কেমন বিচারঃ সাতক্ষীরায় কোয়ারান্টাইনরা ভাত পেল না ঈদের রাতে
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ঈদের দিনের মতো একটি মহিমান্বিত দিনেও ভাত না খেয়ে রাত পার করতে হলো ভারত ফেরত কোয়ারেন্টাইনকারীদের। কোয়ারেন্টাইনে রেখে জিম্মি করে হোটেল মালিকদের ইচ্ছে মাফিক খাবার খেতেও বাধ্য করার অভিযোগও করেছে কোয়ারেন্টাইনকারীরা। কতৃপক্ষের খামখেয়ালীপনায় চরম দুরঅবস্থার মধ্যে কোয়ারেন্টাইনকারীরা।
ভারতে চিকিৎসা শেষে ৫ মে তারিখে যশোরের বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা সুদীপ সরকার জানান, তাদের আপত্তি স্বত্বেয় তাদেরকে যশোর বা অন্য কোথাও না রেখে সাতক্ষীরায় এনে রাখা হয়েছে। সেই থেকে এ পর্যন্ত তাদের কেউ দেখতে আসছে না। সবাই রোগী হলেও তাদের কী অবস্থা সে খোঁজ পর্যন্ত কেউ নিচ্ছে না।
শফিকুল ইসলাম জানান, প্রথমদিন থেকে তাদের এনে রাখা হয়েছে উত্তরা হোটেলে। সেখানে ৫১জনকে রাখা হয়েছে। যেহেতু তারা সরকারের সিদ্ধান্তে সম্মতি স্বাক্ষর করে দেশে প্রবেশ করেছে সে কারণে তা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের প্রতি অব্যবস্থাপনা ও অমানবিকতা তাদের অবাক করেছে। তারা না চাইলে ঈদের দিন সকাল ও দুপুরে তাদের খাবার দিয়েছিল সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। কিন্তু রাতে খাবার দেয়ার কথা থাকলেও সম্ভব হচ্ছে না বলে সেটি জানিয়ে দেয়।
কিন্তু বিষয়টি হোটেল কতৃপক্ষ তাদেরকে জানাননি। এমনকি বিকল্প কোন ব্যবস্থাও করেন নি। রাতে খাবার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও তাদের খাবার কোন ব্যবস্থা না হওয়ার পর তারা জানতে পারেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে রাতে খাবার না দেওয়ার বিষয়টি। হোটেল কতৃপক্ষও তাদের খাবার দিতে অস্বীকার করে। ফলে ঈদের রাতে হোটেলে কোয়ারেন্টাইন করা ৫১জনকে ভয়ানক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
ক্যান্সারে আক্রান্ত চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির শামসুন্নাহার জানান, হোটেলের মধ্যে বেশীরভাগজনই আছে প্রচন্ড অর্থ কষ্টে কিন্তু কেউ তাদের অবস্থা বুঝতে চাচ্ছে না। হোটেল কতৃপক্ষ জিম্মি করে তাদের হোটেল থেকে বেশী দামী খাবার কিনতে বাধ্য করছে। তাদেরকে উত্তরা হোটেলের মালিকানাধীন হোটেল সোনারগাও এর উচ্চ মূল্যের খাবার ছাড়া অন্য কোন হোটেলের খাবার আনতে দেওয়া হয় না। এমনকি একটি এনজিও এর পক্ষ থেকে তাদেরকে খাবার দেওয়ার উদ্যোগ নিলে হোটেল কতৃপক্ষ বাঁধা দেয়।
ফলে ঐ হোটেলের উচ্চ মূল্যেও খাবারই তাদের একমাত্র ভরসা। তাছাড়া তারা জারের পানি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও হোটেল কতৃপক্ষ উচ্চমূল্যের বোতলজাত পানি সরবরাহ করছে। ফলে তাদের প্রতিদিনের ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। যা অনেকের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তারা আরো জানান, প্রশাসন খোজ নিচ্ছে না তারা কীভাবে আছে, আদৌ বেঁচে আছে কি না। রোগীগুলোর অবস্থার খোঁজ নিতে কোন ডাক্তার একবারের জন্যও আসেনি।
এ সময় একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের বিষ এনে দেন, আমরা বিষ খেয়ে মরি’।
এদিকে উত্তরা হোটেলের কোয়ারেন্টাইনের এ খবর জানতে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি ও কয়েকজন সাংবাদিক রাতে এসে তাদের খাবারের পানিও পাউরুটির ব্যবস্থা করে। লায়লা পারভিন সেঁজুতি জানান, কোয়ারেন্টাইনকারীদের পানি খাবার না থাকা, হোটেল কতৃপক্ষ কতৃক তাদের জিম্মি করা এবং রাতে ভাত না পাওয়া অত্যন্ত দুঃখ জনক একটি ব্যাপার।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঈদের দিনে প্রশাসন তাদের সকাল দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা করেছে। রাতে হবে না জানিয়েও দেয়া হয়। এরপর রাতে ভাতের ব্যবস্থা না থাকা এবং হোটেল কতৃপক্ষ’র অব্যবস্থাপনার বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।