সংসদ ভবনে হামলার পরিকল্পনা: আদালতে আমির হামজার স্বীকারোক্তি

নিউজ ডেস্ক:

সংসদ ভবনে তলোয়ার নিয়ে হামলার পরিকল্পনার মামলায় আলোচিত ধর্মীয় বক্তা মুফতি আমির হামজা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভুইয়ার আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এদিন পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

এর আগে, গত ২৫ মে আসামি হামজাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন, পলাতক অপরাপর আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা সংগ্রহসহ গ্রেফতার, অর্থদাতা, মদদদাতা শনাক্তের লক্ষ্যে আসামির পুলিশ রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামি আমির হামজা এজাহার নামীয় আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য মো. আল সাকিবসহ অন্যান্য কর্মীদের তার বক্তৃতার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং অত্র হামলা করার বিষয়ে ইন্ধন দিচ্ছে মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। আসামি আমির হামজার কথিত উগ্রবাদী বক্তব্য ইউটিউবে দেখে পূর্বে গ্রেফতার আসামি সাকিব আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলা করে পুলিশের গুলিতে শহিদ হবে মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে। সে তথাকথিত জিহাদের নামে পবিত্র কোরআন শরিফ ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করে উগ্রবাদী বয়ান দেয় এবং যুব সমাজকে উগ্রবাদ সমর্থনে ইন্ধন দেয় ও উদ্বুদ্ধ করে। এছাড়া তার এই উগ্রবাদী বয়ানের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে উগ্রবাদের প্রচার ও প্রসারে লিপ্ত রয়েছে।

এর আগে গত ২৪ মে কুষ্টিয়া থেকে তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গ্রেফতার করে।

জানা গেছে, মুফতি আমির হামজা ওয়াজ-মাহফিলে ইসলামের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। ইউটিউবে প্রকাশিত তার বেশকিছু বক্তব্য উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে, যা শুনে কিশোর-তরুণরা জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে। সাম্প্রতিক হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের অভিযানের কারণে আত্মগোপনে ছিলেন আমির হামজা।

গত ৫ মে তলোয়ার নিয়ে সংসদ ভবনে হামলা চালানোর চেষ্টারত সাকিব নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাকিবকে আটকের পর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় সাকিবসহ আলী হাসান উসামা ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবীকে আসামি করা হয়।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, সাকিবের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘সাকিব মোবাইল ফোনে উগ্রবাদ বার্তা সংবলিত ভিডিও প্রচারকারী আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আমির হামজা, হারুন ইজহার প্রমুখ ব্যক্তির উগ্রবাদী জিহাদি হামলার বার্তা সংবলিত ভিডিও দেখে উগ্রবাদে আসক্ত হয়।’

উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক ভাষায় ওয়াজকারী আমির হামজার জন্ম ১৯৯১ সালে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে আল-কোরআনের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)