ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলার শতাধিক গ্রাম, চিংড়ী ঘের ও ফসলী ক্ষেত প্লাবিত
রঘুনাথ খাঁ:
ভয়াল ঘূর্নিঝড় ইয়াশ এর দাপুটে প্রভাবে সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর ও আশশুনি সহ ছয়টি উপজেলার শতাধিক গ্রাম বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে পড়া জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিপুল সংখ্যক কাচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে ছয়টি উপজেলার কয়েকশত চিংড়ী ঘের ও ফসলী খেত। নষ্ট হয়েছে সুপেয় পানির আঁধারগুলো। পানির তোড়ে সাতক্ষীরার সঙ্গে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্লাবনে উঠে আসা মাছ রাস্তার ওপর কিলবিল করে বেড়াচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে না উঠলেও গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি নিয়ে বহু মানুষ বাড়ির নিকটবর্তী উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
আজ বুধবার সকালে শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাপা গ্রামে বেড়িবাঁধের চারটি পয়েন্ট, পাতাখালির দুটি পয়েন্ট, রমজাননগরের দুটি পয়েন্ট, গাবুরার তিনটি পয়েন্ট, কৈখালির দুটি পয়েন্ট, ভেটখালি জামে মসজিদের সামনে একটি পয়েন্ট, বুড়িগোয়ালিনীর তিনটি পয়েন্ট ও নূরনগর ইউনিয়নের একটি পয়েন্ট সহ অন্ততঃ ১৭টি স্থানে পানি বেড়িবাঁধ উপচে গ্রামে ঢুকে পড়েছে। এসব বেড়িবাঁধ ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়ায় সয়লাব হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। এদিকে কালিগঞ্জের পূর্ব নারায়নপুর গ্রামের জব্বারের মাছের ঘের সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা হাসপাতাল, আব্দুস সামাদ স্মৃৃতি মাঠ, বাস টার্মিনাল সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম কাঁকশিয়ালী নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া কালীগঞ্জ সোহরাওয়ার্দি পার্কের পাশে কাঁকশিয়ালী নদীর পানি উপচে উপজেলা সদরের বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদের কাছে যমুনা নদীর উপর নির্মিত স্লুইজ গেটের পাটাতন বন্ধ থাকায় সেখান থেকে পানি উপচে নাজিমগঞ্জ বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে ছয়লাব হয়ে গেছে। উপজেলার ঘোজাডাঙা এলাকায় কাঁকশিয়ালী নদীর বাঁধ উপচে উত্তর শ্রীপুর ও দক্ষিণ শ্রীপুরসহ তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভাঙনের ফলে কপোতাক্ষের পানিতে আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাহনিয়া ল ঘাট, হরিশখালি, রুইয়ার বিল, সুভদ্রকাটিসহ কয়েকটি গ্রাম ছয়লাব হয়ে গেছে। এ ছাড়াও আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়ায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি বিস্তীর্ণ অ ল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার খাজরা ইরুনিয়নের পিরোজপুরের রাজবংশীপাড়ায় কপোতাক্ষ নদের বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ অ ল প্লাবিত হয়েছে। আশাশুনির দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়ায় খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ উপচে পানি এলাকায় ঢুকে কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গাবুরার জেলেখালি, নেবুবুনিয়া, চাদনীমুখা, গাগড়ামারি, পদ্মপুকুরের উত্তর ও দক্ষিণ পাতাখালি, কামালকাটি,ঝাঁপা ও সোনাখালি সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম উপচে পড়া নদীর পানিতে ভাসছে। গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা বালির বস্তা এবং মাটি ফেলে বাধ সংস্কারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে দেবহাটা উপজেলার ইছামতী নদীর কোমরপুর নামকস্থানে বেড়িবাঁধ উপচে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার হাড়দ্দহ মসজিদের পাশে ও তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআর এম এর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট ধ্বসে নদীর পানি ছড়িয়ে পড়েছে। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সেতু উপচে চুনা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে এলাকা। এখন পর্যন্ত কোন প্রানহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামবাসী গবাদিপশু ও তাদের সহায় সম্পদ নিয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছেন। সাতক্ষীরায় দিনভর বৃষ্টি হয়েছে সেইসাথে ঝড়ো হাওয়া ছিল প্রবল।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার নদীগুলোতে পানি বেড়ে গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনি,কৈখালী, পদ্মপুকুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের বেড়ীবাধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নদীর পানি বেড়ে ভেড়ী ছাপিয়েও পানি প্রবেশ করেছে। কিছু মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া রাতে আবারো জোয়ারে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারে। সেকারণে পানিবন্দি মানুষজনকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চেয়ারম্যানগণ সক্রিয় রয়েছেন ভাটা নেমে যাওয়ার সাথে সাথে পানি বের করতে কাজ করবেন।
সাতক্ষীরা -৪ শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ (আংশিক) এর সাংসদ জিএম জগলুল হায়দার বলেন, এক বছর আগে আঘাত আনা আমফানের ক্ষত শুকোতে না শুকোতেই আবারো ইয়াশের ছোবল মানুষকে নতুন করে বিপদে ফেলেছে। সকলে মিলে একসাথে কাজ করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।