অবৈধ ভাবে কাঁকড়ার ফার্ম গড়ে উঠায় বিলুপ্তির পথে সুন্দরবনের কাঁকড়া-হুমকির মুখে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র

আশিকুজ্জামান লিমনঃ
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের  আশপাশে অপরিকল্পিত ভাবে ছোট বড় অসংখ্য কাঁকড়ার প্রকল্প গড়ে উঠেছে। প্রকল্পগুলোর চাহিদা পূরণ করতে যেয়ে  অপরিকল্পিতভাবে সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে কাঁকড়া আহরণে বিলুপ্তি হতে চলেছে সুন্দরবনের কাঁকড়া।
শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে প্রায় ২০০ শতাধিক সফটসেল বা নরম কাঁকড়া প্রকল্প। এইসকল প্রকল্পগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ১ থেকে ১.৫ হাজার কেজি কাঁকড়া ছাড়া হয়।
 বন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী Mud crab (scyulla serreta) প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পুরুষ কাঁকড়া সর্বনিম্ন ২০০ গ্রাম ও স্ত্রী কাঁকড়া সর্বনিম্ন ১৩০ গ্রামের নিচে কাঁকড়া ধরা নিষেধ থাকলেও সে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অধিক লাভের আশায় সুন্দরবন থেকে প্রতিনিয়ত ৩০ থেকে ৪০ গ্রামের কাঁকড়া আহরণ করছে জেলেরা।
বড় কাঁকড়া চেয়ে ছোট কাঁকড়ার দাম বেশি পাওয়ায় এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাঁকড়া নিধনে মেতে উঠেছে তারা। প্রকল্প মালিকদের লোভে পড়ে জেলেরা ঘন আটল ও দড়ির দোন দিয়ে ছোট কাঁকড়া শিকার করেই যাচ্ছে।
যে কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বড় কাঁকড়ার পরিমান।
১০০ গ্রামের উপরের কাঁকড়া খলোশ দিতে দেরি হওয়ায় প্রকল্প মালিকদের লোকসান হয়।ছোট কাঁকড়া ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে খলোশ দিয়ে থাকে। যেকারণে মালিকরা ছোট কাঁকড়া অধিক দামে ব্যাবসায়িদের কাছ থেকে কিনে থাকে এমনটাই জানালেন ফার্মে কাজ করা মুজাহিদ।
প্রশাসনের নাকের ডগায় দিয়ে প্রতিনিয়ত অবৈধ ছোট কাঁকড়া রম রমা বেঁচা কেনা করলেও সম্পণ নিরব ভুমিকা পালন করছেন তারা। অবৈধ ভাবে ছোট কাঁকড়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার অবহিত করলে দায় নিতে চায় না তারা।কাঁকড়ার পাশ বন্ধের সময় লোক দেখানো কিছু অভিযান দিয়ে থাকে প্রশাসন। তথ্য অনুসন্ধানে যানা যায়, মালিকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে মাসহার নিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা।
সুশীল সমাজের মতে, যে ভাবে সুন্দর বন থেকে ছোট কাঁকড়া ধরা হচ্ছে তাতে আগামী ৪-৫বছর পরে নদীতে আর কাঁকড়া পাওয়া যাবে না। খুব দ্রুত যদি ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে হুমকির মুখে পড়বে সুন্দরবনের প্রাণী জীব বৈচিত্র।
জেলে শাহজান বলেন, এক সময় আমরা ছোট কাঁকড়া ধরতাম না।বড় কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম কিন্তু কাকড়া প্রকল্প আসার পরে ছোট কাঁকড়ার দাম বেশি হওয়ায় ছোট কাঁকড়া ধরছি।
জেলে আকবার বলেন,আগের মত এখন বেশি পরিমান কাঁকড়া পাওয়া যায় না।আর বড় কাঁকড়া তো খুব কম পাওয়া যায়। এখন ছোট কাঁকড়ার দাম বেশি সেজন্য ছোট কাঁকড়া ধরে বিভিন্ন প্রকল্প বিক্রি করি।
 এ প্রকল্পের শ্রমিক হযরত আলী ও ইউসুফ বলেন, ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কাঁকড়া প্রজেক্টে ছাড়লে তাড়াতাড়ি খলোশ দেওয়ায় মালিকের বেশি লাভ হয়।১০০ গ্রামের বেশি
কাঁকড়া ছাড়লে খলোশ দিতে অনেক সময় লাগে যে কারণে ছোট কাঁকড়া ছাড়তে হয়।
কাঁকড়া ব্যাবসায়ী সুবান ও কৃষ্ণ পদ মন্ডল বলেন, আমরা বিশ বছর ধরে কাঁকড়া ব্যাবসা করতেছি।বড় কাঁকড়া দিনে ১ থেকে দেড় হাজার কেজি বড় কাঁকড়া কিনতাম। সফটসেল প্রকল্প আসার পরে ছোট কাঁকড়া ধরার কারণে বড় কাঁকড়া দিনে ১০০কেজিও কিনতে পারি না।এছাড়া জেলেদের কখন ছোট কাঁকড়া ধরতে না দেখিনি।
এ বিষয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্সের  নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল বলেন,যে হারে সুন্দরবন থেকে ছোট কাঁকড়া ধরা হচ্ছে ৪ থেকে ৫ বছর পরে কাঁকড়া বিলুপ্তি হয়ে যাবে।সরকারি নীতি মালা অনুযায়ী ১৩০ গ্রামের নিচে কাঁকড়া ধরা নিষেধ থাকলেও কি ভাবে ছোট কাঁকড়া ধরে? আমাদের দাবি সুন্দরবন কে বাঁচাতে হলে অচিরাই এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি রাখার।
সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মুহাসিন হোসেন বলেন, এ ধরনের বিষয় আমার জানা নেই তবে যদি সুন্দরবন থেকে ধরে আনা ছোট কাঁকড়া হয় তাহলে নোটিশ করে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হবে। তারপর যদি না শোনে তাহলে অভিযান পরিচালনা করে। প্রজেক্ট গুলো বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হবে।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)