রিমান্ডে স্ত্রীকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন এসপি বাবুল
নিউজ ডেস্ক:
রিমান্ডে স্ত্রীকে খুনের কথা স্বীকার করেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। চট্টগ্রামের আদালতে দেয়া এক আবেদনে এমনটিই দাবি করেছে পিবিআই। তবে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হননি তিনি।
পিবিআইয়ের আবেদনে বলা করা হয়, মামলাটি চাঞ্চল্যকর। রিমান্ডে স্ত্রীকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন বাবুল আক্তার। আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তার জবানবন্দি নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হলো।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, প্রথমে নিজের সোর্স মুছাকে না চেনার ভান করলেও পরে স্বীকার করেন বাবুল আক্তার। তার কাছ থেকে খুনের বিষয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
সোমবার সকালে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সারওয়ার জাহানের আদালতে হাজির করে পিবিআই। সেখানে নিয়মানুযায়ী জবানবন্দি দিতে তাকে আরো তিন ঘণ্টা সময় দেন বিচারক। এরপর নেয়া হয় বিচারকের খাসকামরায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানান বাবুল। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
পাঁচ বছর আগে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে খুন হন তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। সেই সময় বাবুলের অঝোর কান্নার দৃশ্য আবেগাক্রান্ত করেছিল দেশের মানুষকেও। কিন্তু পুলিশের তদন্তে ধীরে ধীরে খোলাসা হতে থাকে কান্নার আড়ালে লুকিয়ে থাকা আরো একটি দৃশ্য। মাত্র ২৭ সেকেন্ডের একটি অডিও কলরেকর্ডই মামলার গতিপ্রকৃতি ঘুরে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
পিবিআই সূত্র বলছে, ঘটনার দিন সকাল ৭টা ৩৭ মিনিটে মুছা নামের এক ব্যক্তির মুঠোফোনে কল করেন তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার। তখন সালাম দিয়ে ফোনটি রিসিভ করেন মুছা। ফোন ধরতেই বাবুল বলে উঠলেন- ‘তুই কোপালি ক্যান?’ তিন থেকে চার সেকেন্ড থেমে আবারো বলেন, ‘বল! তুই কোপালি ক্যান? তোরে কোপাতে কইছি?’ এরপরই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ফোনের সংযোগ।
তদন্তের একপর্যায়ে সর্বশেষ ১১ মে দুপুরে পাঁচ বছর আগে করা মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নেয়া হয় পিবিআই চট্টগ্রাম অঞ্চলের মেট্রো কার্যালয়ে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর তাকে হেফাজতে নেয় পিবিআই।
পরে ১২ মে সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী হত্যার সঙ্গে বাবুলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানান সংস্থাটির প্রধান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার।
এরপর দুপুরে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। মামলায় বাবুল আক্তার ছাড়াও আরো সাতজনকে আসামি করা হয়।
এর পরপরই পাঁচ বছর আগে করা বাবুল আক্তারের মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পিবিআই। শুনানি শেষে তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মহানগর হাকিম সরওয়ার জাহানের আদালত।
মিতুর বাবার করা মামলার অন্য আসামিরা হলেন- কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা, এহতেসামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খায়রুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে শাকু ও শাহজাহান মিয়া। এর মধ্যে মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন ও সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে শাকুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরের জিইসি মোড়ের কাছে ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে গুলি ও ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হন তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন বাবুল আক্তার। মামলাটি তদন্ত করছিল নগর ডিবি পুলিশ। পরে গত বছরের জানুয়ারিতে ‘আদালতের নির্দেশে’ মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই।