ক্ষমতা হারাতে চলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ইসরায়েলের ইতিহাসে ১২ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বিদায় করতে তার বিরোধীরা একটি জোট সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এ সরকার গঠিত হলে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারাতে পারেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

এমন পরিস্থিতিতে জোট সরকার গঠন দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে সতর্ক করেছেন লিকুদ পার্টির প্রধান।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, মধ্যপন্থী ইয়ার ল্যাপিডের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন কট্টর ডানপন্থী নাফতালি বেনেট। এই দুই নেতার মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তিতে সমর্থন না দিতে ডানপন্থী রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। নতুন জোট সরকার গঠনের জন্য ল্যাপিডের হাতে বুধবার পর্যন্ত সময় আছে। এ প্রচেষ্টা সফল হলে ইসরায়েলে শেষ হবে নেতানিয়াহুর ১২ বছরের শাসন। ২০০৯ সাল থেকে টানা প্রধানমন্ত্রী পদে আছেন নেতানিয়াহু। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্তও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সব মিলিয়ে ইসরায়েলের ৭৩ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী ৭১ বছর বয়সী নেতানিয়াহু।

জানা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগে বিচার চলছে নেতানিয়াহুর। চলতি বছরের মার্চের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হন তিনি। গত দুই বছরে ইসরায়েলে চারটি সাধারণ নির্বাচন হয়। কোনোবারই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনো দল। জোট সরকার গঠনেও কোনো দল সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি বলে প্রতিবারই নতুন সাধারণ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হয়েছে দেশটি।

এ অবস্থায় ইসরায়েলের প্রায় একটি প্রজন্মকে নেতৃত্ব দেয়া নেতানিয়াহু রোববার বলেন, বামপন্থী জোট সরকার ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের প্রতি হুমকি। এ ধরনের সরকারের হাতে দেশের নেতৃত্ব তুলে দেবেন না।

বেনেটের বিরুদ্ধে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তুলেছেন নেতানিয়াহু। ল্যাপিডের সঙ্গে জোট বাঁধবে না বলে শুরুতে জানিয়েছিলেন বেনেট। তবে পরবর্তী সময়ে জোটবাঁধার আলোচনা শুরু ‘শতাব্দীর সবচেয়ে বড় প্রতারণা’ বলে মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু।

এর আগে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে জোট সরকার গঠনে দলীয় আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেন ৪৯ বছর বয়সী বেনেট।

তিনি বলেন, নেতানিয়াহু এখন আর ডানপন্থি সরকার গঠনের চেষ্টা করছেন না। কারণ তিনি জানেন যে ডানপন্থিরা নিজেদের অবস্থান হারিয়েছেন। এখন নিজের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির ওপর নির্ভর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করছেন তিনি। এ অবস্থায় বন্ধু ইয়ার ল্যাপিডের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনে যা করতে হয় আমি করব।

এ ঘোষণার আগেই ইসরায়েলের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী আপাতত নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন বেনেট। পরে পালাক্রমে এ দায়িত্ব নেবেন ৫৭ বছর বয়সী ল্যাপিড।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত এ জোটে ইসরায়েলের ডান, বাম ও মধ্যপন্থিরা এক কাতারে আসবেন। আদর্শগত অবস্থান এক না হলেও নেতানিয়াহুকে উৎখাত করার লক্ষ্যে জোটবদ্ধ হতে মরিয়া দলগুলো।

নেতানিয়াহু জোট সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ার পর জোট গঠনে ২ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী ল্যাপিডকে। সবশেষ নির্বাচনে নেতানিয়াহুর ডানপন্থি লিকুদ পার্টি সবচেয়ে বেশি আসন পায়। দ্বিতীয় সর্বাধিক আসন পায় ল্যাপিডের ইয়াশ আতিদ পার্টি। অন্যদিকে ১২০ আসনের পার্লামেন্ট নেসেটে কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি আসনে জয় পেয়ে শক্ত অবস্থানে আছে বেনেটের দলও।

ল্যাপিড ও বেনেটের দল ঐক্যবদ্ধভাবে জোট সরকার গঠনে সক্ষম। ল্যাপিডের দল সরকার গঠনে প্রাথমিকভাবে ২৮ দিনের সময় পেলেও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-হামাস সহিংসতার কারণে ব্যাহত হয় সে প্রক্রিয়া।

১০ থেকে ২০ মে পর্যন্ত সহিংসতায় ৬৫ শিশুসহ প্রাণ যায় ২৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির। আহত হয় দুই হাজারের বেশি মানুষ। গৃহহীন হয় এক লাখের বেশি। ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এ অবস্থায় ল্যাপিডের সঙ্গে সরকার গঠনের আলোচনা বাতিল করে দেয় সম্ভাব্য জোটে অংশ নিতে চাওয়া আরব-ইসলামিক রাম পার্টি।

গত শনিবার বেনেট ও অন্য এক নেতাকে তিন ভাগে প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগ করে নেয়ার প্রস্তাব দেয় নেতানিয়াহুর দল। সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দলগুলো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)