পাইকগাছায় ২ ভাইয়ের অবৈধ ক্লিনিক ব্যবসা-করোনাকালে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের রোগিরা হচ্ছেন প্রতারিত

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
নেই নির্ধারিত কোন চিকিৎসক বা সেবিকা। তবুও বাইরে থেকে ডিগ্রিবিহীন তথাকথিত চিকিৎসক এনে প্রতিনিয়ত চলছে অ্যাপেন্ডিসাইটিস, হার্নিয়া, জরায়ুর টিউমারের মতো জটিল অপারেশন। অপারেশনের পর ভর্তি ওইসব রোগির দেখভাল করেন চিকিৎসায় কোন অভিজ্ঞতাহীন ক্লিনিকের মালিক নিজেই। আর কোন সমস্যা হলেই পাঠিয়ে দেন বিভিন্ন হাসপাতালে। অনুমোদনহীন এ ক্লিনিকের অপচিকিৎসায় প্রাণ গেছে দুই শিশুসহ একাধিক জনের। তবুও করোনাকালে থেকে নেই গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল রোগির সাথে চিকিৎসার নামে প্রতারণা।
বলছি, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার বাকা বাজারে অবস্থিত ডা. নুরুউদ্দিন মেমোরিয়াল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কথা।

স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মানুযায়ী, কোন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত হচ্ছে, ২৪ ঘন্টা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেবিকা থাকতে হবে। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার করতে হলে অনেক শর্ত মানতে হয়।

কিন্তু শর্ততো দূরের কথা স্বাস্থ্য বিভাগের কোন অনুমোদন ছাড়াই চলছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ডা. নুরুউদ্দিন মেমোরিয়াল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কথা। প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৪ বছর আগে ইচ্ছামত এ ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন মুর্শিদুল ইসলাম খোকন, তার ভাই জিহাদুল ইসলাম বাবুল। পরে তাদের সাথে যুক্ত হন ধর্ণা রানী মন্ডল নামে আরেকজন। আর এ তিনজন মিলে শুরু করেন ১০টি বেড়ে রোগি ভর্তি, অপারেশনসহ চিকিৎসার নামে নানা প্রতারণা। আর রোগি ভর্তি ও অপারেশন করার জন্য সর্বক্ষণের জন্য চিকিৎসক বা মানসম্মত কোন অপারেশন থিয়েটার না থাকলেও বাইরে থেকে ফারুক হোসেন ও আবু বক্কার সিদ্দিকী নামে দুই জন চিকিৎসক অপারেশনসহ রোগির চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এরমধ্যে ফারুক হোসেনের কোন প্রাতাষ্ঠিনিক সনদ নেই। আর আবু বক্কার সিদ্দিকীর যোগ্যতা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। তবে এ দুইজন কর্তৃপক্ষের ডাকে এসে অপারেশন করা বা রোগি দেখেই চলে যান। অপারেশন পরবর্তী কোন সমস্যা হলে এইসব রোগিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা খুলনা পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেছে গত রোববার। এদিন বিকেলে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার রামনগর গ্রামের আবদুর রব মোড়লের স্ত্রী নাজমা বেগম ওই ক্লিনিকে ভর্তি সিজারের মাধ্যমে একটি সন্তান প্রসব করেন। এরপর কিছুক্ষণ পর প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়লে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে অন্যত্র চলে যেতে বলেন। এসময় তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে রব অন্যত্র যেতে বাধ্য হন। এরকম ঘটনা নিত্যদিনের। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, অজ্ঞাত কারণে মাঝে মধ্যে ক্লিনিকের সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়। আবার তা লাগানো হয়।

এ ক্লিনিকের তথাকথিত চিকিৎসকদের অপচিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সর্বশেষ গেল ফেব্রুয়ারি মাসে এক শিশুসহ এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের প্রাণ গেছে। এ নিয়ে ক্লিনিকে হামলা, স্থানীয়ভাবে বিচার শালিসসহ স্বাস্থ্য বিভাগে একাধিকবার অভিযোগও করেছেন ভুক্তভোগিরা। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত পূর্বক সিলগালা করার নির্দেশ দেয়া হলেও নানাভাবে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে চলছে এর কার্যক্রম।

ঘয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ ক্লিনিকের অপচিকিৎসায় ভুক্তভোগি দুই ব্যক্তি বলেন, ক্লিনিকে ইচ্ছামত মতো চিকিৎসা কার্যক্রম। সব জেনেও দূরে যাওয়ার ঝামেলার কারণে এ ক্লিনিকে সন্তান প্রসব করানোর জন্য এসেছিলেন তারা। কিন্তু সিজারের পর আর প্রসূতির চিকিৎসা না দেয়ার চরম অসুস্থ হয়ে খুলনার নিয়ে চিকিৎসা করতে হয়েছে তাদের। কিন্তু মালিক কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় একাধিক জনকে অভিযোগ করেও কোন ফল পাননি তারা।

এছাড়া নিয়মানুযায়ী প্রত্যেকটি সেবার নির্ধারিত মূল্য সম্বলিত চার্ট টানানোর পাশাপাশি সেবা নিতে কমপক্ষে শতকরা ৫ ভাগ রোগিকে ছাড়কৃত মূল্যে সেবা প্রদান করতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন অপারেশনসহ চিকিৎসার ইচ্ছামাফিক টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে কোন সেবার চার্ট বা কোন গরিব রোগিকে ছাড় দেয়ার কোন নজিরও নেই বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এ ব্যাপারে ক্লিনিকের অন্যতম কর্ণধার মুর্শিদুল ইসলাম খোকন মুঠোফোনে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ক্লিনিক পরিচালনার জন্য তার সকল বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। ভালো মানের চিকিৎসা দেয়ায় আশপাশের ক্লিনিকগুলোর মালিকরা তার সাথে শত্রুতা করে নানা মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে চলেছে বলে দাবি করেন তিনি। দুই চিকিৎসকের ব্যাপারে তিনি বলেন, আবু বক্কার ক্লিনিকের সার্জন ও ফারুক হোসেন তার সহকারী। তাদেও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা রয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা সিভিল ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ওই ক্লিনিকের বিষয়ে তিনি জরুরী ভিত্তিতে খোঁজ নিয়ে সবকিছু বৈধতা না থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। শর্ত না মেনে গায়ের জোরে ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার কোন সুযোগ নেই।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)