকিয়ে গেম খেলার বিষয়টি জেনে কয়েকদিন নিজের কাছে ফোন রেখে দিই। এ নিয়ে খারাপ আচরণ করেছে। পরে তার বাবার অনুরোধে ফোনটি দিই। আইডি নষ্ট হলে নতুন আইডি খোলাসহ ডাটা কিনতে দোকান থেকে টাকা নেয়। কিন্তু ‘চুরির’ অপবাদ দেওয়ায় আত্মহত্যা করে।
তিনি বলেন, এ ধরনের ভিডিও গেম আরও আগে বন্ধ করা হলে ছেলেকে হারাতে হতো না। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অলস সময় কাটানোর ফাঁকে ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছিল আশিক।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম বলেন, পড়ালেখা ও বাড়ির কাজে আশিক মনোযোগী ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ভিডিও গেমের সঙ্গে জড়িয়ে লেখাপড়া এবং কাজে মনোযোগ হারায়। শেষ পর্যন্ত ভিডিও গেম কেড়ে নিলো তার প্রাণ।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, ঘটনার পর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করছি আমরা।
বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষকরা তারা তাদের মন্তব্য প্রতিবেদনে বলেন, ভিডিও গেম সামাজিকীকরণের পথে বড় অন্তরায়; শিশুদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রেও। এসবের প্রতি আসক্তিতে তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। যে ছেলে চুরির অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে; সে অত্যন্ত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছিল। কিন্তু ভিডিও গেমের প্রতি মোহ তাকে স্বভাববিরুদ্ধ কাজ করতে উৎসাহিত করেছে। মৃত্যুর আগে ছবি এঁকে আইডিতে ঢোকার নির্দেশনা দিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, ছেলেটি ভিডিও গেমকে জীবনের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৩১ মে) বিকালে পাবনায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন আসিফ (১৮) নামের এক যুবক। ফ্রি ফায়ার পাবজি গেম খেলার জন্য বাবার কাছে স্মার্টফোন চেয়ে না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।