কালিগঞ্জ বিষ্ণুপুরে নোটিশ ভঙ্গ করে পুকুর ভরাটের অভিযোগ
রঘুনাথ খাঁঃ
ট্রিপল নাইনে ফোন করে পুলিশের জারি
করা নোটিশ ভঙ্গ করে জমি জবরদখলকারিদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে প্রতিকার পাননি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর গ্রামের সমীর মণ্ডল। অথচ জবরদখলকারিদের দেওয়া কাল্পনিক অভিযোগ সাবেক ওসি ও বর্তমান ওসি আমলে না নিলেও তাদের অনুপস্থিতিতে তদন্ত ওসি মিজানুর রহমানের রেকর্ডকৃত
মামলায় পুলিশ সোমবার দুপুরে সমীর মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।
বিষয়টি কালিগঞ্জে টক অব দি টাউনে
পরিণত হয়েছে। বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হক জানান, বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত সন্ন্যাসী চরণ মণ্ডলের ছেলে সমীর মণ্ডল ও বিমাতা ভাই সমরেশ মণ্ডলের বিরোধপূর্ণ জমি কেনেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিয়ালডাঙা গ্রামের তিনটি নাশকতা মামলার আসামী মিজানুর রহমান।
ওই জমি নিয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা
ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সমীর মণ্ডলের দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে আদালতের নির্দেশে উভয়পক্ষকে নোটিশ জারি করে।
এরপরও মিজানুর রহমান নোটিশ ভঙ্গ করে সমীর মণ্ডলের বিমাতা ভাই সমরেশ মণ্ডলের সহায়তায় ৮জন শ্রমিক নিয়ে গত পহেলা মে থেকে বিরোধপূর্ণ জমিতে থাকা ডোবা ভরাট করার কাজ করছিলেন। সমীর মণ্ডল ও তার পরিবারের সদস্যদের আপত্তি না শুনে
পরদিন ও কাজ চালাচ্ছিলেন মিজানুর। বাধ্য হয়ে ট্রিপল নাইনে ফোন করলে কালীগঞ্জ থানার কর্তব্যরত উপপরিদর্শক তরুন অধিকারী
থানায় এসে সমীর মণ্ডলকে অভিযোগ করতে বলেন।
সন্ধ্যায় সমীর মণ্ডল থানায় অভিযোগ দিলে বিষয়টি সহকারি উপপরিদর্শক আজমকে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তৎকালিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন। ২ মে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এক সাংবাদিক ডোবা ভরাটের ছবি তুলতে গেলে তাকে গালিগালাজ করে গরম পানি ছুঁড়ে মারে মিজানুরের স্ত্রী হোসনে আরা খাতুন। খবর পেয়ে তিনিও শংকর সরদার, ছিদাম বিশ্বাস, সঞ্জয় সরদার ঘটনাস্থলে যেয়ে ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করেন।
এ সময় তিনি শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করতে বলায় সমরেশ মণ্ডল , মিজানুর রহমান, হোসনে আরা তাদেরকে তেড়ে মারতে আসেন।
শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় তারা চলে আসেন। অথচ ওই দিন দুপুরে সমরেশ মণ্ডলের নুরুল, আব্দুল ওহাব ও শঙ্কর সরদারের বিরুদ্ধে
অভিযোগের ভিত্তিতে দেলোয়ার হুসেনের বিদায়ী সংবর্ধনা ও মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার যোগদান উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলাকালিন সময়ে সনৎ গাইন, অসিত সেনসহ কয়েকজনের সুপারিশে উপপরিদর্শক গোবিন্দ আকর্ষণ শংকর সরদার ও নুরুল এর বাড়িতে তল-াশি করেন। ঘটনার যদিও ৪ মে সকালে সহকারি উপপরিদর্শক আজম ঘটনাস্থলে যেয়ে সমরেশ মণ্ডল ও মিজানুর রহমানকে সতর্ক করেন। ঘটনার সত্যতা না মেলায় তৎকালিন বিদায়ী
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন ও নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা সমরেশ মণ্ডলের দায়েরকৃত এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন নি। তবে সুযোগ হাত ছাড়া করেননি তদন্ত ওসি মিজানুর রহমান। ১১ মে পূর্বের এজাহার পরিবর্তণ করে সমীর মণ্ডলসহ চারজনের নামে নতুন এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে তদন্তভার উপপরির্দশক গোবিন্দ আকর্ষণের উপর ন্যস্ত করেন। সে অনুযায়ি আজ সোমবার দুপুরে সমীর মণ্ডলকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নীলকণ্ঠপুর গ্রামের হামিদুল গাজী, ফতেপুর গ্রামের আব্দুস সালাম ও অনাথ সরদার জানান, ২ মে তারাসহ সাতজন মিজানুরের ডোবা ভরাট করার সময় ছবি তুলতে গেলে এক সাংবাদিককে হোসনে আরা গরম পানি ছুঁড়ে মারেন। খবর পেয়ে ওই সাংবাদিকের বন্ধু শংকর সরদার, ছিদাম , সঞ্জয়, আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হকসহ কয়েকজন ছুঁটে আসেন।
উপপরিদর্শক গোবিন্দ আকর্ষণ ও সহকারি উপপরিদর্শক আজম আসার পর তারা কোন
হামলার কথা বলেননি। অথচ হামলার ঘটনায় মামলা ও ঘটনাস্থলে না আসা সমীর মণ্ডল গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে অবাক হয়েছেন।
কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপপরিদর্শক গোবিন্দ আকর্ষণ। সে অনুযায়ি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে নতুন ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা নতুন আইডি না পাওয়ায় তার পরিবর্তে তিনিই সকল মামলা রেকর্ড করছেন।কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, তার হাত দিয়ে ওই মামলা রেকর্ড হয়েছে এমনটি তার জানা নেই। তবে বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চলে যাওয়ার দিন ওই মামলা রেকর্ড করেছেন কিনা তা খোঁজ নিতে হবে।
এ ছাড়া গোবিন্দ আকর্ষণ ফিরে এলেই মামলা সম্পর্কে জানা যাবে। তবে।মামলার সত্যতা না থাকলে তিনি বিষয়টি দেখবেন।